২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সড়ক আইন বাস্তবায়নে সরকার ছাড় দিচ্ছে?

সড়ক আইন বাস্তবায়নে সরকার ছাড় দিচ্ছে? - ফাইল ছবি

বাংলাদেশে নতুন সড়ক আইনে সংশোধনীর দাবির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে মালিক শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করার পর বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে বৃহস্পতিবারও টাঙ্গাইল বগুড়া এবং উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক জেলায় বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।

যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, সড়ক আইন প্রয়োগে অহেতুক বাড়াবাড়ি হবে না।

পরিবহন মালিক শ্রমিকদের চাপের কাছে সরকার ছাড় দিচ্ছে কিনা বা আপোষ করছে কিনা- এই প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অনেকেই।

সরকার কোথায় ছাড় দিচ্ছে?

বাস-ট্রাকের ৫০ লাখের বেশি চালকের লাইসেন্স বা বৈধ কাগজপত্র তৈরির জন্য আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সাত মাস সময় দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ফিটনেসবিহীন বাস ট্রাকেরও বৈধ্যতা নেয়া যাবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০ লাখের মতো চালকের লাইসেন্স আছে এবং ৬০ শতাংশের বেশি বাস, ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের ফিটনেস নাই। এই দু'টি মুল ইস্যুতে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা একটা লম্বা সময় পেলেন। 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইন কার্যকর করার পর এই সুযোগ দিয়ে তা কার্যত শিথিল করা হলো। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এমন আলোচনার পর ট্রাক মালিক শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

ঐ বৈঠকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী ইলিয়াস কাঞ্চনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলছিলেন, চাপের মুখে আইনটি কার্যকর করা না গেলে সেটা সবার জন্যই পরাজয় হবে। এই বক্তব্য তিনি ঐ বৈঠকেও তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন।

‘এবার যদি আমরা এই আইন বাস্তবায়ন করতে না পারি, এবার যদি আমরা হেরে যাই, তাহলে হেরে যাবে পুরো বাংলাদেশ।’

ট্রাক মালিক শ্রমিক নেতারা বলেছেন, নতুন আইনে জামিন না পাওয়ার যে বিধান আনা হয়েছে, সেটাকে জামিনযোগ্য করার আশ্বাস তারা পেয়েছেন। এরসাথে জেল জরিমানা কমানোসহ তাদের বিভিন্ন দাবিতে আইনটি সংশোধন করার ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন আশ্বাসও দিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। 

মানুষের উদ্বেগ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক বছরেরও বেশি সময় আগে সরকার আইনটি সংসদে এনেছিল। এই দীর্ঘ সময়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকরাও এই আইন নিয়ে সরকারের সাথে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন।

এখন তা কার্যকর করার পর তারা কেন চাপ সৃষ্টি করছেন এবং সেই চাপের কাছে সরকার ছাড় দিচ্ছে কিনা-এসব প্রশ্ন অনেকেই তুলছেন।

উত্তরের জেলা বগুড়া থেকে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী তাহমিনা পারভিন বলছিলেন, মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায় করে নিচ্ছে।

‘সরকার এতদিন ধরে একটা সিদ্ধান্তে এলেন, নিশ্চয়ই তারা বুঝে শুনে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাহলে সেখানে কেন ছাড় দিচ্ছেন? সরকার কেন নমনীয় হচ্ছেন। আমার মনে হয় যে, পরিবহন মালিক শ্রমিকদের কাছে সরকার নমনীয় হচ্ছেন। সেটা আমাদের উদ্বিগ্ন করছে।’

আইন কার্যকরের পর শিথিল: আইন সম্মত কিনা?

সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা বলছেন, আইন কার্যকর করার পর সংশোধন করা ছাড়া শিথিল করা হলে তা আইন সম্মত হয় না। ‘শিথিল করার আশ্বাস দেয়ার মানে হচ্ছে, অন্যায় করলেও আইন প্রয়োগ না করা বা চোখ বুজে থাকা। এটাকে আপোষ বলা যেতে পারে।’

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, অসঙ্গতি কিছু পেলে বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে সমাধান করা হবে।আসলে শেষপর্যন্ত সরকার কতটা ছাড় দেবে, সেটা এখনও তারা পরিস্কার করে বলছেন না। ঐ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এবিষয়ে তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘আইনটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করার জন্য এই আইন কার্যকরের সময় যদি কিছু শিথিলতা, কিছু প্রশিক্ষণ এবং আইন ভাল করে বোঝার জন্য সময় দেয়া হয়, এসব আইনে লেখা না থাকলেও এটা প্রয়োজন এবং তা করা যায়।’

‘পরিবহন মালিক শ্রমিকের সাথে বসাটা ছাড় দেয়া নয়। এই আইনটা কার্যকরের পর তারা কি ধরনের অসুবিধার মুখে পড়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।’

সরকারের সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আইনে তাদের আপত্তির বিষয়গুলো চিহ্নিত করছেন।  তিনি জানান, তাদের বৈঠকের পর তারা তাদের প্রস্তাব সরকারকে দেবেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement