১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা

হামাসের ডেরায় হার্শ গোল্ডবার্গ-পোলিন - ফাইল ছবি

শীর্ণ চেহারা। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। বছর ২৩-এর ইসরাইলি-আমেরিকান যুবক একটি ভিডিওতে জানাচ্ছেন, তার নাম হার্শ গোল্ডবার্গ-পোলিন। ৭ অক্টোবর ইসরাইলের নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে গাজায় বন্দি করে রেখেছে ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাস।

ভিডিওটি প্রকাশ করেছে হামাসই। ভিডিওতে দেখা গেছে, হার্শ বেঁচে রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তার এক হাতের নিচের দিকের অংশ নেই। দেখে মনে হচ্ছে বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। চিৎকার করছেন হার্শ। গলায় যেন কান্না চেপে রাখা। কাটা হাতটা দেখিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইলিরা যে এই অবস্থায় বন্দি রয়েছেন, তাদের উদ্ধারের কোনো চেষ্টাই করছে না বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার।’

গোটা বিষয়টিকে ‘সাইকোলজিক্যাল টেররিজম’ বলে উল্লেখ করেছে ইসরাইল। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, এ ধরনের ভিডিও প্রকাশ করে মানসিক সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে হামাস। উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা ইসরাইল জুড়ে। বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সেখানে এমনিতেই বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। তাতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে এই ভিডিও।

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-সহ আরো ১৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অবিলম্বে বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন- ‘গাজার সাধারণ মানুষ ও সেখানে বন্দি থাকা ইসরাইলিরা এখন গোটা বিশ্বের চিন্তার কারণ। দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি ও বন্দি-মুক্তি নিয়ে যে চুক্তি আলোচনার টেবিলে আটকে রয়েছে, সেটার অগ্রগতিতে জোর দিচ্ছি আমরা। এতে গাজা ভূখণ্ডে ঠিকমতো ত্রাণ ঢুকতে পারবে। সাধারণ মানুষ ঘরে ফিরতে পারবেন। হামাসকেও আমরা বলছি, বন্দিদের মুক্তি দেয়া হোক। এই বিপর্যয়ের শেষ হোক। শান্তি ফিরে আসুক।’

ছয় মাস হয়ে গেল হার্শ গাজায় হামাসের হাতে বন্দি। তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন, তা-ই জানতেন না তার মা-বাবা। ভগ্ন চেহারা, একটা হাত নেই, তা-ও বেঁচে তো আছে ছেলে। হার্শের বাবা জন পোলিনের মুখে সে কথাই শোনা গেছে। তিনি বলেন, ‘তাকে দেখতে পেলাম, ওর গলা শুনতে পেলাম। কিছুটা স্বস্তি লাগছে। ও বেঁচে আছে।’ তার কথায়, ‘আশা করি ভিডিওটা পুরনো নয়। আমাদের বিশ্বাস ও বেঁচে রয়েছে।’

হামাসের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা খালিল আল-হায়া আজ জানিয়েছেন, তারা আগামী পাঁচ বছর কিংবা তারও বেশি সময়ের জন্য অস্ত্র নামিয়ে রাখতে প্রস্তুত। কিন্তু শর্ত হলো, ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্তরেখা মেনে ফিলিস্তিনিদের তাদের দেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। খালিল আরো জানিয়েছেন, তাদের দেশ ফিরিয়ে দেয়া হলে হামাস একটি রাজনৈতিক সংগঠনে পরিবর্তিত হবে।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই প্রথম হামাসের মুখে অস্ত্র সংবরণের কথা শোনা গেল, যা রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ-ও সত্যি, ইসরাইল কোনোভাবেই এই শর্ত মানবে না। তারা মৈত্রী কিংবা শান্তি চুক্তিতেই যেতে চায় না। বরং ইসরাইল ঘোষণা করেছে, দক্ষিণ গাজায় রাফা শহরের দিকে এগোচ্ছে সেনাবাহিনী। রাফায় স্থল-অভিযান শুরু করা হবে। গাজা ভূখণ্ডে এখন সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস রাফায়। এত দিন ইসরাইলি বাহিনীই নির্দেশ দিচ্ছিল, উত্তর ও মধ্য গাজা ফাঁকা করে দিয়ে দক্ষিণের চলে যেতে হবে। তারাই জানিয়েছিল, মিসর সীমান্ত ঘেঁষা রাফা নিরাপদ। কিন্তু তা-ও যে কথার কথা ছিল, সেটা স্পষ্ট। আশঙ্কার প্রহণ গুনছেন সাধারণ মানুষ।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement