ইরানের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টকে ফোনে যা বললেন পুতিন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ মে ২০২৪, ১৯:৫০, আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ১৯:৫৬
ইরানের সদ্য দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফোন করেছেন বলে জানা গেছে।
ফোনালাপে ইব্রাহিম রাইসিকে একজন ‘নির্ভরযোগ্য অংশীদার’ বলে অভিহিত করেন পুতিন।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, দুই নেতা ‘রাশিয়া-ইরানের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে পারস্পরিক মনোভাব’ ব্যক্ত করেন।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার হামলার সময় থেকেই মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহযোগী হয়ে উঠেছে ইরান।
এর আগে, ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে শোক জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাইসিকে একজন ‘অসাধারণ রাজনীতিবিদ’ এবং ‘রাশিয়ার সত্যিকারের বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।
বার্তাসংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে, পুতিন বলেন যে রাইসি তার সমগ্র জীবন দেশের সেবায় এবং ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নে’ উৎসর্গ করেছিলেন।
২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর সময় থেকেই ইরান রাশিয়ার প্রধানতম মিত্রদের একটি হয়ে ওঠে।
শোক জানিয়েছেন ইরানের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
জিনপিং রাইসিকে চীনের জনগণের ‘ভালো বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যাচ্ছে, রাইসির ‘দুঃখজনক মৃত্যকে’ ইরানের জনগণের জন্য ‘বিশাল ক্ষতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট।
ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন। নিষেধাজ্ঞারে আওতায় থাকা ইরানের জ্বালানি তেলের অন্যতম প্রধান ক্রেতাও দেশটি।
এর আগে, রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টার দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
এরপর ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ও তার সাথে থাকা লোকজন। এরপর সোমবার সকালে একটি ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, হেলিকপ্টারটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপরই উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে ভ্রমণ করছিলেন রাইসি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী শহর জোলফার কাছে বিমানটি বিধস্ত হয়েছে। তবে পরে বলা হয়, এটি উজি গ্রামের কাছে আরো পূর্ব দিকে।
রাইসির সাথে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান, ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নরসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও দেহরক্ষীরা ছিলেন।
সোমবার সকালে, তুর্কি কর্তৃপক্ষ একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করেছিল। এতে বলা হয়েছে, জঙ্গলে আগুন দেখা গেছে। আর এটি ‘হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ বলে সন্দেহ করছে’। ফুটেজে দেখা গেছে, আজারবাইজান-ইরান সীমান্তের প্রায় ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) দক্ষিণে একটি খাড়া পাহাড়ের পাশে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ভাহিদি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গীরা কয়েকটি হেলিকপ্টারে করে ফিরছিলেন কিন্তু খারাপ আবহাওয়া ও কুয়াশার কারণে একটি হেলিকপ্টার জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়।’
দুর্ঘটনার পর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছিলেন, যাই হোক না কেন ইরান সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রেসিডেন্ট মারা গেলে ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, খামেনির সম্মতিক্রমে ভাইস ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবেন। ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, রাইসির অনুপস্থিতিতে দেশটির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার এরই মধ্যে দেশটির কর্মকর্তা ও বিদেশী সরকারের কাছ থেকে ফোন পেয়েছেন।
৬৩ বছর বয়সী রাইসি এর আগে দেশের বিচার বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে খামেনির একজন অনুসারী হিসেবে দেখা হয়। কিছু বিশ্লেষক মনে করতেন, খামেনির মৃত্যু বা অবসর গ্রহণের পরে ৮৫ বছর বয়সী এ নেতার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন রাইসি।
রোববার ভোরে আজারবাইজান সীমান্তে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথে একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রাইসি। আরাস নদীর ওপর দুই দেশের নির্মিত তৃতীয় বাঁধ এটি। ২০২৩ সালে তেহরানে আজারবাইজান দূতাবাসে বন্দুক হামলা এবং ইসরাইলের সাথে আজারবাইজানের কূটনৈতিক সম্পর্কসহ দুই দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এই সফর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যাকে ইরানের শিয়া মতাদর্শের অনুসারীরা এই অঞ্চলে তাদের প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে।
ইরানের ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাইসি জয়ী হন, যে ভোটে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল। ১৯৮৮ সালে রক্তক্ষয়ী ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দীর মৃত্যুদণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রাইসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
রাইসির অধীনে ইরান এখন প্রায় উইপন-গ্রেড স্তরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের ক্ষেত্রে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইরান দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনকে তার সহযোগীরা ব্রিফ করেছেন। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে যা প্রকাশিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি কিছু জানতে পারেননি।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স