২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে শিশুটিকে?

আয়েশা - সংগৃহীত

প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাছে একটি শিশুকে পেয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি করান সেখানকার পুলিশ ফাঁড়ির এস আই বাচ্চু মিয়া।

শিশুটির সাথে কেউ ছিলো না এবং সে ঠিক মতো কথা বলতে কিংবা হাঁটতে পারছিলো না।

তারপর থেকে ওই হাসপাতালের শিশু বিভাগে ২০৭ নম্বর ওয়ার্ডে আছে শিশুটি, যে অস্ফুট উচ্চারণে তার নাম জানিয়েছিলো আয়েশা।

এরপর দুই বছরে পরিবার বা স্বজন কেউ তার কোনো খোঁজ নিতে আসেনি। তবে এর মধ্যেই চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তাসহ পরিচিত অপরিচিত অনেকেই পরিণত হয়েছে তার স্বজনে।

তার পুরো দায়িত্বই নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আইনি অভিভাবক না থাকায় এখন আটকে গেছে তার চিকিৎসার কিছু বিষয়।

অন্যদিকে তার আইনি অভিভাবকত্ব পাওয়ার আশায় আদালতের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে নিবেদন নামের একটি অলাভজনক সংস্থা।

সংস্থাটির সভাপতি মারজানা সাফাত বলছেন, তারা ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে আসা এমন অজ্ঞাত রোগীদের নিয়েই কাজ করেন।

"বাচ্চাটার একটা ইনটেনসিভ কেয়ার দরকার ছিলো। আমরা তার জন্য আয়া ঠিক করে দিয়েছি। তাকে কোনো শেল্টার হোমে রাখা দরকার। আবার তার চিকিৎসার জন্য আইনি অভিভাবক দরকার। সেজন্য আমরা আদালতে আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ অপারেশন করা হলে তার কথা বলার সমস্যা কাটবে," বলছেন মারজানা সাফাত।

শিশুটির দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ড: কামাল হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, শিশুটির পায়ে সমস্যা কাটানোর জন্য থেরাপি চলছে কিন্তু জিহ্বা তালুর সাথে লেগে আছে যার সমাধান করতে হবে অপারেশন করে।

"অপারেশনের জন্য কিছু আইনি নিয়ম কানুন আমাদের মেনে চলতে হয়। অপারেশনের আগে আইনি অভিভাবকের অনুমোদন দরকার হয়। তেমন কাউকে পাওয়া গেলে আমরা অপারেশন করাতে পারবো এবং আশা করি এতে করে তার কথা বলার সমস্যা কাটবে।"

ড: কামাল হোসেন বলছেন, শিশুটি এখন স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না, তবে মুখ হা করে কথা বলার চেষ্টা করে। সার্জারি করে এ সমস্যা থকে মুক্ত করা সম্ভব।

মারজানা সাফাত বলছেন তারা গত কয়েকমাস ধরে এ শিশুটির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার এখন সার্বক্ষণিক দেখভাল দরকার। প্রতিবন্ধি ফাউন্ডেশনে জায়গার সংকুলান হচ্ছে না।

তিনি বলেন, "মেয়েটি খুব ভালো রেসপন্স করে। খুবই কমিউনিকেটিভ ও বন্ধুত্বভাবাপন্ন। আমরা মেয়েটির দেখভালের দায়িত্ব নিতে চাই।"

তার মতে আয়েশা অন্যদিক থেকে ভাগ্যবানও। কারণ ডাক্তার নার্সরা তাকে খুবই ভালোবাসে। সবাই তাকে মন থেকে সহায়তা করে।

চিকিৎসক কামাল হোসেন বলছেন, শিশুটিতে হয়তো কেউ ফেলে গেছে এবং তার পায়ের সমস্যা জন্মগত যে কারণে সে হাঁটতে পারে না।

"তবে তার পায়ের থেরাপি চলছে এবং বিশেষ জুতো তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে তার হাটার সমস্যার সমাধান হবে।"

তিনি বলেন, শিশুটি মানসিক দিক থেকে ঠিক আছে বলে মনে করছেন তারা।

"তবে জিহ্বা তালুর সাথে লাগানো। এটা অপারেশন করে ঠিক করতে হবে। সব অপারেশনের সাইড এফেক্ট আছে। তার লিগ্যাল অভিভাবক নেই। যদি কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান তাকে অ্যাডপ্ট করে এবং তাদের আইনি অনুমতি পেলে আমরা অপারেশন করে দিতে পারবো।"

তিনি জানান, হাসপাতালে তাকে যে বেড দেয়া হয়েছে সেখানেই আয়েশা থাকবে ও খাবার পাবে।

"চিকিৎসক ও সিস্টাররাও তাকে নানা উপহার দেয়। অন্যরাও তার প্রতি দারুণ সহানুভূতিশীল।"

হাসপাতালের ফাইলে আয়েশার রোগের বর্ণনা সেরিব্রাল পালসি বা সিপি'র কথা উল্লেখ করা হলেও ডা: কামাল হোসেন বলছেন সিপি নয় আয়েশার জিহ্বা তালুর সাথে অর্থাৎ টাং টাইতে আক্রান্ত।

আর পায়ে জন্মগত ত্রুটি আছে কিন্তু মানসিক অবস্থা তার ভালো আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

- বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement