বিমান হামলায় ভুল স্বীকার করেই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা নেতানিয়াহুর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ মে ২০২৪, ১২:৩৪
রাফায় রোববার ইসরাইলি বিমান হামলায় বহু হতাহতে নিন্দার মধ্যেই ফিলিস্তিনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পুনরায় ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রোববারের ওই হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছে। যাতে আরো শতাধিক মানুষ গুরুতরভাবে আগুনে পুড়ে গেছে, হাত পা ভেঙে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালে।
ইসরাইলের পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামলাটি ছিল একটি দুঃখজনক ভুল। আমরা লক্ষ্য অর্জনের আগে আমি যুদ্ধ শেষ করতে চাই না।’
তিনি বলেন, ইসরাইল বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সতর্কতা নিয়েছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিরীহ মানুষদের ক্ষতি না করতে তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার সময় হামাসের হাতে পণবন্দী ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি ব্যর্থ হওয়ায় ইসরাইলিদের অনেকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘রাফাহ থেকে আমরা ইতোমধ্যে প্রায় এক মিলিয়ন বেসামরিক বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছি এবং তাদের ক্ষতি না করার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, দুর্ভাগ্যবশত কিছু দুঃখজনকভাবে ভুল হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি এবং এটি নিয়ে একটা সমাধানে পৌঁছাতে চাই। কারণ এটা আমাদের নীতি।’
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জোর দিয়ে বলেছে, ইসরাইলকে গত সপ্তাহে রাফাহতে হামলা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত যে রায় দিয়েছে তার প্রতি সম্মান করা উচিত।
ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বোরেল এই বিমান হামলাকে ‘ভীতিকর’ বলে বর্ণনা করেন।
ইসরাইল রাফায় আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা পুনরায় দিয়েছে, কর্মকর্তারা তার পক্ষে দাবি করছেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই তাদের অভিযান চালানোর সুযোগ রয়েছে।
তবে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এই হামলা প্রমাণ করে ইসরাইল সেই আগের পদ্ধতিতেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে এরই মধ্যে অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।’
গত জানুয়ারির পর রোববার প্রথমে তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হামাস। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাফাহতে পাল্টা হামলা চালায় ইসরাইল।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, রাফাহ হামলায় হামাসের দুই সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়েছেন এবং তারা ওই এলাকায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করছে।
তবে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, রাফাহ কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে তাল আল-সুলতানে বাস্তুচ্যুতদের জন্য নির্মিত জাতিসঙ্ঘ পরিচালিক বেসামরিক সহায়তার তাবু লক্ষ্য করে এই হামলাটি চালানো হয়।
প্রথমে বড় বিষ্ফোরণ ও পরে তীব্র আগুন জ্বলতে দেখা গেছে তাল সুলতান এলাকার একটি ভিডিওতে।
মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বলছে, এ বিমান হামলার পর নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছে, তাদের অনেকেই চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।
সেখানে আরো ১৮০ জনের চিকিৎসা চলছে, যাদের বেশিভাগই বোমায় স্প্রিন্টারবিদ্ধ, ভাঙা হাত পা ও আঘাতজনিত পোড়ায় ভুগছে।
লক্ষ্যবস্তু ভুল ছিল বলে ইসরাইল যে বক্তব্য দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করে মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বলছে, হামলাটি সুনির্দিষ্ট ছিল। কথিত নিরাপদ রাফাহতে একটি জনবহুল ক্যাম্পে চালানো আক্রমণ প্রমাণ করছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন তাদের কাছে মূল্যহীন।
এই চিত্রকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘হুদয় বিদারক’ বলছে। তবে তারা এটাও বলেছে, ইসরাইলেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, ‘হামাসকে প্রতিহত করার অধিকার আছে ইসরাইলের। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এই হামলায় হামাসের দুই সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়েছে, যারা ইসরাইলি বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলার জন্য দায়ী।’
তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, ইসরাইলকে অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রোববার রাফাহর ওই হামলায় কী ভুল হয়েছে তা খুঁজে বের করতে ইসরাইলি কর্মকর্তারা সোমবারের বেশিভাগ সময় পার করেছেন। তারা বুঝতে চেয়েছেন যে একটি নির্ভুল হামলায় কিভাবে এত আগুন ধরে আর এত প্রাণহানিও বা কেন হলো।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গত সপ্তাহে একটি রায়ে ইসরাইলকে রাফাহ এলাকায় যে কোনো ধরনের অপারেশন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, ইসরাইলের এই হামলা ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষকে আরো ক্ষতি করতে পারে।
রোববারের ওই বিমান হামলাটি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল এই হামলায় হামাসের অনেক নেতাই মারা যাবে।
কিন্তু এতে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক মারা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এর সাথে বিপুল পরিমাণে দাহ্য পদার্থ ছিল। সেটি কিভাবে এলো তা নিয়েই নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ইফাত তোমের ইয়েরুশালমিসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা এই ঘটনার নির্ভুল তদন্তের কথা বলেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব শিগগিরই আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা আশা করতে পারি।’
রোববারের হামলাকে নেতানিয়াহু রাফাহতে ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু ভুল লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পরও তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি।
আগের রাতের ভয়ঙ্কর ঘটনার পরও ইসরাইলি স্থল বাহিনী এখনো রাফাহ শহরের কাছাকাছি অবস্থান করছে। তবে এখন তারা কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করছে। স্থল বাহিনীর এই অভিযানে কোনো রক্তপাত ঘটেনি।
কিন্তু রোববারের বিমান হামলায় ইসরাইলের ভাবমূর্তিকে আরো ক্ষুণ্ণ করেছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলে হামলা চালানোর পরই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু হয়। তখন প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫২ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সেই থেকে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা