২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এখনো শহর ছাড়ছে মানুষ

- প্রতীকী ছবি

রাত সাড়ে ৯টা। ইত্তেফাক মোড় থেকে শাপলা চত্বরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় অবস্থান করছে গোটা দশেক ট্রাক। ট্রাকগুলোতে মালবোঝাই। সেগুলোতেই এক-এক করে চড়ছেন নারী-পুরুষ এবং শিশুরা। ট্রাকগুলো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় যাবে। আর যাত্রী হয়ে যাচ্ছেন ওই নারী-পুরুষ-শিশুরা।

এভাবেই নিয়মনীতি না মেনে এখনো শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন মানুষ। তাও আবার অনেকটা গোপনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা শহর ছাড়ছেন। তবে যারা শহর ছেড়ে যাচ্ছেন তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ‘শহরে তাদের কে দেখবেন?’

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে যখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে, তখন এ দেশেও মানুষকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থানের জন্য বলা হয়েছে। মানুষ যাতে গণপরিবহনে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে না পারে সেজন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। বাস, ট্রেন ও নৌযানসহ সব কিছুই বন্ধ রয়েছে এখন। কিন্তু এরপরও মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না।

এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে মানুষ বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কেউ কেউ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য গাড়ি ভাড়া করে গ্রামে যাচ্ছেন। ফেরিঘাটগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে এমন পরিবহনের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত গাড়ি জড়ো হচ্ছে মাওয়া ও পাটুরিয়ায়। এর বাইরে মালামাল বহনকারী ট্রাকগুলোতেও যাত্রী বহন করা হচ্ছে।

রাতে মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকগুলো থামিয়ে রাখতে দেখা যায়। এই ট্রাকগুলোতে সুযোগ বুঝে যাত্রী ওঠানো হয়। গত কয়েক দিন ধরে দেখা গেছে রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মতিঝিলে বেশ কিছু ট্রাক থামিয়ে তাতে যাত্রী ওঠানো হয়। সন্ধ্যার পর থেকে এই এলাকায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ এসে জড়ো হন। এরপর সুযোগ বুঝে তারা ট্রাকে চড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যাত্রী বলেছেন, বাস-ট্রেনসহ সব যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তারা এই বিকল্প ব্যবস্থা বের করেছেন। বাড়তি ভাড়া ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও তারা এইসব পণ্যবাহী ট্রাকে চড়ে বাড়ি ফিরছেন। তারা বলেন, বাধ্য হয়েই তারা ঢাকা ছাড়ছেন। তারা জানেন নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরেও ঢাকায় থাকার মতো কোনো অবস্থা তাদের নেই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই মানুষগুলোর সবাই নিম্ন আয়ের। ঢাকায় ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনা আতঙ্কের কারণে তাদের এখন কোনো কাজ নেই। কর্মস্থল বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। দুই-একদিন হয়তো ধারদেনা করে চলেছেন। এখন আর ঢাকায় থাকার মতো কোনো সঙ্গতি তাদের নেই। যে কারণে বাধ্য হয়েই তারা ঢাকা ছাড়ছেন।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই মানুষগুলো তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের চোখে পড়লে বাধা দেয়া হয়। আবার অনেক সময় মানবিক কারণে পুলিশের কিছুই করার থাকে না।

মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, পুলিশ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে।


আরো সংবাদ



premium cement