স্বামী আর ফিরবে না, ভাতও জুটবে না!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯, আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬
স্বামী কমর উদ্দিন বাঙ্গিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী তহমিনা আক্তার। এত তাড়াড়াড়ি আনন্দের সংসারেবিষাদ নেমে আসবে ভাবতেই পারেননি। এখন তিন সন্তান এবং অনাগত এক সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
বাঙ্গিকে হারিয়ে এখন তার সংসারে নেমে এসেছে অন্ধকারের কালো ছায়া। ভাত খাওয়ানোর মানুষটি না থাকায় করুণ অবস্থায় দিন পার করছে পরিবারটি।
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে নিহত হন কমর উদ্দিন খানবাঙ্গি (৪০)। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। বাঙ্গি বগুড়া সদর উপজেলার চকআকাশ তারা গ্রামের মরহুম কফিল উদ্দিন খানের ছেলে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে কমর উদ্দিন সবার ছোট।
কমর উদ্দিন না থাকায় দুর্দশায় পড়েছে পরিবারটি। আগে তবু কোনমতে টেনেটুনে সংসার চলত। এখন সে অবস্থা নেই। পরিবারে খাবারের যোগান দেয়া মানুষটি না থাকায় ভয়াবহ অবস্থায় দিন পার করছেন তাহমিনা। সহায় সম্বলহীন পরিবারের সদস্যদের তিনবেলা খাবার জোটাতে তিনি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
শহীদ কমর উদ্দিনের ভাতিজা জহুরুল ইসলাম জীবন বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট বগুড়া শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতে বাড়ি থেকে সকালে বের হয়েছিলেন চাচা কমর উদ্দিন খান বাঙ্গি। বিকেলে এলাকার কয়েকজনের সাথে দেখা হয়। তারপর থেকেই ফোন বন্ধ। খোঁজ করার একপর্যায়ে সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায়, তার লাশ বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কে পড়ে আছে।
এরপর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে গিয়ে স্বজনরা তার লাশ দেখতে পান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে তিনি শহীদ হয়েছেন। তার গোটা শরীরেই বুলেট বিদ্ধ ছিল।
তিনি আরো জানান, বিকেলে চাচাকে আলতাফুননেছা খেলার মাঠের কাছে দেখেছেন অনেকেই। তাদের মতে পুলিশ প্লাজার কাছে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
সরেজমিনে কমর উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার। তিন সন্তান নিয়ে নির্বাক নিস্তব্ধ স্ত্রী তহমিনা আক্তার। ষাটোর্ধ্ব মা জমেলা বেওয়াও তাদের সংসারে। সহায় সম্বল বলে কিছুই নেই। আছে শুধু থাকার একটি মাত্র ঘর।
বড় মেয়েটি কাজলীর বয়স এখন ১৭ বছর। সাত বছরের ছেলে তৌহিদ স্থানীয় মাদরাসায় পড়ে। ছোট ছেলে আবদুল্লাহর বয়স দুই বছর। এখনো সে মায়ের কোলে। এদিকে গর্ভে রয়েছে সাত মাসের সন্তান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে একেবারেই পথে বসেছে হতদরিদ্র পরিবারটি।
বিএনপির পক্ষ থেকে সামান্য সাহায্য এলেও, কিভাবে দিন কাটছে, কিভাবে সংসার চলছে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি।
কমর উদ্দিনের মা জমেলা বেগম জানান, ছেলে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো, আর ফেরেনি। তার বুকে-পিঠেসহ গোটা শরীরেই বুলেট বিদ্ধ ছিল। ছেলে আর ফিরবে না। ভাতও খাওয়াবে না। এখন কিভাবে জীবন চলবে সেই চিন্তায় অশ্রুসিক্ত হচ্ছেন বারবার।
কমর উদ্দিনের বড় মেয়ে বিবাহযোগ্য, তাকে বিয়ে দিতে হবে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন কী হবে, সেই চিন্তায় অস্থির দশা তাদের।
সূত্র : বাসস