২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৮৭ বছর বয়সেও দাবার পাশে

বেগম লায়লা আলম - নয়া দিগন্ত

বয়সের ছাপ শরীরে স্পষ্ট। কানেও এখন শুনতে পারছেন না ঠিকমতো। পায়ে অস্ত্রোপচার করায় হাঁটতে হয় স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে। দাঁড়াতেও পারেন না বেশিক্ষণ। শরীরে এত সব সমস্যা। কিন্তু মনোবল তার অটুট। তাই তো ৮৭ বছর বয়সেও সুদূর মার্কিন মুল্লুক থেকে চলে এসেছেন প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে।
২৭ জানুয়ারি দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে তার হাতেই উদ্বোধন হয় এবারের ১০ম বেগম লায়লা আলম আন্তর্জাতিক মহিলা রেটিং দাবার। যার নামে এই মহিলা দাবা তিনিই এই বেগম লায়লা আলম। জাতীয় মহিলা দাবার টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন তিনি। ১৯৮৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পর নিয়মিত তার পৃষ্ঠপোষকতায় হয়ে আসছে বেগম লায়লা আলম মহিলা রেটিং দাবা টুর্নামেন্টটি।

আগে প্রতি বছরই বাংলাদেশে এসে টুর্নামেন্টটির উদ্বোধন করতেন লায়লা আলম। এখন বয়সের কারণে শরীর আর সায় দেয় না। তাই ছয় বছর পর এবার ফের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিতি তার। অবশ্য তার অনুপস্থিতিতে গত চার-পাঁচ বছর টুর্নামেন্টটির উদ্বোধন করেছেন তার মেঝ ছেলে ওয়াজির আলম। ১৯৮০, ১৯৮১ এবং ১৯৮২ এই তিন বছর জাতীয় মহিলা দাবায় হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন লায়লা আলম। নিজ মুখেই জানালেন এই বর্ষীয়ান নারী। তার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন পরবর্তীতে মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়া রানী হামিদও। খেলেছিলেন নিয়াজ মোর্শেদের বিপক্ষেও। লায়লা আলমের স্বামী শামসুল আলমও দাবাড়ু ছিলেন। তবে তিনি বাসায় দাবা খেলতেন স্ত্রীর সাথে।

১৯৭৮ সালে প্রথম মহিলা দাবায় অংশ নেয়া লায়লা আলমের। এই মহিলা দাবাড়ুর চার ছেলে সন্তান। সবার বড় ওয়াকিল আলম, এরপর ওয়াজির আলম, ওয়াসিফ আলম এবং ওয়াকি আলম। তার সাথে কথা বলার সময় সাহায্য করছিলেন ওয়াসিফ আলম। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে লায়লা আলম থাকেন ওয়াকি আলমের কাছে। অবশ্য তার ছেলেরা কেউই দাবা খেলোয়াড় হননি। লেখাপড়ায় বেশি মনোযোগী ছিলেন। আগে একাই বাংলাদেশে চলে আসতেন লায়লা আলম। এখন আর সম্ভব নয় মোটেই। এবারের মহিলা রেটিং দাবা উদ্বোধনের সময় তার তিন ছেলেকে নিয়েই হাজির হন তিনি।

১৯৮৫ সালে মারা যান স্বামী শামসুল আলম। ফলে সে বছরই বাংলাদেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি দেয়া লায়লার। বাংলাদেশে তার দাবা খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি মোটামুটি তখন থেকেই। তবে মেরিল্যান্ডে ঠিকই দাবা খেলেন। এখনো তিনি সেখানে খেলেছেন। চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন কয়েকবার।

অবশ্য তার মধ্যে আফসোস আছে বাংলাদেশের হয়ে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে না পারায়। সে সাথে ফিদে মাস্টার বা আন্তর্জাতিক মাস্টার না হতে পারার কষ্টটাও আছে। তবে আটলান্টিকের অপর পাড়ে বসে বাংলাদেশের দাবা এবং অন্য খেলাধুলার খোঁজ রাখেন নিয়মিত। এখন প্রচুর মেয়েরা দাবা খেলছে। উঠতি কয়েকটি মেয়ে খুব ভালো করছে এতে খুব আনন্দিত তিনি। জানান, ‘আমার প্রত্যাশা বাংলাদেশের মেয়েরা যেন গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারে।’ যে রানী হামিদকে তিনি হারিয়েছিলেন, সেই রানী হামিদও এবারের বেগম লায়লা আলম রেটিং দাবার খেলোয়াড়।

এই বয়সেও তিনি নিয়মিত জানতে চান কবে শুরু হবে তার নামের মহিলা রেটিং দাবাটি। বেগম লায়লা আলমের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ দিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।

তার মতে, বাংলাদেশের দাবার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছেন বেগম লায়লা আলম। উনার মতো অন্য সম্পদশালী বাংলাদেশী দাবাড়ুরা যদি এগিয়ে আসে দাবার পৃষ্ঠপোষকতায় তাহলে খেলাটির আরো উন্নয়ন হবে এই দেশে।


আরো সংবাদ



premium cement