১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় গণহত্যায় মিসরীয় সৈন্যের কান্না

গাজায় গণহত্যায় মিসরীয় সৈন্যের কান্না - ছবি : সংগৃহীত

গত অক্টোবর থেকে ইসরাইলি সৈন্যরা যখন গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন মিসরীয় সৈনিক মোহাম্মদ ওমর নিজেকে অসহায় অনুভব করছেন।

২৩ বছর বয়স্ক ওমর মিসরের উত্তর সিনাইয়ে টহল দেয়ার দায়িত্ব পালন করছেন। গাজার রাফা সীমান্তও তার টহল সীমার মধ্যে রয়েছে। মিসর ও ইসরাইলের মধ্যকার নিরাপত্তা চুক্তি অনুযায়ী এটি অসামরিক এলাকা। এখানে সৈন্যরা কেবল হালকা অস্ত্র হাতে রাখতে পারবে।

তিনি পোর্ট সৈয়দে অবস্থানকালে মিডিল ইস্ট আইকে বলেন, 'আপনি সাহায্য করতে পারেন, কিন্তু হাত-পা বাঁধা থাকায় যখন তা করতে পারেন না, তখন কষ্ট লাগবে। আপনার লোকজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, অথচ আপনি সাহায্য করতে পারছেন না।' মিসরের সৈন্যদের উত্তর সিনাইয়ে মোতায়েনের আসে পোর্ট সৈয়দে বিশ্রামে রাখা হয়। সেখানেই তিনি মনের কথাগুলো বলেন।

ওমর বলেন, 'রাফায় ইসরাইলি বোমা হামলা আমরা দেখছি, এর তীব্রতা অনুভব করছি। অনেক ফিলিস্তিনি পরিবারকে সীমান্ত ত্যাগ করতে দেখেছি।'

গাজায় ইসরাইলি হামলায় ইতোমধ্যে ৩৭ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। এদের বেশিভাগই নারী ও শিশু।

১৯৭৯ সালের চুক্তির আলোকে মিসর হলো ইসরাইলের মিত্র। ফলে তাকে ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাতে যাওয়ায় সমস্যা আছে। এমনকি ইসরাইলি বাহিনী যখন কৌশলগত রাফা ক্রসিং দখল করে, মিসরের দুই সৈন্যকে হত্যা করে, তখনো মিসর নীরব থাকে।

ওমর মিডল ইস্ট আইকে বলেন, 'আমরা দিন-রাত প্রশিক্ষণ নেই, জায়নবাদী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করারশপথ নেই। আমাদের সামরিক বাহিন কতটা প্রস্তুত, তার গর্ব করার মতো বিবরণ নিউজলেটারে পড়ি। কিন্তু শত্রু যখন আমাদের ভাইদের হাজারে হাজারে হত্যা করে, তখন আমরা অলসভাবে বসে থাকি।'

মিডল ইস্ট আই ওমরসহ পাঁচ মিসরীয় সৈন্যের সাথে সাক্ষাত করেছে। তাদের বেশিভাগই সরকার যেভাবে গাজা যুদ্ধে সাড়া দিচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। ইসরাইল যেভাবে গাজার লোকজনকে হত্যা করছে, তা মেনে নিতে পারছে না।

ওমর এবং তার সহকর্মীরা 'এলিট যোদ্ধা' হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা যেকোনো কঠোর পরিস্থিতিতে, অত্যাধুনিক অস্ত্রে যুদ্ধ করতে দক্ষ। কিন্তু তা কোনোই কাজে লাগছে না।

এমনকি ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত দুই সৈন্যকে ন্যূনতম সম্মান জানানো হয়নি। আবদাল্লাহ রামাদান এবং ইব্রাহিম ইসলাম আবদেল রাজ্জাক নামের ওই দুই সৈনিককে তাদের গ্রামে দাফন করা হয়। তাদেরকে সামরিক অভিবাদন দেয়া হয়নি, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

ওমর বলেন, তার ইউনিটের মনোবল বেশ নাজুক হয়ে গেছে সহকর্মী রামাদানের মৃত্যুতে। ওমর তখন ভিন্ন একটি প্লাটুনে কাজ করছিলেন। তিনি মনে করেন, ওই ঘটনায় সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল অসম্মানজনক।

আহমদ তৌফিকের অবস্থাও একই রকম। ২৪ বছর বয়স্ক এই সৈনিক ইসমাইলিয়ায় মেকানাইজড ইনফ্রেন্ট্রিতে কাজ করেন। তিনি বরেণ, মিসর চাপ দিচ্ছে যুদ্ধবিরতির। কিন্তু নেতানিয়াহু সরকার মিসরকে যুদ্ধে টেনে আনতে চাইছে। তারা আরব ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে।

তৌফিক এবং ওমর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তারা যদি বর্তমানের কূটনৈতিকভাবে জটিল পরিস্থিতিতে মারা যান, তবে তাদের মৃত্যু কোনো হিসাবেই আসবে না। তিনি বলেন, ‌'আমি মারা গেলে আমার রক্ত বৃথা যাবে। রামাদান মারা গেল। কিন্তু তাকে রক্ষার জন্য একটি গুলিও বর্ষণ করা হয়নি।

তৌফিক বলেন, তার ইউনিটের মনোবল ভেঙে পড়েছে। সৈন্যরা একই ধরনের ভয়ের মধ্যে আছে।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার অনেক পথ আছে। কিন্তু মিসরের সামরিক বাহিনী বলছে, যুদ্ধ কোনো জবাব নয়।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই


আরো সংবাদ



premium cement