খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাটির সজীবতা-গুণাগুণ বজায় রাখতে হবে : কৃষিমন্ত্রী
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:২৪
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য মাটির গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের জীবনজীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করে টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার ওপর। দেশে বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে যা ক্রমশ বাড়ছে, প্রতিবছর ২২ লাখ নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে; অন্যদিকে শিল্পায়ন, নগরায়ন, বাড়ি-ঘর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরিসহ নানা কারণে চাষের জমি কমছে। এই দুই চ্যালেঞ্জের সাথে যুক্ত হয়েছে-জলবায়ু পরিবর্তন। এসব বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা ও শস্যের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। সেজন্য মাটিকে সজীব রাখতে হবে, মাটির গুণাগুণ বজায় রাখতে হবে।
শনিবার অনলাইনে ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার, শোকেসিং এবং সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। 'মাটিকে সজীব রাখুন, মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন প্রতিপাদ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের এই সেমিনারটি রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজন করে। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, সয়েল সাইন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ এতে সহযোগিতা করে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, শুধু কৃষি নয়, মাছ, প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রির খাদ্যও মাটি থেকে আসে। সেজন্যও মাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া, দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে যেয়ে শস্যের নিবিড়তা বাড়ছে কিন্তু মাটির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির উৎপাদনশীলতা, মাটিতে গাছের অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের মান বজায় রাখতে হবে।
ড. রাজ্জাক আরো বলেন, দেশে মাটির গুণাগুণ ধরে রাখতে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমি, পাহাড়ি এলাকার সমস্যাক্লিষ্ট জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। যার মাধ্যমে টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন-এফএও'র হিসাব মতে, পৃথিবীর জীববৈচিত্রের এক চতুর্থাংশের আবাসস্থল হচ্ছে মাটি। সুস্থ মাটির একটি অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে মাটির জীববৈচিত্র। এ জীববৈচিত্রকে রক্ষা করতে পারলে মাটির স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, আর মাটি সুস্থ থাকলেই কেবল নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। কিন্তু বর্তমানে মাটির এ জীববৈচিত্র ক্ষতির সম্মুখীন যা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম একটি কারণ টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা না থাকা।
পরে কৃষিমন্ত্রী 'সয়েল মিউজিয়াম সফটওয়্যার' উদ্বোধন ও ' ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ' বই এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘মাটির উর্বরতা রক্ষা ও প্রয়োজন উপযোগী ব্যবহার নিশ্চিত করতে গবেষণায় প্রাধান্য দিতে হবে। এজন্য বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তা দিয়ে, গবেষণালব্ধ জ্ঞান দিয়ে আমাদের নতুন কিছু সৃষ্টি করতে হবে। শুধু কৃত্রিম সার ব্যবহার করে বছরে একটার পর একটা ফসল উৎপাদনের দিকে ধাবিত হলে হবে না।’
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদের অসাধারণ একটি ভান্ডার উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘এ ভান্ডার রক্ষা করতে হলে আমাদের মৌলিক জায়গায় ফিরে যেতে হবে। সে জায়গা হলো আমাদের জলবায়ু, পানি ও মাটি। কোন মাটিতে কোন ফসল উৎপাদন করা যায়, কোন মাটিতে কোন সার ব্যবহার করলে মাটির জৈবিক অবস্থান ধ্বংস হয়ে যাবে বা কোন মাটিকে কিভাবে ব্যবহার করলে তার স্বাভাবিকতা নষ্ট হবে না কিন্তু ব্যবহার উপযোগী থাকবে-এ বিষয়গুলোতে ব্যাপকভাবে গবেষণা করতে হবে। সম্মিলিতভাবে আমাদের মাটি ও পানি রক্ষা করতে হবে। মাটির ভেতরে থাকা অনুজীবকে রক্ষা করতে হবে। এভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম, এফএও'র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল বক্তব্য রাখেন। পরে সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০' বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এ বছর সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কৃষকপর্যায়ে আমচাষি মো: মতিউর রহমান, শিক্ষাবিদ হিসাবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিভাগের অধ্যাপক মো: রফিকুল ইসলাম এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ড. জেড. করিম।