১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

গরম পড়লে কি করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাবে?

- সংগৃহীত

অনেকের মধ্যেই একটা ধারণা আছে যে গরম পড়লে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাবে। কিন্তু এই ধারণার পেছনে যে খুব শক্ত ভিত আছে সেটা বলা যাবে না। কেননা ভাইরাসটি ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড-নাইনটিন মৌসুমি কোন অসুখ কিনা সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। এর পক্ষে বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কে প্রকৃত চিত্র পেতে হলে কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সারা বছর ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ওপর নজর রাখতে হবে। কিন্তু সমগ্র পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ায় ভাইরাসটি কীভাবে ছড়িয়েছে তার ওপর নজর দিলে এবিষয়ে কিছু ধারণা পাওয়া যেতে পারে। ইতোমধ্যে কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক এলাকাতে এই ভাইরাসটির সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে ১০ই মার্চ পর্যন্ত যেসব দেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি সংক্রমণ (সংক্রমণের উৎস জানা যায় না যেখানে) ঘটেছে সেসব দেশে, যেসব দেশে কম সংক্রমণ হয়েছে, তার তুলনায় গড় তাপমাত্রা কম ছিল। আরেকটি গবেষণা হয়েছে চীনের একশোটি শহরের ওপর। এসব শহরে ৪০টিরও বেশি কোভিড-নাইনটিন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি ছিল সেসব এলাকায় সংক্রমণের হারও কম ছিল।

আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে যদিও সারা বিশ্বে ভাইরাসটি পাওয়া যাবে, তারপরেও "তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক জায়গায়" এর প্রকোপ বেশি দেখা যাবে। অন্তত ২৩শে মার্চ পর্যন্ত এরকমটাই দেখা গেছে।

তবে লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের একদল গবেষক বলছেন, ভাইরাসটি এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রত্যেকটি অঞ্চলে "সব ধরনের আবহাওয়ার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে, ঠাণ্ডা - গরম, শুষ্ক - আর্দ্র সব এলাকাতেই।"

দেখা গেছে, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে ফ্লুর মতো অন্যান্য আরো অনেক ভাইরাসের একটা মৌসুমি প্যাটার্ন বা ধরন আছে। তবে বিষুবরেখার কাছাকাছি যেসব ট্রপিক্যাল এলাকা সেখানে এসব ভাইরাসের প্যাটার্ন আলাদা। তবে কিছু কিছু গরম ও আর্দ্র অঞ্চল আছে যেখানে স্থানীয়ভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, যেমন মালয়েশিয়া ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, এই দুটো দেশ বিষুবরেখার কাছে।

ফলে পৃথিবীর অন্যত্র কোভিড-নাইনটিনের ধরন ঠিক কী রকম হবে সেবিষয়ে এথেকে নিশ্চিত করে কোনো ধারণা পাওয়া যাবে না। তবে দক্ষিণ গোলার্ধের দুটো দেশ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে, যেখানে গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, সেসব দেশে উত্তর গোলার্ধের অনেক দেশের চাইতে অনেক কম সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণ কেমন হারে হবে সেটা আরো কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন একটি এলাকায় কতো মানুষ থাকে, সেখানকার জনঘনত্ব কতো ইত্যাদি। ভাইরাসটি যেহেতু ক্রমশ একের পর এক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, প্রাথমিকভাবে লোকজনের চলাচলের মাধ্যমে, একই সাথে মওসুমেরও পরিবর্তন ঘটছে, সেকারণে ভাইরাসটির ওপর আবহাওয়ার কী ধরনের প্রভাব সেটা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন বলছে, কিছু তথ্য-প্রমাণ আছে যে কোভিড নাইনটিন ছাড়া আরো যেসব করোনাভাইরাস আছে সেগুলো সাধারণত শীতকালে ছড়ায়। প্রায় দু'হাজার লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছে- করোনাভাইরাসের বেশি সংক্রমণ হয়েছে শীতকালে অর্থাৎ ফ্লুর মৌসুমে। গ্রীষ্ম কালে এই সংক্রমণের হার কম।

গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক এলেন ফ্রাগাজি। তিনি বলছেন, "সম্ভবত গ্রীষ্ম কালে এর প্রকোপ কিছুটা কমে যাবে।" তবে নতুন এই করোনাভাইরাসটি সেসময় ঠিক কী ধরনের আচরণ করবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

সারা বিশ্বে এতো ব্যাপক সংখ্যক মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন যে গরম পড়লে এর প্রকোপ কমে আসবে খুব বেশি এটা আশা করা ঠিক হবে না।

এই ভাইরাস কি অন্যান্য করোনাভাইরাসের মতো?

নতুন করোনাভাইরাসটির নাম সার্স-কোভ-দুই। এর কারণেই হয় কোভিড-নাইনটিন রোগ। দেখা গেছে অন্যান্য করোনাভাইরাসের মতো করেই এটি ছড়ায়। তবে পার্থক্য আছে অসুস্থতার ধরন ও এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যায়।

সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাইকেল হেড বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব অন্যান্য করোনাভাইরাস থেকে স্পষ্টভাবেই আলাদা। তিনি বলেন,‘কোভিড-নাইনটিন রোগীর সংখ্যা তাপমাত্রা ও আদ্রতার মতো আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে বদলে যায় কীনা সেটা এখনও দেখার বিষয়।’ সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement