ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২২ মে ২০২৪, ১০:০২, আপডেট: ২২ মে ২০২৪, ১০:০৮
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার ঠিক পরপরই রোববার ইসরাইলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে।
সোমবার ওই হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং তাদের সহযাত্রীদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের রাষ্ট্রপতির মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ওই দেশের নাগরিকদের কেউ কেউ।
সাম্প্রতিক ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে প্রকাশ্যে সঙ্ঘাত দেখা গেছে।
প্রথমে, সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করা হয়। এরপর এর প্রতিশোধ হিসেবে গত এপ্রিল মাসে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের ওপর হামলা চালায় ইরান।
এই সঙ্ঘাতের মাঝেই ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় কেউ কেউ ইসরাইলকেও সন্দেহ করছে।
তবে এই ঘটনায় তাদের হাত থাকার কথা অস্বীকার করে এসেছে ইসরাইল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে প্রকাশ না করার শর্তে এক ইসরাইলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইব্রাহিম রইসির হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ার ঘটনায় ইসরাইল জড়িত নয়।
তবে ইসরাইল সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ
ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ার ঘটনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকেই দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এই হৃদয়বিদারক এই ঘটনার অন্যতম কারণ যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে কোনো বিমান বিক্রি করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।’
‘এই কারণে প্রেসিডেন্ট এবং তার সহযোগীদের শহীদ হতে হলো। আমেরিকার এই অপরাধ ইরানের জনগণের স্মৃতিতে এবং ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর ইরানের পক্ষ থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল আমেরিকার কাছ। কিন্তু অভিযোগ করা হচ্ছে ,তাতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার বলেছেন, ‘ইরান সরকার আমাদের সাহায্য চেয়েছিল। ইরান সরকারকে জানানো হয়েছিল যে আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত। যেমনটা আমরা কোনো বিদেশী সরকার সাহায্য চাইলে করে থাকি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লজিস্টিক্সের কারণে আমরা সাহায্য করতে পারিনি।’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে এই বিষয় নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন কি না?
এর জবাবে তিনি জানিয়েছেন, এই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আমেরিকার কোনো ভূমিকা ছিল না।
মার্কিন সেনেটর চাক শুমার সোমবার বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে যে এই ঘটনায় ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই।
ইসরাইলের গণমাধ্যম কী বলছে?
টাইমস অব ইসরাইল তাদের প্রতিবেদন শুরু করেছে একটি বিবৃতি দিয়ে, যেখানে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি রইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার সাথে ইসরাইলের কোনো সম্পর্ক নেই।
এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসরাইলের বিরোধী দলনেতা আভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, রইসির মৃত্যুতে ইসরাইলের নীতির কোনো পরিবর্তন হওয়ার আশা নেই।
তিনি বলেন, ‘এটা (রইসির মৃত্যু) আমাদের কাছে কোনো বিষয় নয়। এটা ইসরাইলের মনোভাবের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। ইরানের নীতি নির্ধারণ করেন সে দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি।’
ওই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপমন্ত্রী এভি মাওজ বলেন, ‘এক মাস আগেও ওরা হুমকি দিয়ে বলেছিল, ইসরাইল আক্রমণ করলে তাদের (ইসরাইলের) নিস্তার নেই। এখন তারা নিজেরাই ইতিহাসের ধুলোকণায় পরিণত হয়েছে।’
টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে এমন অনেকের মন্তব্য উল্লেখ করেছেন যারা ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির মৃত্যুকে ইসরাইলের জন্য 'সুসংবাদ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চিত্র
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ইব্রাহিম রইসির মৃত্যু নিয়ে মিম শেয়ার করছে।
কোনো কোনো পোস্টে লেখা হয়েছে, তার হেলিকপ্টার চালাচ্ছিলেন এলি কোহেন নামের এক মোসাদ অ্যাজেন্ট।
এলি কোহেন ছিলেন একজন ইসরাইলি গুপ্তচর। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন যে সিরিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়া থেকে খুব দূরে ছিলেন না।
বলা হয়, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলের জয়ের পিছনে কোহেনের দেয়া গোয়েন্দা তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ছিল।
সেই এলি কোহেনের নামই এখন উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে।
ইসরাইলের ফরাসি ভাষার চ্যানেল আই-২৪ নিউজের সাংবাদিক ড্যানিয়েল হাইকও 'এলি কপ্টার' প্রসঙ্গ এনে কৌতুকের ছলে সংবাদ হিসাবে উপস্থাপনা করেছিলেন।
কিন্তু দর্শক এর সমালোচনা করলে চ্যানেলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা