১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তুরস্কের ড্রোন যেভাবে রাইসির হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেল

তুরস্কের ড্রোন যেভাবে রাইসির হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেল - সংগৃহীত

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার রোববার ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ অর্থাৎ বিপজ্জনকভাবে অবতরণ করেছে এমন খবর পাওয়ার পর বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারটির খোঁজে কয়েক ঘণ্টা ধরে বন ও পাহাড়ি এলাকায় চিরুনি অভিযান চালায়।

তবে ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির কারণে দুর্ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের দৃষ্টিসীমা মাত্র পাঁচ মিটারে নেমে এসেছিল। এমন অবস্থায় উদ্ধারকারী দলগুলোকে ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হয়।

ইরানি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, রোববার প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজান ও ইরানের সীমান্তে একটি বাঁধ উদ্বোধন করে তার দেশের তাবরিজ শহরের দিকে ফিরছিলেন।

এ সময় ইস্ট আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা অঞ্চলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই সময় হেলিকপ্টারটিতে রাইসির সাথে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরো ছয় আরোহী ছিলেন।

হেলিকপ্টারটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির মধ্যে জোলফায় বিধ্বস্ত হয়। হার্ড ল্যান্ডিংয়ের খবর পেয়ে ইরানের প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক, ইরাক ও আজারবাইজান এগিয়ে আসে এবং সম্মিলিতভাবে ব্যাপক অনুসন্ধান অভিযান শুরু করে।

ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা আইআরএনএ-এর মতে, রেড ক্রিসেন্টের অপারেশন প্রধান রাজিয়া আলিশোন্দি বলেছেন যে খারাপ আবহাওয়ার কারণে তল্লাশি দলের এগিয়ে যেতে অনেক অসুবিধা হয়েছিল।

তিনি বলেন, অনুসন্ধান অভিযানে ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা ছিল রীতিমতো অসম্ভব।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ঘোষণা করে, তারা ইরানের অনুরোধে রাইসির হেলিকপ্টার শনাক্ত করার জন্য কোপার্নিকাস নামে তাদের ম্যাপিং সার্ভিস চালু করেছে। কোপার্নিকাস সিস্টেম ‘স্যাটেলাইট ইমেজের’ মাধ্যমে ম্যাপিং করে।

গভীর রাতে রেড ক্রিসেন্ট সদর দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়, তুরস্কের ড্রোন ‘হটস্পট’ শনাক্ত করেছে। রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডারও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তুরস্কের পাঠানো ড্রোনটি রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছিল। এলাকাটি স্ক্যান করার পর ড্রোনটি একটি ‘থার্মাল সোর্স’ শনাক্ত করে এবং ওই অবস্থানের তথ্য ইরানি কর্তৃপক্ষের সাথে শেয়ার করা হয়।

এটি ছিল তুরস্কের বায়রাকতার আকিনজি মডেলের একটি ড্রোন, যা কয়েক ঘণ্টা অনুসন্ধানের পর সোমবার সকালে উত্তর-পশ্চিম ইরানে প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করে।

এটি একটি সশস্ত্র ড্রোন, যা ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইরানি কর্তৃপক্ষ তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোয় তারা একটি আকিনজি ইউএভি এবং একটি নাইট ভিশন কুগার ড্রোন পাঠায়।

রাইসির হেলিকপ্টারটির অনুসন্ধান অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য ওই দু’টি ড্রোন পাঠানো হয়। এছাড়া অনুসন্ধানে সহায়তায় ৩২ জন পর্বতারোহীর একটি দল এবং ছয়টি উদ্ধারকারী গাড়িও পাঠানো হয়।

তুরস্কের পরিবহন মন্ত্রী আব্দুল কাদির ইউরাউলু বলেন, ‘ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করছিলেন, সেখানে সিগন্যাল সিস্টেম চালু ছিল না বা তেমন কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।’

তিনি বলেন, বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে তুরস্কে একটি জরুরি গবেষণা ও সমন্বয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং ইরান সীমান্ত তার আওতার মধ্যে আসে।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা হেলিকপ্টারটির সঙ্কেত খোঁজার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সিগন্যাল সিস্টেম সম্ভবত বন্ধ ছিল বা হেলিকপ্টারটিতে সেই সিগন্যাল সিস্টেম ছিল না। এ জন্য আমরা তাদের কোনো সন্ধান পাইনি।’

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা ইরান থেকে একটি কল পেয়েছেন, যাতে হেলিকপ্টারের সঙ্কেত শনাক্ত করার জন্য সাহায্যের অনুরোধ করা হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সঙ্কেত খোঁজার চেষ্টা করেছি (যেটা আমরা কোনো অনুরোধ পেলেই করি)। কিন্তু আমরা কোনো সঙ্কেত পাইনি।’

ড্রোনটির বৈশিষ্ট্য কী এবং কিভাবে হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়

  • বায়রাকতার আকানসি কিভাবে রাইসির হেলিকপ্টারটির অবস্থান শনাক্ত করেছিল তা জানতে ড্রোনটির বৈশিষ্ট্যগুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ।
  • বায়রাকতার আকানসি হল সর্বশেষ সশস্ত্র ড্রোন যা তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থা-বায়কার ডিফেন্স তৈরি করেছে।
  • বায়রাকতার ড্রোনের নির্মাতা বায়কারের নেতৃত্বে রয়েছেন দুই ভাই- প্রধান নির্বাহী হালুক বারাকতার এবং তার ভাই প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সেলজুক বারাকতার। যিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের মেয়েকে বিয়ে করেছেন।
  • প্রতিরক্ষা সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুসারে, বায়রাকতার আকিনজি একটি কৌশলগতভাবে উচ্চমানের প্রযুক্তি। এর অনন্য কাঠামো এবং পাখার ডিজাইনের কারণে এটি বিভিন্ন পেলোড বহন করতে সক্ষম।
  • বায়রাকতার আকিনজিতে রয়েছে দু’টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এভিওনিক্স যা সিগন্যাল প্রসেসিং, সেন্সর ফিউশন এবং রিয়েল-টাইম পরিস্থিতিগত সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে।
  • এই ড্রোনটি বায়রাকতার টিবিটু ড্রোন ট্যাকটিকাল ইউএভির আরেকটি সংস্করণ। তবে এটি তার শ্রেণীর সবচেয়ে শক্তিশালী ইউএভিগুলোর মধ্যে একটি। এটি ছয় হাজার কেজি পর্যন্ত ওজন তোলার ক্ষমতা আছে এবং এটি ২৪ ঘণ্টা এবং ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় একযোগে উড়তে পারে।
  • ড্রোনটিতে দু’টি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন এবং ২০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ডানা রয়েছে। যার কারণে এটি বিস্তৃত পরিসরে অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় শক্তি পায়।
  • এয়ার-টু-গ্রাউন্ড এবং এয়ার-টু-এয়ার অর্থাৎ আকাশ থেকে মাটিতে এবং আকাশ থেকে আকাশে হামলার জন্যও এই ড্রোন ব্যবহার করা যায়।
  • এই উচ্চ প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন ড্রোনটি মূলত ফাইটার জেটকে সহায়তা করার জন্য এবং বিভিন্ন অভিযান পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
  • এটি এমন একটি ড্রোন যার মধ্যে ডুয়েল স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম, এয়ার-টু-এয়ার রেডার, ইলেকট্রনিক সাপোর্ট সিস্টেম, অ্যান্টি- কোয়ালিশন রেডার এবং সিনথেটিক অ্যাপারচার রেডার প্রযুক্তি রয়েছে।
  • ড্রোনটি যে সংস্থা তৈরি করেছে তাদের মতে, একটি ফাইটার জেট যা করতে পারে এই ড্রোনটি তার সবই করতে পারে।
  • এর দিক নির্দেশনা বা ন্যাভিগেশন সিস্টেমটি অভ্যন্তরীণ সেন্সর ফিউশন ব্যবহার করে। তাই এর কোনো কিছু খুঁজে বের করতে বা অবস্থান শনাক্ত করতে জিপিএসের প্রয়োজন নেই।
  • তুরস্কের ড্রোন প্রযুক্তি সক্ষমতার ক্ষেত্রে বারাকতার অ্যাকশন ড্রোন বড় ধরনের অগ্রগতি বলে ধরা হয়।

এর প্রস্ততকারকের একজন কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে জানান, আকিনজির অনেক উঁচুতে ওড়ার সক্ষমতা রয়েছে। একই সাথে এর থারমাল টেকনোলজি রয়েছে যার মাধ্যমে হটস্পট শনাক্ত করা গেছে।

এসব সক্ষমতা থাকার কারণে ড্রোনটি প্রতিকূল আবহাওয়ায় এবং ঘন কুয়াশার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছে।

তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদৌলু অ্যাজেন্সি জানায়, রোববার রাত ৮টায় ইরানের কাছ থেকে সাহায্যের অনুরোধ আসে, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এরপরে কুগার ড্রোনটি অবিলম্বে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দিয়ারবাকির থেকে ইরানের সীমান্তবর্তী ভ্যান প্রদেশে চলে যায়।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের এই ড্রোন ব্যবহারের জন্য রাত ১০টা ২০ মিনিটে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে অনুমোদন পায়।

ইরানের প্রস্তাব গ্রহণ করার পর তুরস্কের এই ড্রোনটি তুরস্কের পূর্ব ব্যাটম্যান প্রদেশ থেকে রাত সাড়ে ১১টায় উড্ডয়ন করে।

ড্রোনটি প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩৬১ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এবং কম গতিতে এটি পুরো এলাকা স্ক্যান করতে পারে।

তুরস্কের শহর ভ্যান থেকে ইরানের সীমান্ত অতিক্রম করে সোমবার রাত পৌনে ১টায় এটি দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

স্থানীয় সময় আনুমানিক রাত ২টা ৩৬ মিনিটে আকানসি প্রথম হিট সিগন্যাল অর্থাৎ উত্তপ্ত কিছু আছে এমন সঙ্কেত পায় এবং তথ্যটি অবিলম্বে ইরানি কর্তৃপক্ষের জানানো হয়।

এরপর উদ্ধারকর্মীরা স্থানীয় সময় ভোর ৬টার দিকে ধ্বংসস্তূপে পৌঁছায়।

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এএ জানান, ফ্লাইটরেডার২৪ অ্যাপ্লিকেশনে লাখ লাখ মানুষ সরাসরি ড্রোনের রুট দেখেছে। একই সংস্থা ওই ড্রইংয়ের একটি ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে।

তুরস্কের ড্রোন যুদ্ধে একটি ‘গেম চেঞ্জার’
তুরস্ক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ড্রোন উৎপাদনে বেশ প্রসিদ্ধ এবং তারা এই শিল্পের বিকাশে মনোনিবেশ করছে।

প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের জামাতা ড্রোন শিল্পের সাথে জড়িত এবং তিনি দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগে কাজ করেন।

তুরস্ক ২০১৯ সাল থেকে ইউক্রেনের কাছে বেশ কয়েকটি বায়রাকতার টিবিটু সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করেছে। মূলত তুরস্কের ড্রোন বিশ্বজুড়ে অনেক সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

তুরস্কের এক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এরদা মোলুদৌলু বলেন, ‘আঙ্কারা সরকার গত ১০ বছরে উল্লেখ করার মতো শক্তিশালী ড্রোন বাহিনী তৈরি করেছে। তারা তুরস্কের অভ্যন্তরে এবং সীমান্তের ওপারে (১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে) নিরাপত্তা অভিযানে কার্যকরভাবে তাদের ড্রোন ব্যবহার করছে।’

তিনি বলেন, দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়নে ড্রোন প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পরিচালনা ও উৎপাদন ক্ষমতার দিক থেকে তুরস্ক ইসরাইল ছাড়াও এই অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

তুরস্কের ড্রোন নির্মাতাদের সম্পর্কে যা জানা গেছে
তুরস্কে দু’টি প্রধান ড্রোন (ইউএভি) প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বায়কার ডিফেন্স কোম্পানি বায়রাকতার টিবিটু এবং বারাকতার আকানজি ড্রোন তৈরি করে। যার চাহিদা বেশি।

কোম্পানির চিফ টেকনিক্যাল অফিসার সেলজুক বারাকতারের সাথে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। কারণ তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের জামাতা।

অন্য আরেকটি প্রধান ড্রোন প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান হলো তুর্কি অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ, যা ‘টিএআই ইনকা’ এবং ‘টিএআই আকসাঙ্গুর’ মডেলের ড্রোন তৈরি করে।

বিশ্লেষক এরদা মোলুদৌলুর মতে, তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের তৈরি ১৫০টিরও বেশি ড্রোন পরিচালনা করে।

এছাড়াও তারা বিপুল সংখ্যক ছোট নজরদারি ড্রোন ব্যবহার করে।

কোন কোন দেশে তুরস্কের তৈরি ড্রোন আছে?
ড্রোন বিক্রির ক্ষেত্রে, তুরস্কে গ্রাহকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। দেশটির রফতানি পরিসংখ্যানে তার বাণিজ্যিক চুক্তিতে বিক্রি হওয়া ড্রোনের সঠিক সংখ্যার কোনো নির্দিষ্ট উল্লেখ নেই।

তবে ১৫টিরও বেশি দেশ তুরস্কের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র এবং টিআই ড্রোনের অর্ডার দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বায়রাকতার টিবিটু ড্রোন সিরিয়া এবং লিবিয়ার সঙ্ঘাতে কার্যকর এবং দক্ষ বলে প্রমাণিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি নাগোর্নো-কারাবাখের সঙ্ঘাতে এই ড্রোন ব্যবহার হয়েছে।

তারপর থেকে এই ড্রোনের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে সাম্প্রতিক লড়াই বেশ কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে। আজারবাইজানি বাহিনী তুরস্কের-নির্মিত ড্রোন আর্মেনিয়ান সৈন্য, সামরিক যান, কামান এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে।

এতে কিছু বিতর্কিত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

২০২১ সালে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা তুরস্ক থেকে ২৪টি সশস্ত্র ড্রোন কিনবে।

আফ্রিকাও তুর্কি ড্রোনের একটি বড় বাজার।

বাংলাদেশও ২০২২ সালে জানায়, বায়রাকতার ড্রোন কেনার বিষয়ে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছে সেনাবাহিনী।

এরদা মোলুদৌলু বলেন, ‘তুরস্ক চীনা নির্মাতাদের জন্য প্রধান প্রতিযোগী হয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে আফ্রিকান বাজারে। তুরস্কের স্বল্পমূল্যের সশস্ত্র ড্রোনগুলো গুণমান বিবেচনায় নেটো স্ট্যান্ডার্ড পারফরম্যান্সের।’

মরক্কো, আলজেরিয়া, রুয়ান্ডা, নাইজেরিয়া এবং ইথিওপিয়া তুরস্কের তৈরি ড্রোনের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে ইথিওপিয়ার কাছে ড্রোন বিক্রি করায় আপত্তি তুলেছে মার্কিন কর্মকর্তারা।

তবে তুরস্ক তার সামরিক হার্ডওয়্যার বিক্রির জন্য নতুন বাজারের সন্ধান করতে পারে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মোলুদৌলু বলেন, ‘ড্রোন বিক্রির ফলে তুরস্ক বিভিন্ন দেশের সাথে অব্যাহতভাবে সামরিক-শিল্প সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে, যার ফলে তুরস্ক ড্রোন গ্রহণকারী দেশে এবং তার আশপাশে তার সামরিক উপস্থিতি তৈরি করতে পারবে।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement