২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সংঘাত-সংঘর্ষ : বাড়তি ভাড়ায়ও বাসে উঠতে মরিয়া

সংঘাত-সংঘর্ষ : বাড়তি ভাড়ায়ও বাসে উঠতে মরিয়া - ছবি : সংগৃহীত

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৫০ ভাগ জনবল অফিসে আর ৫০ ভাগ বাসায় বসে কাজ করার আদেশ সরকারি অফিস ছাড়া আর কোথাও কার্যকর হয়নি। এদিকে বুধবার থেকে গণপরিবহনে মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী নেয়া শুরু হয়েছে। ফলে যাত্রীরা পড়েছেন মহা সঙ্কটে।

কাজে যেতে হবে বলে করোনা নিয়ে ভাবার সময় নেই। যেভাবেই হোক বাস পেতে হবে। এ নিয়ে বুধবার সকালে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গার বাসের স্টাফদের সাথে যাত্রীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

সকালে আজিমপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, ভিক্টোরিয়া পার্ক, যাত্রাবাড়ি ও মাওয়াসহ আরো কয়েকটি এলাকায় যাত্রীরা বাসে উঠতে না পেরে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে হাতাহাতি ও মারামারি হয়েছে। পরিবহন মালিকেরা বলছেন, বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা তাদের না নেয়ায় বাস আটকে দিয়েছে অনেক জায়গায়।

যাত্রীরা বলছেন, অফিসে যেতে হবে। সিট না থাকলেও নিতে হবে। পুলিশ পরে ওইসব এলাকায় সব যাত্রীকে বাসে উঠতে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দুপুরে সরেজমিন কারওয়ান বাজারে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা যায়।

যাত্রী রুবেল মিয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না।

তিনি বলেন, এখন দুই সিটে একজন যাত্রী নেয়ায় বাসের সিট অর্ধেক হয়ে গেছে। ফলে বাস যেখান থেকে ছাড়ে সেখান থেকেই যাত্রী পূর্ণ হয়ে যায়। এখন সব বাসই সিটিং সার্ভিস হয়ে গেছে। আর সিট যদি খালিও থাকে তাহলে অল্প দূরত্বের যাত্রী তার নিতে চায় না। ভাড়াও বেড়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। তারও অতিরিক্ত ভারা আদায় করছে।

মোহাম্মদপুর-মতিঝিল স্টাফ কোয়ার্টার রূটে এখন জন প্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৭৫ টাকা। আগে ছিলো ৫০ টাকা। আর করোনার আগে ছিলো ৪০ টাকা।

ওই রূটের একটি বাসের হেলপার এরশাদ মিয়া বলেন, সকাল থেকে যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। আবার সিট পূর্ণ হওয়ার পর যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠতে চাচ্ছেন। আমরা গেট বন্ধ করে রাখলেও ট্রাফিক সিগন্যালে জোর করে উঠতে চায়। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে আমাদের ঝামেলা হচ্ছে।

কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে দুপুরে বিভিন্ন রূটের যেসব বাস আসা যাওয়া করতো দেখা গেছে তার অধিকাংশেরই গেট ছিলো বন্ধ। ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকলে তারা থামেনি। কারওয়ান বাজারে দুই নারী দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারেননি।

তারা জানান, দুই-একটি বাসে সিট থাকলেও নারীদের সিট নেই বলে তাদের উঠতে দেয়া হয়নি। কিন্তু বাস্তবে বাসে উঠে দেখা যায় বাসগুলো নারীদের জন্য অর্ধেক আসন খালি রাখার নিয়ম মানছে না। তারা সিটিং বলে আগেই পুরুষ যাত্রী দিয়ে আসন পূর্ণ করে আসছে।

রুবেল আহমেদ নামে একজন যাত্রী জানান, সিট খালি থাকলেও স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার কথা বললে তারা যাত্রী তুলছেন না। আমি ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার আসলেও আমরা কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে ১৫ টাকা। বাস্তবে ভাড়া পাঁচ টাকা।

বাসের কর্মচারীরা বলেন, তাদের ভাড়া হিসেব হয় ফার্মগেট থেকে বাংলা মটর। আগে কারওয়ান বাজার নামলেও একই ভাড়া।

আরেকজন যাত্রী রাসেল আহমেদ জানান, এখন বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা। এক কিলোমিটার গেলেও ১০ টাকা, আধা কিলোমিটারও ১০ টাকা। একজন কন্ডাকটর এটা স্বীকার করে বলেন, বাসে উঠলেই ১০ টাকা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে আগেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। আর এখন তার ওপরে আরো ৬০ ভাগ বড়তি ভাড়া তাদের জন্য চাপ হয়ে গেছে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকার মধ্যে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা। এখন করোনার কারণে যাত্রী সিটের অর্ধেক নেয়ার কারণে ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ালে প্রতি কিলোমিটার হয় ২ টাকা ৪৬ পয়সা। উত্তর বাড্ডা থেকে গোলাপশাহ মাজারের দূরত্ব আট কিলোমিটারের চেয়ে কিছু কম। ৬০ ভাগ বাড়িয়ে ভাড়া হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ২০ টাকা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। কারণ তারা আগেই ভাড়া বাড়িয়েছে। এখন সেই বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার বাড়িয়ে নিচ্ছে। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিরি সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, নিয়মের বাইরে ভাড়া না নেয়ার জন্য আমাদের কড়া নির্দেশনা আছে।

তবে একজন পরিবহন মালিক বলেন, ভাড়া একটু বেশি না নিলে আমরা গাড়ি চালাতে পারবো না। এই নতুন নিয়মে আমরা তিন ভাগের দুইভাগ যাত্রী হারাচ্ছি। কারণ সরকার তো সিটের হিসাব করে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়েছে। কিন্তু সিটের বাইরে আরো অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন। সেটাও তো আমাদের লস হচ্ছে। সেই হিসেব তো করা হচ্ছে না।

খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অফিস কোথাও ৫০ ভাগ জনবল অফিসে এবং ৫০ ভাগ জনবল বাসায় রেখে কাজ করার নিয়ম কার্যকর হয়নি। শুধু আমরা যাত্রী পরিবহন অর্ধেকে নামিয়ে আনায় নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। যাত্রীদের তোপের মুখে পড়ছেন আমাদের পরিবহন কর্মচারীরা। কারণ যাত্রী কমে নাই, কিন্তু সিট অর্ধেক হয়ে গেছে। যাত্রীরা কথা শুনতে চাচ্ছেন না। তারা যেকোনোভাবে বাসে উঠে অফিসে বা কাজে যেতে চাচ্ছেন। কয়েকটি জায়গায় মারামরিও হয়েছে। পুলিশও সামাল দিতে পারছে না।

তার মতে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে প্রতিনিদিনই নানা অঘটন ঘটেবে। তাই নিয়ম সবখানে কার্যকর করতে হবে। তাহলে যাত্রীর চাপ কমবে।

সরেজমিন দেখা গেছে প্রায় সব বাসেই যাত্রী অর্ধেক ছিল। তবে বিআরটিসির বাসে যাত্রী দেখা গেছে বেশি। আর মাস্ক ব্যবহারেও যাত্রীরা সচেতন ছিলেন। কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার ও হেলপারদের মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম মানায় তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।

গত বছর করোনায় দুই মাস গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। সাধারণ ছুটি শেষে গত বছরের জুলাই মাস থেকে অর্ধেক সিট খালি রেখে যাত্রী নেয়ার শর্তে গণপরিবহণ চালু হয়। তখনো ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়। তবে এই ব্যবস্থা বেশি দিন চলেনি। পরিবহন মালিকদের চাপের মুখে কিছু দিন পরোই স্বাভাবিকভাবে যাত্রী নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। তখন মালিকেরা বাড়তি ৬০ ভাগ ভাড়া প্রত্যাহারের কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে পুরো ৬০ ভাগ প্রত্যাহার হয়নি বলে অভিযোগ আছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement