১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরোক্ষ ধূমপানের ঝুঁকিতে শিশুরা, আইন থাকলেও নেই সঠিক প্রয়োগ

-

পরোক্ষ ধূমপানের বিষক্রিয়া থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরা। বিশেষ করে রাজধানীর শিশুরা আছে উচ্চ ঝুঁকিতে। প্রকাশ্যে ধূমপান রোধে নতুন আইন প্রণয়নসহ, আইন সংশোধনের দাবি তুলছেন অনেকেই। যদিও ধূমপান নিয়ন্ত্রণে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩-এর এখনো নেই কোনো যথাযথ প্রয়োগ। আর এর সরাসরি শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার : ঢাকা, বাংলাদেশে একটি জরিপ’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধটি ছাপা হয় ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত ‘নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ’ সাময়িকীতে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ এবং লিডস সিটি কাউন্সিলের জনস্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে ওই গবেষণা করে।

গবেষণায় বলা হয়, জরিপে অংশ নেয়া ৮০ শতাংশ শিশু জানিয়েছে তাদের চারপাশে জনপরিসরে (পাবলিক স্পেস) তারা ধূমপান করতে দেখে। এভাবেই শিশুদের একটি বড় অংশ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে।

ওই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক। এ বিষয়ে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বড়দের করা ধূমপান শিশুর শরীরে গিয়ে ক্ষতি করে। এই পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব নিয়েই গবেষণা করেছিলাম আমরা ৪ বছর আগে। সেই সময় শিশুদের এই ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বোঝানোর ফলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে, তবে যতটা আশা করেছিলাম ততটা ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।’

রুমানা হক আরো বলেন, ‘এ বছর জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ৩৪টি বিদ্যালয়ের শিশুদের নিয়ে আবারো জরিপের দ্বিতীয় কার্যক্রম পরিচালনার ইচ্ছে থাকলেও চলমান মহামারির কারণে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় সেটি এখন পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয় খুললে আবারো এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে। ’
ওই গবেষণায় জানানো হয়, দেশে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ শিশুদেরকে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে পারছে না। যা শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশে অন্তরায় হিসেবে দেখা দিতে পারে।

দেশে বিদ্যমান পদক্ষেপের কথা বললেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কথাই চলে আসে। বয়সের কারণে শিশুরা ইচ্ছে করলেই পাবলিক প্লেসে বড়দের ধূমপান করাকে বাধা দিতে পারে না। বাস্তবতা হচ্ছে, আইনটির যথাযথ প্রয়োগ নেই। আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে তিনশত টাকা জরিমানা করার বিধান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগই পারে শিশুদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় ফোরামের কো চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘প্রকাশ্যে ধূমপান রোধ করতে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। তবে একই সাথে মানুষের সচেতনতাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখন সোশ্যাল মিডিয়াসহ কমিউনিটি রেডিওগুলোতেও যদি অ্যাডভোকেসি করা যায়, তাহলে এটি রোধ করা সম্ভব।’

তাই নতুন আইন প্রণয়নের আগে অবশ্যই চলমান আইনের সঠিক বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। তবে আশার কথা, সরকার ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণের পদক্ষেপ নিয়েছেন।

তবে, সরকারি ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও যদি এগিয়ে আসে তাহলে খুব দ্রুতই প্রকাশ্যে ধূমপান রোধ করা সম্ভব হবে। শিশুদের জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে সুস্থ ও ধূমপানমুক্ত পরিবেশ।


আরো সংবাদ



premium cement