২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

একটা টিকেট, কোনো আঙ্কেল কী দিতে পারেন!

ওয়ারসিয়া খুশবু - সংগৃহীত

এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়েস্টার্ণ এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ ও টেলিগ্রাফ স্কুল টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ওয়ারসিয়া খুশবু মাত্র একটি এয়ার টিকিট আর রেজিস্ট্রশন ফি’র জন্য উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যেতে পারছে না। আগামী ১৯ থেকে ২৯ জুন এ আসর উজবেকিস্তানের তাসখন্দে শুরু হবে।

ঘরোয়া দাবার খুদে বিস্ময় মাত্র সাত বছর বয়সী খুশবু তার দুই বছরের দাবা ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে এশিয়ান অনূর্ধ্ব-৬ ও অনূর্ধ্ব-৮ বিভাগে সবার দৃষ্টি কেড়েছে। দেশীয় দাবায়ও নিজেকে চমৎকারভাবে মেলে ধরেছে। শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশে এ ধরনের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে এগিয়ে চলেছে। সেই শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে খুশবু’র আক্ষেপ কোনো আঙ্কেল কী আমাকে একটি টিকিট দিতে পারেন না!

দেশকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দেবার পর খুশবু’র সেই ধারাবাহিক সাফল্য এখন অর্থই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাভাবে তার এখন আসন্ন এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ এ চ্যাম্পিয়নশিপে খুশবু অংশ নিতে পারলে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনার পাশাপাশি নর্ম অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

খুশবু’র বাবা মেহেদি কায়সার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দাবায় মেয়ে ভালো করছে বলেই শতকষ্টের ভেতরেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে খেলাটি চালিয়ে নিতে হচ্ছে। কিন্ত স্পন্সর না পেলে এভাবে আর কতদিন এগুবো।?ও’র এখন দেশে-বিদেশে বেশি বেশি করে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলার প্রয়োজন। ভবিষ্যতে বিশ্ব দাবায় এগুতে হলে, ভালো কিছু অর্জনের লক্ষে এখনি ভিত শক্ত করার সময়।

গত এক বছর ধরে খুশবু জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য দেখানোর পর বিদেশের মাটিতেও বেশ কয়টি শিরোপা জিতেছে। ভবিষৎতে আরো বড় ধরনের সাফল্য পাবার যোগ্যতা রাখে। কিন্ত নিয়মিত খেলে যেতে না পারলে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন। সেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এ খুদে দাবাড়ু’র উজবেকিস্তানে যেতে প্রয়োজন একটি এয়ার টিকিট আর রেজিস্ট্রশেন ফি। অর্থাৎ এক লাখ দশ হাজার টাকা পেলেই এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারে। কিন্ত স্পন্সরের অভাবে তার অংশগ্রহণ একরকম অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে খুশবু’র বাবা মেহেদি কায়সার জানান, গেল এক বছর ধরে দেশের বাইরে ছয়টি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে বহু ধারদেনা করে, বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে এবং একবার একটি স্পন্সর পাওয়ায় ওইসব টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ সম্ভব ছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এভাবে আর কত টানতে পারব। তারপরও টেনে টেনে ছয়টি টুর্নামেন্টে নিয়ে যাবার পর আর পারছি না। আসছে জুনে উজবেকিস্তানে এশিয়ান স্কুল টুর্নামেন্ট। ও’র ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্ত সেই অর্থ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছি।

মেহেদি কায়সার আরো জানান, দেশের বাইরে মোট ছয়টি টুর্নামেন্টের মধ্যে গত জুনে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে আসায় শ্রীলঙ্কায় এশিয়ান স্কুল টুর্নামেন্ট খেলেছে। একই বছরের এপ্রিলে থাইল্যান্ডে এশিয়ান ইয়ুথে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অংশ নিয়ে একটি স্বর্ণ ও একটি রৌপ্য জিতে দেশে ফিরলে খুশবু’র পারফরম্যান্সে খুশি হয়ে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবউদ্দিন আহমেদ ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এর পর বিদেশে আরো যে চারটি টুর্নামেন্ট খেলতে গেছে তা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই নিয়ে গিয়েছি। এর মধ্যে খুশবু’র বাবার বন্ধুদের সহায়তায় গেল সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে ওয়েস্টার্ণ এশিয়া ইয়ুথে খেলতে গিয়ে স্বর্ণপদক লাভ করে খুশবু। নভেম্বরে কলকাতায় স্কুল টেলিগ্রাফ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। ডিসেম্বরে মুম্বাই আইএলএফ টুর্নামেন্ট এবং চলতি বছর শ্রীলঙ্কায় এশিয়ান ইয়ুথে অংশগ্রহণ করে।
কিন্ত আসছে জুনে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়েই তার দুশ্চিন্তা। মেয়ে আদৌ খেলতে যেতে পারবে কিনা এ নিয়ে পিতার যত সংশয়। স্পন্সরের জন্য বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগযোগ করলেও সাড়া পাননি খুশবু’র বাবা মেহেদি কায়সার।

এরই মধ্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সাথে খুশবু তিনি দেখা করেছেন। মন্ত্রী ভবিষৎতে তাকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। কেননা, এরই মধ্যে চলতি অর্থ বছর এখন শেষ দিকে।এদিকে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবউদ্দিন শামীম জানিয়েছেন, শুধু খুশবু নয়, আমরা উজবেকিস্তানে পাঁচ থেকে ছয়জনকে পাঠানোর চেষ্টা করছি।
আন্তর্জাতিক আরবিটার হারুন অর রশিদ জানান, উজবেকিস্তানে খুদে দাবাড়ুদের জন্য এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ আসরে চ্যাম্পিয়ন বা একটু ভালো ফলাফল করতে পারলে খেতাব বা নর্ম পাবার সুযোগ রয়েছে।

খুশবু’র জন্ম ২০১২ সালের ২১ আগষ্ট। মাত্র পাঁচ বছরেই দাবার সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। ২০১৭ সালে প্রতিযোগিতামূলক আসরে খেলতে নেমেই ফিদে আন্তর্জাতিক রেটিং লাভ করে। এভাবেই এ খুদে বিস্ময়ের দাবায় পদচারণা শুরু। জাতীয় পর্যায় খুশবু তার অনূর্ধ্ব-৬ ও অনূর্ধ্ব-৮ ক্যাটাগরিতে একচ্ছত্র আধিপত্যে বজায় রেখেছে। ঘরোয়া দাবার জাতীয় সাব জুনিয়র, জুনিয়র ও জাতীয় ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজ ইভেন্টে বরাবরই চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই জাতীয় নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বড়দের সাথে লড়েও ২২তম হয়েছে।

এ মূহূর্তে সাত বছর বয়সী ওয়ারসিয়া খুশবু জাতীয় ও আন্তর্জতিক পযার্য় অনূর্ধ্ব-৮ ইভেন্টে খুবই পরিচিতি নাম। এ খুদে বিস্ময়ের এখন এগিয়ে যাবার কথা। নিজেকে ভবিষৎতের জন্য গড়ে তোলার কথা। কিন্ত নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি এখন খুশবু। তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারে কেবল দেশের স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্তত একটি স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেই খুশবু’র পথ চলা সহজ হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement