৪ ইসরাইলি বন্দী উদ্ধার অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত! হত্যা করা হয়েছে ২১০ ফিলিস্তিনিকে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ জুন ২০২৪, ০৬:৪২
গাজার নুসারাত এলাকায় শনিবার চার ইসরাইলি বন্দীকে উদ্ধারের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত ছিল বলে অভিযোগ ওঠেছে। 'দিনের বেলায় জটিল ওই অভিযানে' ২১০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এটা গাজায় অন্যতম নৃশংস গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াশিংটনভিত্তিক অ্যাক্সিয়সকে বলেন, বন্দীদের উদ্ধারে ইসরাইলে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেল সহায়তা করেছে।
পরে সিএনএনের খবরে বলা হয়, ৭ অক্টোবর থেকেই আমেরিকান সেলটি ইসরাইলে অবস্থান করছে। এই সেল তথ্য সংগ্রহ করে ইসরাইলকে সহায়তা করছে।
সংবাদ সংস্থাটি জানায়, 'ঘটনাটির সাথে জড়িত একটি সূত্র' জানিয়েছে যে শনিবারের অভিযানের সময় 'মার্কিন কোনো সৈন্য ঘটনাস্থলে' ছিল না।
শনিবার এর আগে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা 'নুসারাত এলাকায় সন্ত্রাসীদের একটি অবকাঠামোকে টার্গেট' করেছে।'
গাজার ফিলিস্তিনি সরকার জানায়, মধ্য গাজায় ইসরাইলের ওই হামলায় অন্তত ২১০ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরো ৪০০।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে হতাহত বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি আল-আকসা শহিদি হাসপাতালে এসেছে। এদের বেশিভাগই নারী ও শিশু।
স্থানীয় নিদাল আবদো মিডল ইস্ট আইকে বলেন, 'দখলদাররা নুসরাত উদ্বাস্তু শিবির' নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। নিরীহ ও নিরস্ত্র লোকজনকে তাদের বাড়িঘরে বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের কিছু আমি আগে দেখিনি। এটি একটি বিপর্যয়।'
তিনি বলেন, 'আমি হেঁটে ক্যাম্প থেকে এখানে এসেছি। কিভাবে পালিয়েছি, তা বলতে পারব না। আমি পালানোর সময় শিশুদের লাশ, ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ দেখেছি। আমি পশুটানা গাড়িতে এক বৃদ্ধের লাশ দেখিছি।'
তিনি বলেন, 'নুসারাত নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। এটি এখন নরকে পরিণত হয়েছে।'
উদ্ধার করা চার ইসরাইলি বন্দী হচ্ছেন নোয়া আরগামানি, আলমগ মেইর জান, আন্দ্রে কাজলভ এবং শলমি জিভ। তাদের সবার স্বাস্থ্য ভালো ছিল বলে জানা গেছে। গত ৭ অক্টোবর সুপারনোভা মিউজিক উৎসব থেকে হামাস তাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার নিন্দা করেছে হামাস।
গাজা থেকে চার পণবন্দীকে ইসরাইলের উদ্ধারের ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তারা জানিয়েছে, এই উদ্ধার সত্ত্বেও ইসরাইলের 'কৌশলগত ব্যর্থতায়' কোনো পরিবর্তন হবে না।
হামাস তার অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতিতে জানায়, চার পণবন্দরি মুক্তি 'গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কৌশলগত ব্যর্থতার কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না।'
হামাস আরো জানায়, 'প্রতিরোধ আন্দোলন এখনো বিপুলসংখ্যক বন্দীকে ধরে রেখেছে এবং তারা এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে।'
ফিলিস্তিনি গ্রুপটি জানায়, এই ইসরাইলি অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছিল বলে খবর প্রকাশিত হওয়ায় 'আরেকবার' প্রমাণিত হলো যে অবরুদ্ধ এই উপকূলীয় ছিটমহলে চলমান 'যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাষ্ট্রের সায় আছে এবং পুরোপুরিভাবে জড়িত।'
এর আগে গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে বন্দী তাদের চার নাগরিককে উদ্ধারের কথা জানায় ইসরাইল। অবরুদ্ধ গাজায় আক্রমণ ও বোমাবর্ষণ বৃদ্ধির মাঝে এ দাবি করে হামলাকারী ইসরাইল।
শনিবার এ ঘোষণা এলো, যখন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর গাজা ও অন্যান্য জনবহুল এলাকায় ইসরাইলের নজিরবিহীন হামলায় বহু হতাহত হয়েছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজায় এখনো তাদের ১২০ জন নাগরিক বন্দী আছে। তাদের মধ্যে ৪১ জন মারা গিয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ সেনাবাহিনীর।
গত ৭ অক্টোবর থেকে অভিযান চালানোর পর থেকে এটাই তাদের বন্দী উদ্ধারের সবচেয়ে বেশি সংখ্যা। এ নিয়ে জীবিত বন্দী উদ্ধারের সংখ্যা দাঁড়ালো সাতজনে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৬ হাজার ৮০১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো অন্তত ৮৩ হাজার ৬৮০ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা রয়েছে আরো কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি। ধারণা করা হচ্ছে তারা আর বেঁচে নেই।
ইসরাইলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৪০ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে এবং ২৪০ জনকে হামাস বন্দী করে এনেছে বলে জানা গেছে।
তবে ইসরাইলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে হামাস ইতোমধ্যে ইসরাইলি বন্দীদের প্রায় অর্ধেককে মুক্তি দিয়েছে।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় করা স্বল্প সময়ের এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই এবং আল জাজিরা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা