১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চাঁদের বুকে প্রথম নারী পা রাখবেন ২০২৪ সালের মধ্যে

- ছবি : সংগৃহীত

আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসা চাঁদে আবার মানুষ নিয়ে যাবার জন্য তাদের পরিকল্পনার বিশদ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। দু হাজার ৮০০ কোটি ডলারের (২৮ বিলিয়ন ডলার) এই প্রকল্পে ২০২৪ সালের মধ্যে আবার চাঁদে ফেরত যাবার পরিকল্পনা দেয়া হয়েছে। এই মিশনের অংশ হিসাবে এই প্রথমবারের মত একজন নারী চাঁদের বুকে পা রাখবেন।

নাসার এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে আর্টেমিস। ১৯৭২ সালে চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম অবতরণের পর এবার এই প্রকল্পে নাসা একজন পুরুষ এবং একজন নারীকে চাঁদে পাঠাবে।

তবে নাসা বলছে তারা যে পরিকল্পিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে তা ঠিক রাখতে হলে কংগ্রেসকে ৩২০ কোটি ডলারের তহবিল তাদের হাতে সময়মত তুলে দিতে হবে, কারণ নির্ধারিত সময়ে চাঁদের বুকে নামতে হলে তাদের সময়মত একটা অবতরণ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

নভোচারীরা অ্যাপোলোর মত একটি ক্যাপসুলে ভ্রমণ করবেন, যেটির নাম দেয়া হয়েছে ওরিয়ন। এসএলএস নামে একটি রকেট এটি উৎক্ষেপণ করবে।

সোমবার নাসার একজন প্রশাসক জিম ব্রাইডেনস্টাইন বলেন, ''চাঁদের বুকে আর্টেমিস অবতরণের জন্য আগামী চার বছরে নাসার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ বিলিয়ন ডলার। এই আর্টেমিস প্রকল্পের বাজেটের মধ্যে যেসব খরচ ধরা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে এসএলএস উৎক্ষেপণের খরচ, ওরিয়ন বাবদ সব ব্যয়, এছাড়াও চাঁদে মানুষের নামার খরচ এবং নভোচারীদের মহাকাশ স্যুটের জন্য যাবতীয় খরচখরচা।''

তবে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে ''আমেরিকান কংগ্রেস এবং সিনেটের কাছে এই মুহূর্তে আমরা যে ৩২০ কোটি ডলার চেয়ে আবেদন জানিয়েছি, অবতরণ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য, সেটা ২০২১ সালে আমাদের হাতে আসা দরকার। এই অর্থ সময়মত না পেলে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য, অর্থাৎ ২০২৪ সালের মধ্যে চাঁদে দ্বিতীয়বারের মত অবতরণের লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারবো না।''

আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেনটিটিভ চাঁদে অবতরণের যান তৈরির জন্য ৬০ কোটি ডলার অনুমোদন করে ইতোমধ্যেই একটি বিল পাশ করেছে। কিন্তু নভোযানটি পুরোপুরি তৈরি করতে নাসার আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন।

ব্রাইডেনস্টাইন ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সিএনএন টিভিতে বলেন যে ২০২৪ সালে চাঁদের বুকে প্রথম পদচারণা করবেন যে নারী তিনি হবেন ''এমন একজন যার মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে - যিনি ইতোমধ্যেই কোন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গেছেন''।

তিনি আরো বলেছেন, নভোচারী গোষ্ঠীর মধ্যে থেকেই কাউকে এই মিশনের জন্য বেছে নেয়া হবে।

ওই সাক্ষাৎকারের সময় ১২জন নারী নভোচারীর নাম সামনে এসেছিল। এরপর আরো পাঁচজন নারী নভোচারী নাসার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এবছরের গোড়ায় প্রশিক্ষণ শেষ করে তারা নাসায় যোগ দিয়েছেন। তবে যোগ্যতার জন্য যেসব মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী চার বছরের মধ্যে সেগুলো অর্জন করে মিশনের জন্য তারা তৈরি হতে পারবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।

আর্টেমিসের জন্য নভোচারী নির্বাচনের সময়সূচি জানতে চাওয়া হলে নাসার প্রধান বলেছেন প্রথম মিশনটি পাঠানোর অন্তত দুবছর আগে তারা নভোচারীদের দলটি নির্বাচন করতে চান।

তবে তিনি বলেন, "আর্টেমিসে নভোচারী হিসাবে কারা যাবেন সেটা নির্বাচনের প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ আরো একটা কারণে যে এটা একটা অনুপ্রেরণা হিসাবেও কাজ করবে বলে আমি মনে করি।"

হোয়াইট হাউসও চাঁদে আবার নভোচারী পাঠাতে আগ্রহী, কারণ আমেরিকা চায় মহাকাশ চারণায় তাদের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।

নভোচারী হবার জন্য স্নাতক পর্যায়ে এবছর যারা সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছেন তাদের মধ্যে ছয়জন নারী আছেন। এদের ৫জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নাসায় এবং একজন ক্যানাডিয়ান স্পেস এজেন্সিতে।

নাসা পরিকল্পনা করছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যে বরফ-পানি জমে রয়েছে, সেই মূল্যবান নমুনা সংগ্রহ করে আনা। এটা থেকে চাঁদেই স্বল্প খরচে রকেটের জন্য জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। এটা করা গেলে পৃথিবী থেকে রকেটের জন্য জ্বালানি বহন করে নিয়ে যেতে হবে না এবং এটা চান্দ্র অর্থনীতির একটা ভিত তৈরি করবে।

তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স চীনের মহাকাশ উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব এশিয়ান পরাশক্তি চীন প্রথম চাঁদের বেশ ভেতরের দিকে একটি রোবট চালিত রোভার যান বেশ স্বচ্ছন্দভাবে অবতরণ করিয়েছিল। চীন এখন পৃথিবীর গবেষণাগারে চাঁদের মাটির নমুনা পৌঁছে দেবার জন্য তাদের প্রথম মিশন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চীন এখন চীনা নভোচারীদের জন্য নতুন প্রজন্মের মহাকাশযান তৈরি করছে, যা চাঁদে পাঠানোর উপযোগী। যদিও ২০২৪ সালেয়ের মধ্যেই চীন এই মহাকাশযান বানিয়ে ফেলতে পারবে এমন ইঙ্গিত নেই, কিন্তু এই দশকেই সে লক্ষ্যে চীন অনেকটাই এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নাসার নতুন নথিতে আমেরিকান পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের রূপরেখা দেয়া হয়েছে, যাতে রয়েছে চাঁদে নভোচারীবিহীন পরীক্ষামূলক যান পাঠানো। এই প্রথম পর্যায় হলো আর্টেমিস ওয়ান -যা পাঠানো হবে ২০২১ সালের শরতকালে।

নাসার নভোচারীসহ ফ্লাইটের প্রধান ক্যাথি লুয়েডার্স বলেছেন বিভিন্ন জটিলতা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আর্টেমিস সময় নেবে প্রায় এক মাস।

তিনি বলছেন, এই পরীক্ষা আর্টেমিস-টুর জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্ণিত করে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করবে। আর্টেমিস-টু নভোচারীদের নিয়ে একইধরনের মিশন চালাবে চাঁদকে পরিক্রমা করে।

উৎক্ষেপক রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর ওরিয়ন মহাকাশযানটি পরিচালনা করবেন নভোচারীরা নিজে। তাই সেই যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়তি একটি পরীক্ষা মিশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষা মিশন ওরিয়নের যান্ত্রিক দক্ষতা ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মান এবং কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করবে।

এরপর যাবে আর্টেমিস-থ্রি নভোচারীদের নিয়ে চাঁদে অবতরণের লক্ষ্যে। অ্যাপোলো ১৭ চাঁদে অবতরণ করার ৪৮ বছর আগে এটাই হবে আমেরিকার চন্দ্র মিশন যেখানে নভোচারীরা আবার চাঁদের বুকে পা রাখবেন।

নাসা বেশ কিছু সংস্থাকে অবতরণ যানের নকশা তৈরির কাজ দিয়েছে।

নাসা তার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এই দশকের শেষ দিকে নভোচারীদের জন্য আর্টেমিস বেস ক্যাম্প নামে একটি ক্যাম্প তৈরি করবে যেখানে চাঁদে দীর্ঘমেয়াদী অভিযান চালানোর জন্য অবকাঠামো থাকবে। বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement