১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

১১২টি আইসিইউ নিয়ে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটা সক্ষম?

স্বয়ংপূর্ণ আইসিইউ ইউনিট - সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শরীরের পরিস্থিতি অবনতি হলে সাধারণত আইসিইউ-তে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশে পরিপূর্ণ আইসিইউ ইউনিট রয়েছে মাত্র ১১২টি।

এখানে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউ বলতে বোঝানো হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ নিবির পর্যবেক্ষণ ইউনিটকে। যেখানে বিশেষ ধরণের শয্যা, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ভেন্টিলেটর, টিউব, পাম্প, হার্টরেইট, ব্লাড প্রেসারসহ অন্যান্য শারীরিক পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক চিত্র পাবার মনিটরসহ নানা আধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম থাকে। বিশেষজ্ঞ দক্ষ জনবল লাগে আইসিইউ পরিচালনা করার জন্য। যাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন বিশেষ সুরক্ষা পোশাক।

বাংলাদেশে যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে প্রশ্ন উঠেছে করোনাভাইরাসে গুরুতর রোগীদের সেবা দেয়ার সক্ষমতা নিয়ে। সম্প্রতি সিলেটের যে মেডিকেল অধ্যাপক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেষ পর্যন্ত ঢাকায় আনতে হয়।

পরিবার অভিযোগ করছে, সিলেটে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য যে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার কথা সেখানে আইসিইউ আছে ঠিকই, কিন্তু তার যন্ত্রপাতি কাজ করছে না। সেই সাথে আইসিইউ পরিচালনার মতো জনবল নেই। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের এমন হয়রানির চিত্র ভাবিয়ে তুলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অন্যান্য রোগীর চিকিৎসার নিশ্চয়তাকেও।

গত জানুয়ারিতে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চাইতে সবচেয়ে কম।

নেপালে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ আছে ২.৮টি, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ২.৩টি, পাকিস্তানে ১.৫টি, মিয়ানমারে ১.১টি সেখানে বাংলাদেশে আছে দশমিক ৭টি (০.৭)। মানে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য একটি আইসিইউ-ও নেই।

চীনে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিতে দুই মাসের বেশি সময় থাকলেও সেটা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন,‘এটা নিয়ে প্রস্তুতি আর পরিকল্পনায় আমাদের বিশাল ঘাটতি রয়েছে। যখন প্রস্তুতি নেয়ার সময় ছিল, তখন পুরো ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিয়েছে, ছোট একটি প্রতিষ্ঠান, যাদের কোন ক্ষমতা নেই, জনবল নেই, অর্থ নেই। তখন কেন্দ্রীয়ভাবে কিছু পরিকল্পনা করা হয়নি।’

আইসিইউ -র এই ঘাটতি রাতারাতি বদলানো যাবে না বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন মি. আহমেদ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এ ধরণের উচ্চমানের বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। সেইসঙ্গে এ ধরণের ইউনিট পরিচালনার জন্য যে বিশেষ ধরণের জনবল প্রয়োজন। বাংলাদেশে সেটার ঘাটতি রয়েছে।

‘আমাদের যতো লোকসংখ্যা, সেই তুলনায় আমাদের এই সেবাগুলো ওই পর্যায়ে যায়নি। সামনের দিনগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। কিন্তু গুরুতর রোগীদের আইসিইউ দেয়া যাবে না।’ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তবে শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়ে আসছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। উন্নত দেশের চাইতে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি ভেন্টিলেটর আমদানির কথা বলেছেন।

মন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সাড়ে পাঁচশটির বেশি ভেন্টিলেটর আছে। ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৩৮০টি। কিন্তু আইসিইউ প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার মতো দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখনও অবকাঠামোগত জায়গায় অনেক পিছিয়ে থাকায় প্রতিরোধের ওপরই জোর দিতে বলেছেন বে-নজির আহমেদ। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের যে সরঞ্জাম ও জনবল আছে, সেটাকেই সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করার পরামর্শ দেন।

তিনি প্রথমেই মনোযোগ দিতে বলেছেন, প্রতিরোধের ওপর। অর্থাৎ যখন কারও মৃদু লক্ষণ দেখা দেবে, তখনই যেন তাকে কোয়ারেন্টিনে রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেলে, যেন দ্রুত আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

মি. আহমেদ মনে করেন, আক্রান্তদের ৮০ ভাগ রোগীই মৃদু লক্ষণ নিয়ে আসে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উচিত হবে এই মানুষগুলোকে সারিয়ে তোলার ওপর মনোযোগ দেয়া। তিনি বলেন,‘রোগের প্রকোপ অল্প থাকতেই যদি চিকিৎসা শুরু করা হয় তাহলে তাদের আইসিইউ-তে রাখার প্রয়োজন হবে না। আর যদি দ্রুত শনাক্ত আর চিকিৎসা করতে আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আইসিইউ সেবা লাগবে। সেটা এই মুহূর্তে দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’

এ রকম একটি কঠিন সময়ে আমেরিকাসহ ইউরোপের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার দেশগুলোতেও আইসিইউ সেবার অভাব দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যদি বাড়তেই থাকে, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কেমন রূপ নেবে সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement