আতঙ্ক ছড়াবে সর্দি-কাশি
- হামিম উল কবির
- ২৯ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪১
আগামী শীতে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ঢেউ আসবে কি না তার বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর নেই কিন্তু বাংলাদেশে তখন আরেক ধরনের করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সর্দি-কাশি জ্বরে ভোগাতে পারে মানুষকে। মানুষের মধ্যে তখন আতঙ্কও ছড়াতে পারে অনেক। শীত আসার আগেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে করোনার সাথে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বর্তমানে কোভিড-১৯ রোগটি একটি করোনাভাইরাসের কারণে হচ্ছে। এই ভাইরাসকে সার্স-কোভ-টু করোনাভাইরাসও বলা হয়ে থাকে। এটা ছাড়াও আরো চার রকমের করোনাভাইরাস আছে যেগুলোর সংক্রমণে মানুষ সাধারণ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হন। মানুষ জীবনে এই ভাইরাসে অনেক বার আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সাধারণত বছরে দুইবার (ছয় থেকে ১২ মাস অন্তর অন্তর) মানুষ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাসে মানুষ দুইবার আক্রান্ত হয়েছে এমন নজির খুবই কম।
আগামী শীতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার যুক্তিসঙ্গত বৈজ্ঞানিক উত্তর নেই বলে জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: এম মোজাহেরুল হক। তিনি আরো বলেন, শীতে ঠাণ্ডায় করোনাভাইরাস নতুন করে অ্যাক্টিভ হতে পারে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই কথাটার পেছনে জোরালো কোনো যুক্তি নেই। বরং বলা যায় করোনার প্রথম ঢেউই নিয়ন্ত্রণে আসেনি। শীতে যদি কিছু বাড়ে তবে প্রথম ঢেউ থেকে নতুন করে কিছু যোগ হতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার সামনের দিনগুলোতে আমাদের করোনা নিয়েই বসবাস করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: মো: আবুল ফয়েজ এ ব্যাপারে বলেন, ভাইরাস যতক্ষণ চলে না যায় ততক্ষণ আমাদের করোনার ঝুঁকিটা থেকেই যাবে। এখন তো একটা ফ্লুর সিজন চলছে। সারা বছরই এ সময়ে এক ধরনের ফ্লুর কারণে মানুষের সাধারণ সর্দি-জ্বর হয়ে থাকে। তিনি বলেন, করোনার জন্য টিকা (ভ্যাকসিন) আসলেও করোনা দ্রুত চলে যাবে না। টিকা আসলেও আমাদের দেশে তা বাড়তে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত না যথাযথ উপায়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর ব্যবস্থাপনা করা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবেই। কিভাবে করোনা রোগীর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা যাবে, এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক আবুল ফয়েজ বলেন, একজন করোনা সংক্রমিত হলে তার সংস্পর্শে যারা ছিলেন তাদের ট্রেসিং করে কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। করোনা সংক্রমিত কি না পরীক্ষা করে তাকে যথাযথভাবে আইসোলেশন করতে হবে। তিনি বলেন, ট্রেসিং, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন যখন গাইডলাইন অনুসারে যথাযথভাবে করা হবে তখন করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে সারা দেশেই এবং সরকারিভাবে পরীক্ষা বাড়িয়ে দিতে হবে।
করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে জানান, করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ চলছে এখন। ঢাকার বিশাল সংখ্যক মানুষ করোনা সংক্রমিত। শীত আসলে অন্য ধরনের কিছু করোনাভাইরাসের কারণে সর্দি-জ্বর হয়ে থাকে। এই বিষয়টাই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি করে দিতে পারে। তখন সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে অনেকেই মনে করতে পারেন তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেছেন। ফলে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে কারণে মানুষকে আগে থেকেই সচেতন করতে হবে কোনটা কোভিড-১৯ থেকে সংক্রমণ আর কোনটা সাধারণ ফ্লুর কারণে সর্দি-কাশি ও জ্বর তা মানুষকে শেখাতে হবে। এখনই সময় এ ব্যাপারে প্রচারণা বাড়িয়ে দেয়া। সবচেয়ে বড় কথা মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, তারা যেন কিছুতেই মাস্ক ব্যবহার না করে বাইরে বের না হন এবং কেন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে তা ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন, দেশের বাইরে থেকে যারা আসবেন তাদের ব্যাপারে বিমানবন্দরেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে শিথিলতায় আবারো বিপদ বাড়বে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা