১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নাকাবা দিবস : আরো বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি ফিলিস্তিনিরা

১৯৪৭ সালের ১৫ মে এভাবেই ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা হয় - ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নাকবা। ১৫ মে ১৯৪৮ সালে প্রায় সাত লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইসরাইল নামে ইহুদি-সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দিনটি পরবর্তীকালে বার্ষিকভাবে নাকবা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এরপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের স্বাধিকার লড়াই চলছে। এ বছর নাকবার ৭৬তম বার্ষিকী।

আরবি ভাষায় ‘নাকবা’ শব্দের অর্থ ‘বিপর্যয়’। এটি ১৯৪৭-১৯৪৯ সালের মধ্যে ইহুদিবাদী আধাসামরিক বাহিনীর দ্বারা ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশকে পদ্ধতিগতভাবে জাতিগত নির্মূল এবং ফিলিস্তিনি সমাজের প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসকে বোঝায়। ইহুদিবাদী বাহিনী ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের ৭৮ শতাংশেরও বেশি দখল করেছে, জাতিগতভাবে প্রায় ৫৩০টি গ্রাম ও শহর ধ্বংস করেছে এবং ৭০টিরও বেশি হত্যাযজ্ঞসহ ধারাবাহিক নৃশংসতা চালিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

আজ আল-নাকবার ৭৬তম বার্ষিকী। ফিলিস্তিনিরা মনে করছেন, নাকবার ইতিহাস যেন আরও ভয়াবহভাবে তাঁদের জীবনে ফিরে এসেছে। সাত মাস পেরিয়ে গেছে, গাজায় প্রতিদিনই ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা চলছে। প্রাণ গেছে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের। বেশির ভাগই নারী-শিশু। গাজার সড়কে এখন গাড়ি, গাধা, গাধায় টানা গাড়ির ভিড় লেগে আছে। সবাই ছুটছেন। কোথায় গেলে মাথা গোঁজা যাবে, একটু নিরাপত্তা পাওয়া যাবে, এই আশ্রয়ের প্রত্যাশায় সবাই।

গাজার সড়ক ধরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলা মানুষের রঙিন ছবিগুলো যেন নকবার কথাই মনে করিয়ে দেয়। ওই সময়ের সাদা-কালো ছবিগুলোর সঙ্গে এখনকার ছবির অনেক মিল।

সাত মাসের যুদ্ধে গাজায় প্রায় ১৭ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। এটা গাজার মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মুখে কেউ একবার, কেউবা একাধিকবার জায়গা বদল করেছেন। নিরাপদ আশ্রয় যেন অধরাই রয়ে গেছে। নাকবার সময় যত মানুষ ঘর হারিয়েছিলেন, এবারের সংখ্যাটা তার থেকে দ্বিগুণের বেশি।

সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। তাই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। মিসর অল্প কিছু ফিলিস্তিনিকে গাজা ছাড়ার সুযোগ দিয়েছে, দিচ্ছে। বাকিদের গাজার ভেতরেই এক জায়গা থেকে অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে। ফলে গাজাজুড়ে চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

নতুন করে দীর্ঘমেয়াদি শরণার্থী সংকটের ভয়ে আছে মিসরসহ প্রতিবেশী দেশগুলো ও সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সতর্ক করে দিয়েছে। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের গণবিতাড়নের যেকোনো পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ইসরায়েল সরকারের চরম ডানপন্থী অংশ এমন পরিকল্পনা করছে। এটাকে ‘স্বেচ্ছায় অভিবাসন’ বলছে তারা।

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, ১৯৪৮ সালে যেসব ফিলিস্তিনি ভিনদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের উত্তরসূরিসহ সেসব দেশেই থাকতে দিতে হবে। এসব মানুষের ফিরে আসাটা ‘বাস্তবসম্মত’ হবে না। তাঁদের ফিরে আসার যেকোনো চেষ্টা ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে।

সূত্র : আল জাজিরা ও অন্যান্য


আরো সংবাদ



premium cement