২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা সঙ্কট উত্তরণে দুই হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা চান জনশক্তি ব্যবসায়ীরা

- সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে জনশক্তি রফতানি খাত। ১৯৭৬ সাল থেকে বিদেশে জনশক্তি রফতানির ইতিহাসে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েননি এ খাতের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের শেষ সপ্তাহ থেকে বিদেশে জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিদেশগামীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর দায়িত্বে থাকা বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরাও চরম ক্ষতির সম্মুখিন। বায়রার সদস্য অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি অফিস ভাড়া এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছেন না। এমতাবস্থায় সরকারের কাছে চাওয়া দুই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনাসহ ভবিষ্যতে যাতে জনশক্তি রফতানিতে সিন্ডিকেট না হয় তার নিশ্চয়তা চান জনশক্তি ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার বিকেলে ‘কোভিড-১৯ সৃষ্ট বৈশ্বিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনশক্তি রফতানি সেক্টরের উত্তরণের উপায় ও সরকার কর্তৃক প্রণোদনা’শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে এসব দাবি ও তথ্য উঠে আসে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এই সেমিনারে বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি ও সাবেক সভাপতি আবুল বাশারসহ জনশক্তি রফতানি খাতের ব্যবসায়ীরা বক্তব্য রাখেন।

বায়রার সদস্য মোহাম্মদ আলী তার বক্তব্যে বলেন, করোনার কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ। গত ৩-৪ মাস হলো অফিস ভাড়া দিতে পারি না। অথচ এখাতে আমরা কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি। তিনি সরকারের কাছে বায়রার চাওয়া দুই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দ্রুতই সদস্যদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানান।

তিনি বলেন, করোনাকালে আমাদের প্রবাসীরাও ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। কয়েক লাখ প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। অনেকে আটকা পড়েছেন। তারা ফিরে যেতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন। কোন দেশ থেকে কতজন প্রবাসী দেশে ফিরেছেন এবং কতজন আটকা পড়েছেন তাদের অ্যাপের মাধ্যমে ডাটাবেজ তৈরি করা উচিত। এজন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বায়রা উদ্যোগ নিতে পারে।

বায়রার সাবেক মহাসচিব রিয়াজ উল ইসলাম বলেন, করোনার করুনায় আমরা জনশক্তি ব্যবসায়ীরা আটকে গেছি। এই ক্রাইসিস থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই সেক্টরের যারা অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী আছেন তাদের নিয়ে বসতে তিনি বায়রা সভাপতিকে অনুরোধ জানান। এসময় তিনি জনশক্তি রফতানিতে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গেও কথা বলেন।

বায়রার এই সাবেক নেতা বলেন, যারা সিন্ডিকেট করে বা করতে চায় তাদের লাথি দিয়ে বের করে দেন। তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেন। রিয়াজ উল ইসলামের মতো জনশক্তি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার। মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের রক্ত চুষে গোলায় ধান ভরেছে। সিন্ডিকেটকে সব সময় ঘৃণা করি এবং ঘৃণা করে যাব। এই সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে। যদি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট না হতো, সব এজেন্সিকে ব্যবসা করতে দেয়া হতো তাহলে আমাদের আজ ভিক্ষা চাইতে হতো না। সরকারের কাছে প্রণোদনা চাইতে হতো না। আপনারা সবাই ১০ সিন্ডিকেটকে বয়কট করুন।

বায়রার বর্তমান সভাপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, করোনাকালে বায়রা সদস্যরা দিশেহারা। হাজার হাজার বিদেশগামী করোনার কারণে যেতে পারেননি। ভিসা, স্মার্টকার্ড করে আমরা পাঠাতে পারিনি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তারাও কষ্টে আছে। এরই মধ্যে আবার বন্যা দেখা দিয়েছে।

আবুল বাশার বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে সৌদি আরবে যাতে দ্রুততম সময়েই সবাই লোক পাঠাতে শুরু করতে পারেন, বায়রা এবং মন্ত্রণালয়কে সে ব্যবস্থা করতে হবে। সকলে মিলেই আমরা ব্যবসা করতে চাই।

প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারম্যান এম.এস শেকিল চৌধুরী বলেন, জনশক্তি খাত একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে। কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছেন আপনারা। হাজার হাজার লোকের ভিসা হলেও আটকে গেছে। কোন দেশের কী পরিমাণ ভিসা আটকে আছে তার ডাটাবেজ করুন, সরকারকে দেন। আশা করছি সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় ফের এই খাত ঘুরে দাঁড়াবে।

রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব আরিফুর রহমান তার বক্তব্যে করোনার এই বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকে উত্তরণে অভিবাসন খাতকে বাঁচাতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বায়রা ও জনশক্তিখাতের সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে জাতীয় অভিবাসন খাত রক্ষা কমিটি করার প্রস্তাব দেন। এসময় তিনি জনশক্তি ব্যবসায়ীদের জন্য দ্রুতই সরকারি প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানান।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি করোনাকালে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সঙ্কটের কথা তুলে ধরে বায়রার ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯, এর প্রেক্ষাপটে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে গত এপ্রিল মাসের শুরুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। আমরা এই খাতের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দাবি করেছি। এই প্রণোদনা পেতে দেরি হতে পারে বিবেচনায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের জমানো জামানতের ৭৫ শতাংশ টাকা (ফেরতযোগ্য) অনুদান দেয়ার আবেদন করি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জামানতের ৫০ শতাংশ টাকা ২ বছরের মধ্যে ফেরত যোগ্য বিবেচনায় মঞ্জুর করে এবং ইতিমধ্যে অনেক এজেন্সির মালিক এই অনুদানের টাকা নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা এই সঙ্কটকাল অতিক্রমে সরকারের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। করোনাকাল অতিক্রমের পর যাতে আমরা দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি সেজন্য আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বায়রার ট্রেনিং সেন্টার উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করছি। শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে বায়রা সভাপতি বলেন, ভবিষ্যতে যাতে সবাই বিজনেস করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাই আমরা করবো। রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক টিপু সুলতানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বায়রার সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ড. মো. ফারুক, আলী হায়দার চৌধুরী, রিপোর্টার ফর বাংলাদেশী মাইগ্রেন্ট (আরবিএম)-এর সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক, নয়া দিগন্তের কাওসার আজম ও বাংলাভিশনের মেরাজ হোসেন গাজীসহ জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের মতামত তুলে ধরেন।


আরো সংবাদ



premium cement