২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

করোনার টিকা তৈরিতে কেন এই প্রতিযোগিতা

করোনার টিকা তৈরিতে কেন এই প্রতিযোগিতা - ছবি : সংগৃহীত

যখন রাশিয়া ১১ই অগাস্ট ঘোষণা করলো যে তারা করোনাভাইরাসের প্রথম টিকাটি তৈরি করে ফেলেছে এবং তার নাম দিয়েছে ‘স্পুটনিক ফাইভ’, তখন এই খবরটি প্রায় সকলেরই নজর কেড়েছিল। প্রায় ছয় দশক আগে ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক নামের একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার কথা ঘোষণা করেছিল।

আর এখন রাশিয়া দাবি করছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের গবেষণার এতোটাই অগ্রগতি হয়েছে যে কোভিড-১৯ রোগের টিকা তৈরির প্রতিযোগিতাতেও তারা জিতে গেছে।

কিন্তু সমালোচকরা বলছেন এনিয়ে মস্কো বাড়াবাড়ি করছে। রাশিয়ার এই ঘোষণা নিয়ে সবাই যে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছে তাও নয়।

বরং প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই দাবি করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে সারা বিশ্বে যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে সে কথাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

শর্ট কাট রাস্তা
এই প্রতিযোগিতায় শর্ট কাট রাস্তা ধরার অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগ উঠেছে গুপ্তচরবৃত্তি, অনৈতিকতা, ঝুঁকি গ্রহণ এবং ঈর্ষা-পরায়ণতার।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘টিকার জাতীয়তাবাদ’ বন্ধ করার আহবান জানিয়ে বলেছে, ‘করোনাভাইরাস থেকে প্রত্যেকে নিরাপদ না হলে কেউ নিরাপদ নয়।’

এই ভাইরাসের সফল কোনো টিকা তৈরি হলে বর্তমানে সেটাই হবে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও দামী উপহার। এটা যে শুধু মানুষের জীবন বাঁচাবে তা নয়, মহামারির কারণে সারা বিশ্বে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এটি তারও অবসান ঘটাবে।

‘কোনো একটি চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য এরকম তীব্র রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এর আগে আমি কখনো দেখিনি,’ বলেন প্রফেসর লরেন্স গোস্টিন, যুক্তরাষ্ট্রে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য আইন বিষয়ক শিক্ষক।

‘কোভিড-১৯ নিয়ে এতোটা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার পেছনে কারণ হলো বিশ্বের সুপার-পাওয়ার বা ক্ষমতাশালী দেশগুলো এটিকে দেখছে তাদের বৈজ্ঞানিক শৌর্য বীর্যের প্রতীক হিসেবে। এর মাধ্যমে যেন তাদের রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতার বৈধতা পাওয়া যাবে।’

করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে সারা বিশ্বে দুশোটির মতো গবেষণা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে তার মধ্যে প্রায় অর্ধ-ডজন গবেষণা পৌঁছে গেছে পরীক্ষার একেবারে শেষ পর্যায়ে।

এসব গবেষণার তিনটি চলছে চীনে, একটি যুক্তরাজ্যে, একটি যুক্তরাষ্ট্রে এবং আরেকটি জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টায়।

সাধারণত একটি টিকা তৈরি করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু বর্তমান মহামারিতে সব দেশই এই টিকা উদ্ভাবনের ব্যাপারে তাদের গবেষণার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।

এখন রাশিয়ার পক্ষ থেকে স্পুটনিক নামের একটি টিকা তৈরির ঘোষণা দেওয়ার পর অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে টিকা তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কোন শর্ট কাট অবলম্বন করা হয়েছে কীনা।

জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পক্ষ থকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পশ্চিমা দেশগুলোতে টিকা তৈরির ব্যাপারে যেসব গবেষণা চলছে সেগুলো হ্যাক করে সেখান থেকে তথ্য চুরি করেছে। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন।

এর পরের সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস থেকে অভিযোগ করা হয় যে দুজন চীনা হ্যাকার বেইজিং-এর গোয়েন্দাদের হয়ে তাদের ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা থেকে তথ্য চুরি করেছে।

চীন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে তারা ভাইরাসের ব্যাপারে তথ্য শেয়ার করেছে এবং বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে সহযোগিতা করেছে।

কিন্তু টিকা আবিষ্কার করার এই দৌড়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে এটা করতে গিয়ে পরীক্ষার স্বাভাবিক যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় সেখানে কি কোনো ফাঁকি দেয়া হচ্ছে? সময় কমাতে ধরা হচ্ছে শর্ট কাট রাস্তা?

‘এটা নিশ্চিত যে এই প্রক্রিয়ায় শর্ট কাট করা হয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়ার ক্ষেত্রে,’ বলেন টমাস বলিকি, যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশেন্সে বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক।

তিনি বলেন, ‘টিকা তৈরি করা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সেই টিকা যে নিরাপদ ও কার্যকর সেটা প্রমাণ করাই কঠিন। কোনো দেশ যদি শুধু টিকা তৈরি করাকেই মুখ্য কাজ বলে ধরে নেয় তাহলে তারা শর্ট কাট রাস্তা নিতেই পারে।’

গবেষণার তথ্য প্রকাশ না করে এবং শেষ পর্যায়ের বড় ধরনের পরীক্ষার আগেই রাশিয়া যে তার স্পুটনিক টিকা নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে তার সমালোচনা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউজে করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলেছেন এই টিকা কতোটা কার্যকর ও নিরাপদ এবং রাশিয়া সেটা কতোটা প্রমাণ করতে পেরেছে এনিয়ে তার ‘গুরুতর সন্দেহ’ আছে।

আস্থা তৈরির চেষ্টা
এসব কথায় কান দিচ্ছে না মস্কো। রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঈর্ষা পরায়ণ হয়েই তাদের টিকার ব্যাপারে এধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। টিকাটি তৈরির পেছনে যেসব গবেষক যুক্ত আছেন তারা আশ্বস্ত করেছেন যে খুব শিগগিরই প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে তাদের গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হবে।

এর মধ্যে চীনও বলেছে যে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য তাদের গবেষণাতেও উল্লেখযোগ্য রকমের অগ্রগতি হয়েছে।

চীনে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো বলছে, তারা যে টিকা তৈরির কাজ করছে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর সেসব টিকার পরীক্ষা চালানো শুরু হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এসবের পরীক্ষায় তাদেরকে কয়েক ডোজ টিকা দেওয়াও হয়েছে।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে চীনা কোম্পানিগুলো দেখাতে চায় যে তাদের তৈরি টিকার কোনো ঝুঁকি থেকে থাকলে তারা সেই দায় দায়িত্ব এড়াতে চায় না এবং প্রয়োজন হলে ত্যাগ স্বীকার করতেও তারা প্রস্তুত।

রাশিয়াতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার নিজের মেয়েকেও স্পুটনিকের এক ডোজ দেয়া হয়েছে।

এই দুটো দেশেই সশস্ত্র বাহিনীর লোকজনের শরীরে তাদের টিকার পরীক্ষা চালানোর কথা ঘোষণা করার পর এর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এসব বাহিনীর কর্মকর্তারা কতোটা স্বেচ্ছায় ও স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

চীনা কোম্পানি ক্যানসিনো টিকা তৈরির জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মির সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে টেস্টের আগে সামরিক বাহিনীর লোকজনের ওপর এর পরীক্ষা চালানোর ব্যাপারে জুন মাসেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

‘মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর ব্যাপারে নীতি নৈতিকতার কিছু বিষয় রয়েছে যাতে করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা হয়রানির শিকার না হন,’ বলেন অধ্যাপক গোস্টিন।

গ্রহণযোগ্যতা
যে টিকার জন্য জনগণের মধ্যে এতো চাহিদা, সেটি তৈরি করতে গিয়ে শর্ট কাট প্রক্রিয়ায় কাজ করা কতোটা গ্রহণযোগ্য? পুরো পরীক্ষা সম্পন্ন না করে তাড়াহুড়ো করে কোনো টিকা বাজারে ছাড়া হলে এর ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তার জের ধরে আরো অধিক সংখ্যক মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

শুধু তাই নয়, কোনো টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তখন মানুষের মধ্যে টিকা-বিরোধী মনোভাবও গড়ে উঠতে পারে।

টিকা তৈরির জন্য যেসব গবেষণা চালানো হয় তার বেশিরভাগই হয় বেসরকারি উদ্যোগে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। সেগুলো প্রায়শই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে।

কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে এই টিকা আবিষ্কারের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।

‘মহামারি মোকাবেলায় দেশগুলো কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে সেটা দেখাতে গিয়েও কোনো কোনো দেশের মধ্যে এধরনের প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়েছে,’ বলেন বলিকি।

এবছরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেকারণে ট্রাম্প প্রশাসন একটা চাপের মধ্যে আছে। টিকা তৈরির প্রতিযোগী মনোভাব দেখাতে এই দেশটির মধ্যেও কোনো রাখঢাক নেই।

যুক্তরাজ্যে যদি নিরাপদ ও কার্যকর টিকা তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে সেটা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারকেও কিছু বাড়তি সুবিধা দেবে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ক্ষেত্রে তার সরকারও সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, করোনাভাইরাস তৈরিতে ব্রিটেনের নেতৃত্ব অব্যাহত থাকবে। শুধু তাই নয়, অন্য কোনো দেশ এই টিকা তৈরিতে সফল হলে ব্রিটেন তাদের কাছ থেকে সেটা কেনার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে।

‘পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে টিকা তৈরির ব্যাপারে যে জাতীয়তাবাদ কাজ করছে সেটা নিশ্চিত,’ বলেন টমাস বলিকি।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যে যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে সেটা হলো কোনো টিকা তৈরি হলে সেটার বিপুল পরিমাণ ডোজ যেন পাওয়া যায় সেটা নিশ্চিত করা।’

অবশ্য করোনাভাইরাসের মাথা তুলে দাঁড়ানোর আগেই বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন সেই শক্তি আরো বেশি জোরালো হয়েছে।

প্রতিযোগিতার সূচনা
মহামারীর শুরুর দিকে প্রতিযোগিতা ছিল যে কোনো দেশ কতো বেশি ভেন্টিলটের ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী বা পিপিই সংগ্রহ করতে পারে। এসবের চালান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশ সরবরাহকারী দেশকে কে কতো বেশি অর্থ দিতে পারে তার প্রতিযোগিতাতেও লিপ্ত হয়েছে।

টিকা তৈরি হলে সেটা সারা বিশ্বে বিতরণের বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। কারণ করোনাভাইরাস থেকে প্রত্যেকে নিরাপদ না হলে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না। তারপরেও যেসব দেশে এই টিকাটি তৈরি হবে তার দেশের নাগরিকদের জীবন বাঁচানো ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলা যে অগ্রাধিকার পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

তার পরেও যদি ওই দেশ থেকে সরকার টিকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয় সেটা জনরোষ তৈরি করতে পারে এবং প্রশ্ন উঠতে পারে সরকারের দক্ষতা নিয়েও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অগাস্ট মাসে টিকার এই জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। দরিদ্র দেশগুলোর সাথে টিকা ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্যে একটি বিশ্ব কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিনি ধনী দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়াসাস বলেছেন, ‘আমাদেরকে টিকার এই জাতীয়তাবাদ ঠেকাতে হবে।’

কূটনীতির হাতিয়ার
টিকা উদ্ভাবনকারী দেশ তার প্রতি অন্যান্য দেশের সমর্থন পেতে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও এটিকে ব্যবহার করতে পারে। বলিকি বিশ্বাস করেন, ‘যেসব দেশ এই টিকা পাবে তাদের প্রত্যেক সরকারই কূটনীতির জন্য এসব টিকার কিছু অংশ রেখে দেবে।’

সবার আগে কেউ টিকা তৈরি করতে পারলেই যে তাদের টিকা সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, এটা এমন প্রতিযোগিতা নয় যাতে মাত্র একজনই বিজয়ী হবেন এবং এর কোনো ফিনিশিং লাইনও নেই। অর্থাৎ এই দৌড় শেষ করার নির্দিষ্ট কোন সীমারেখা নেই।

এর অর্থ হলো করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি ও সরবরাহ নিয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে শত্রুতা ও প্রতিযোগিতা হয়তো মাত্রই শুরু হলো।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement