আল-জাজিরার অফিসে ইসরাইলি পুলিশের হানা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ মে ২০২৪, ১৪:২৩
ইসরাইলি পুলিশ রোববার একটি হোটেল ঘরে হানা দেয়, যেটা কাতার-মালিকানাধীন আল-জাজিরা টেলিভিশন স্টেশনের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ইসরাইলি কর্মকর্তা এবং আল-জাজিরার সূত্র রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, টেলিভিশন নেটওয়ার্ক-এর স্থানীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে ইসরাইলের সিদ্ধান্তের পর অফিসে পুলিশের অভিযান চালানো হয়।
আল-জাজিরার এক সূত্র মতে, সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা ভিডিওতে পূর্ব জেরুসালেমের হোটেল রুমে সাদা পোশাকের পুলিশ অফিসারদের ক্যামেরার যন্ত্রপাতি নামিয়ে ফেলতে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে জেরুসালেমে আল-জাজিরার অফিস অনতিবিলম্বে বন্ধ করার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রীসভায় আলোচনার পর এবং আমার নির্দেশনা মোতাবেক, সরকার আজকে ইসরাইলে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা করে।’
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা ঘোষণা দেয় যে- যতদিন গাজায় যুদ্ধ চলবে ততদিন ইসরাইলে আল-জাজিরার কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তারা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছে। মন্ত্রিসভা বলছে, কাতারি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি।
ইসরাইলের যোগাযোগ মন্ত্রী শ্লোমো কারহি আদেশে সাক্ষর করেন।
‘যারা যুদ্ধের সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যবহার করে ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ক্ষতি করে এবং সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেব,’ কারহি এক বিবৃতিতে বলেন।
‘ইসরাইলে হামাসের মুখপাত্রদের জন্য কোনো বাক-স্বাধীনতা থাকবে না। আল-জাজিরা এই মুহূর্তে বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তাদের সরঞ্জাম জব্দ করা হবে,’ বিবৃতিতে তিনি বলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, পদক্ষেপগুলোর মধ্যে থাকবে চ্যানেলকে কেবল এবং স্যাটেলাইট কোম্পানি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং তাদের ওয়েবসাইট ব্লক করা হবে। গাজায় আল-জাজিরার কার্যক্রম নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
আল-জাজিরা এই পদক্ষেপকে একটি ‘অপরাধমূলক কাজ’ বলে অভিহিত করে, ‘যা মানবাধিকার এবং তথ্য পাওয়ার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।’
চ্যানেলটি ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি, ইসরাইলের এই অভিযোগকে আল-জাজিরা ‘হাস্যকর এবং বিপজ্জনক মিথ্যা’ অভিহিত করে বলে, এটা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলবে।
বিশ্বব্যাপী তাদের দর্শকদের জন্য সংবাদ এবং তথ্য পরিবেশন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আল-জাজিরা বলে, ‘যেকোনো আইনগত পদক্ষেপ’ নেবার অধিকার তাদের আছে।
জাতিসঙ্ঘের নিন্দা
চ্যানেলটি গাজা থেকে যুদ্ধের পুরো সময় ২৪ ঘণ্টা ধরে রিপোর্ট করেছে এবং ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেছে।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার দফতর জেরুসালেমে আল-জাজিরা’র অফিস বন্ধের সমালোচনা করেছে।
‘ইসরাইলে আল-জাজিরা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দুঃখজনক,’ তারা সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ বলেছে।
‘স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি মুক্ত এবং স্বাধীন মিডিয়া অপরিহার্য। গাজা থেকে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ির কারণে এটা আরো বেশি প্রয়োজনীয়। বাক-স্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবাধিকার। আমরা এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি,’ পোস্টে বলা হয়।
দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টও ইসরাইলি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তর সমালোচনা করেছে। নিউ ইয়র্কে সিপিজে-র প্রোগ্রাম পরিচালক কার্লোস মারটিনেজ ডে লা সেরনা বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ‘ইসরাইলে কর্মরত আন্তর্জাতিক মিডিয়ার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক উদাহরণ হিসেবে থাকবে।’
‘আল-জাজিরা এবং অন্য সকল আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে ইসরাইলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, বিশেষ করে যুদ্ধের সময়,’ তিনি বলেন।
কাতারের সাথে উত্তেজনা
আল-জাজিরার আরবি সার্ভিসের একজন রিপোর্টার বলেন, এই আদেশ ইসরাইল এবং পূর্ব জেরুসালেমে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে, যেখান থেকে তারা ৭ অক্টোবরের পর প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করে আসছে।
কিন্তু তিনি বলেন, এর ফলে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কোনো প্রভাব পড়বে না।
ইসরাইল সরকারের সিদ্ধান্ত কাতারের সাথে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে এমন সময়ে, যখন কাতার গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। কাতার আল-জাজিরার মালিক।
গত মাসে কাতারি-মালিকানাধিন চ্যানেল অভিযোগ করে, তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য আল-জাজিরাকে লক্ষ্য করে ইসরাইল পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। তারা অভিযোগ করে, ইসরাইল সুনির্দিষ্টভাবে হামলা করে তাদের কয়েকজন সাংবাদিকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে সামির আবু ডাকা ও হামজা আল দাহদুহ ছিলেন যারা দু’জনেই গাজা সংঘাতের সময় মারা গেছেন।
ইসরাইল বলেছে, তারা সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে না।
ইসরাইলের সাথে আল-জাজিরার সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই খারাপ। ইসরাইল অভিযোগ করে, চ্যানেলটি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা