২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অদম্য এক ব্যাডমিন্টন পরিবার

আবদুল আউয়াল, তার স্ত্রী, দুই পুত্র ও কন্যা - ছবি : নয়া দিগন্ত

উডেন ফ্লোরে ঢুকে যে কেউই একটু থমকে দাঁড়াবেন। উৎসাহ নিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলছে সবাই। সবার চোখের চাহনিই বলে দেয় তারা কতটা খুশি। কারো এক হাত নেই তো কারো এক পা নেই। কেউ আবার হুইল চেয়ারে বসেই র‌্যাকেট চালাচ্ছেন। আবার একটি পরিবারের বাবা, দু’ছেলে ও এক মেয়ে তিনজনই বেঁটে। এরা সবাই খেলছেন প্যারা-ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে। তারা কারো বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। সামাজিকভাবে একটু সহযোগিতা এবং উৎসাহ পেলে এরাই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের গর্ব।

শুক্রবার শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে প্রথম প্যারা ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। এখানেই দেখা মেলে অদম্য এক ব্যাডমিন্টন পরিবারের।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার বাসিন্দা আবদুল আউয়াল। স্ত্রী তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস। সংসারে স্ত্রী স্বাভাবিক মানুষের মতোই লম্বা। বড় ছেলে আল আমিনও স্বাভাবিক; কিন্তু বাকি দু’ছেলে ও মেয়ে হয়েছে বাবার মতোই। উচ্চতা তিন ফুটেরও কিছু বেশি। সমাজের অবহেলিত একটি পরিবার; কিন্তু তারপরও দমে যায়নি তারা। স্কুলে অন্য ছাত্রছাত্রীদের অবজ্ঞায় পড়ালেখা এগোয়নি বেশি দূর। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণী, মেঝ ছেলে ইয়ামিন হোসেন সপ্তম শ্রেণী এবং ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।

এমন একটি পরিবারের মা বাদে সবাই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। হাতে র‌্যাকেট নিয়ে চলে এসেছেন ইনডোরে। চিটাগাং রোডে চায়ের দোকান করেই সংসার চলে আবদুল আউয়ালের। তার কথায়, ‘আমার ছেলেরা যদি খেলতে চায় তাহলে কোনো বাধা নেই। ছেলেরা আজ যদি স্বাভাবিক হতো তাহলে আরো ভালো খেলতে পারত। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।’ তবে স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে কোনো আফসোস নেই সুস্থ সবল হালিমার। তিনি মনে করেন সৃষ্টিকর্তা কাকে কখন কিভাবে রাখবেন তা তিনিই জানেন। তার কথায়, ‘আমি চাই ছেলেরা অন্তত ব্যাডমিন্টনে ভালো করুক।’

শুধু  এই পরিবারটিই নয়। এমন আরো অনেকের দেখা মেলে এই আয়োজনে। একই উচ্চতার বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার বাসিন্দা মো: হেলালেরও। মোটর পার্টসের ব্যবসা তার। তিন বছর আগ থেকে ব্যাডমিন্টন খেলেন। মোংলায় রিমঝিম নামে একটি সিনেমা হল ছিল। সেখানেই এখন লাইট লাগিয়ে সংস্কার করে ইনডোর বানানো হয়েছে। জাহাজের ব্যবসা করা স্থানীয় মাহাবুব এগুলো ঠিক করে দিয়েছেন। তার কথায়, ‘আমি বামন বলে মন খারাপ করি না। বরং আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আছে, তিনিই আমাকে এমন বানিয়েছেন। আমি খুশি কারণ আর দশজনের মতো বসে বসে সময় নষ্ট করি না। কাজ করে খাই। কাজ শেষে ব্যাডমিন্টন খেলে রিলাক্স হই। প্রথমবারের মতো এমন ইনডোর দেখলাম। ব্যাডমিন্টনের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেল।’

এক হাত নেই বিদ্যুৎ হালদারের। ১৯৯৫ সালে অ্যাক্সিডেন্টে একটি হাত হারিয়েছেন। তারপরও দমে যাননি। তবে ফুটবল খেলাটা থেমে যায়। পরবর্তীতে আগ্রহ জন্মে ব্যাডমিন্টনে। এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন বিদ্যুৎ।

বাংলাদেশ প্যারা-ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতি ও জাতীয় ব্যাডমিন্টন কোচ এনায়েত উল্লা খান বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় দেশের ৮ জেলার ৩৫ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী (প্যারা) ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় চারটি ইভেন্টে অংশ নিচ্ছেন। ইভেন্টগুলো হলো- এসএস সিক্স (শর্ট স্ট্যাচার), এসইউ ফাইভ (স্ট্যান্ডিং আপার), এসএল থ্রি (স্ট্যান্ডিং লোয়ার) ও হুইলচেয়ার। আশা করি ভবিষ্যতে তারা বিদেশ থেকে পদক জিতে আনতে পারবে।’

এনপিসির (ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি) মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মো: মাকসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্মসচিব মো: আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনপিসির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম, বিবিএফ সহ-সভাপতি মো: আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আমীর হোসেন বাহার এবং এনপিসির উপমহাসচিব রেজাউল হোসেন বাদশা।

উদ্বোধনী দিনের খেলায় হুইলচেয়ার একক ইভেন্টে মহসিন সরাসরি ২-০ সেটে নুর নাহিয়ানকে এবং রাকিব হোসেন ২-০ সেটে রাজনকে হারান। এসএ সিক্স ইভেন্টে হেলাল সরাসরি ২-০ সেটে ইয়ামিনকে হারায়।


আরো সংবাদ



premium cement