২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চার দশক ধরে মহাকাশে ঘুরছে যারা

চার দশক ধরে মহাকাশে ঘুরছে যারা - ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৭ সালের ২০ আগস্ট ভয়েজার ২ মহাকাশযানকে মহাকাশে পাঠায় নাসা৷ সেটির যাত্রা এখনো চলছে৷ সেবছরেরই পাঁচ সেপ্টেম্বর ভয়েজার ১ একইভাবে মহাকাশে যাত্রা করে৷ এই দুই মহাকাশযানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বৃহস্পতি এবং শনিগ্রহণ সম্পর্কে যতটা সম্ভব্য তথ্য সংগ্রহ করা৷ তাদের যাত্রার শুরুর সময় অবধি গ্রহ দু’টো সম্পর্কে তেমন একটা জানা যায়নি৷ মহাকাশযান দু’টোতে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার উপযোগী প্লুটোনিয়াম ব্যাটারি রয়েছে৷

পৃথিবীতে একেকটি ভয়েজারের ওজন ছিল ৮২৫ কেজি করে৷ নাসা এখন অবধি মহাকাশকেন্দ্রিক যে সব সাফল্য অর্জন করেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ভয়েজার অভিযান৷ সে দু’টি এখনো মহাকাশ থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাঠাচ্ছে৷ পৃথিবী থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া যন্ত্র দু’টির সঙ্গে ২০৩০ সাল অবধি রেডিও যোগাযোগ অব্যাহত রাখার আশা করছে নাসা৷

২০১২ সালের ২৫ আগস্ট ভয়েজার ১ আমাদের সৌরজগতের একটি সীমানা ‘হিলিওপস’ অতিক্রম করে আকাশগঙ্গা ছায়াপথে পৌঁছে গেছে৷ এটি হচ্ছে মানুষের তৈরি একমাত্র যন্ত্র যা পৃথিবী থেকে বর্তমানে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করছে৷

ভয়েজার ১-এর মতো ভয়েজার ২-ও সৌরজগতের একটি সীমানার বাইরে চলে গেছে৷ ২০১৮ সালের পাঁচ নভেম্বর এই যানটি ‘ইন্টার্স্টেলার স্পেসে’ প্রবেশ করে৷ এই যানে পাঠানো তথ্য অতীতের বিভিন্ন ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে৷

সৌরজগতের বিভিন্ন সীমানা রয়েছে৷ প্রথমটি হচ্ছে ‘টার্মিনেশন শক৷’ সেখানে সৌর বাতাস নাটকীয়ভাবে কমে যায়৷ ‘হিলিওস্পেয়ার’ এর পরে ‘হিলিওপস’ এর অবস্থান৷ আর এটি হচ্ছে ‘স্পেস বাবল’ এর কিনারা যেখানে সৌর শিখা ‘ইন্টারস্টেলার’ রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে৷ এখন অবধি ধারণা ছিল যে বাতাস ক্রমশ কমতে থাকে৷

তবে দুই মহাকাশযানের তুলনামূলক পরিমাপ আমাদের জানাচ্ছে যে আমাদের সৌরজগতের অভ্যন্তরে একটি স্পষ্ট সীমান্ত রয়েছে৷ ‘ইন্টারস্টেলার মিডিয়াম’-এর তাপমাত্রাও আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি৷

‘ইন্টারস্টেলার’ বিষয়ক নানা উদ্ঘাটন ছাড়াও মহাকাশযান দু’টি আরো অনেক বিষয়ে তথ্য জানিয়েছে৷ ১৯৭৯ সালের পহেলা জানুয়ারি বৃহস্পতি গ্রহের ছবি পাঠায় ভয়েজার ১৷ যানটি গ্রহটি এবং সেটির চার চাঁদের মোট ১৭,৪৭৭টি ছবি পাঠিয়েছে৷ বৃহস্পতি গ্রহের চারপাশ ঘিরে যে পাতলা বৃত্ত রয়েছে, তার অস্তিত্ব এই ছবির মাধ্যমেই আমরা জেনেছি৷ বৃহস্পতিগ্রহ পার হওয়ার পর ভয়েজার ১ সেকেন্ডে ১৬ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছায়৷

ভয়েজার ২ শনি গ্রহের এই রঙ্গিন ছবিটি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে৷ ১৯৮১ সালে মহাকাশযানটি আমাদের সৌরশক্তির ষষ্ঠ গ্রহের কাছে পৌঁছায়৷ শনি গ্রহের ২১ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে এই ছবিটি তোলা হয়েছে৷

মহাকাশযান দু’টিকে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডিনা শহরের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের এই ছবিটি ১৯৮০ সালে তোলা৷ বর্তমানে অবশ্য নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র অনেক আধুনিক করা হয়েছে৷

মহাকাশযান দু’টি যদি তাদের অন্তহীন যাত্রাপথে কোন প্রাণের সন্ধান পায়, তাহলে সেটিকে পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হবে৷ যান দু’টিতে রয়েছে এরকম কিছু উজ্জ্বল সোনালি ডিস্ক, যাতে পৃথিবীর ছবি এবং মানুষ, জীবজন্তু এ প্রকৃতির শব্দ রেকর্ড করা রয়েছে৷ এমনকি এগুলো বাজানোর ব্যবস্থাও রয়েছে ভয়েজার দু’টিতে৷(সূত্র: ডয়সে ভেলে)


আরো সংবাদ



premium cement