১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
অভিযোগ সংস্থা প্রধানের

গাজায় ত্রাণকর্মীদের গাড়িগুলো একে একে টার্গেট করেছিল ইসরাইল

হামলার শিকার গাড়িগুলোর একটি। - ছবি : বিবিসি

ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেজ গাজায় তার সাহায্য সংস্থার কর্মীদের ‘প্রতিটি গাড়িকে সুপরিকল্পিতভাবে' লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ইসরাইলি বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন।

সোমবার হামলা চালিয়ে তার সাতজন কর্মীকে হত্যার ঘটনা সাধারণ কোনো ভুল ছিল না দাবি করে তিনি বলেছেন ইসরাইলি বাহিনীকে বারবার তাদের গতিপথ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল।

ডব্লিউসিকের ফিলিস্তিনি কর্মীদের সাথে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীরাও ইসরাইলের এ হামলায় নিহত হয়েছে।

ইসরাইল অবশ্য বলেছে হামলার ঘটনাটি ছিল‘মারাত্মক ভুল’ এবং এজন্য দেশটি দুঃখ প্রকাশ করেছে।

একই সাথে দেশটি এ ঘটনার একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার অঙ্গীকার করেছে।

সাহায্য সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ত্রাণবাহী গাড়ির কনভয় যখন দেইর আল বালাহ্ ওয়্যারহাউজ ছাড়ছিল তখনি হামলার শিকার হয় ‘যেখানে সংস্থার টিম সমুদ্রপথে গাজায় মানবিক সহায়তা হিসেবে আনা একশ টনের বেশি খাবার নামাচ্ছিল।’

সাহায্য সংস্থার বহরে তিনটি গাড়ি ছিল। এর মধ্যে দুটি ছিল সাঁজোয়া যান, যেখানে পরিষ্কারভাবে সাহায্য সংস্থার লোগো লাগানো ছিল। তিনটি গাড়ির ওপরই হামলা চালানো হয়।

স্প্যানিশ-আমেরিকান সেলেব্রিটি এই শেফ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন,‘ভাগ্য খারাপের মতো এমন কোনো পরিস্থিতি ছিল না যে...ওপস...আমরা ভুল জায়গায় বোমা ফেলছি।’

ইসরাইলের চ্যানেল ১২-এর সাথে আরেক সাক্ষাৎকারে আন্দ্রেজ বলেন,‘এটা ছিল সত্যিকার অর্থেই সরাসরি একটি হামলা এবং তা ছিল পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত যানবাহনের ওপর যেগুলোর গতিবিধি সম্পর্কে আইডিএফ (ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স) এর সবাই জানতো।’

ওদিকে ডব্লিউসিকের নিহত ছয় কর্মীর লাশ নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য গাজা থেকে মিশরে নেয়া হয়েছে।

আর তাদের ফিলিস্তিনি সহকর্মীকে নিজ শহর রাফাহ’তে দাফন করা হয়েছে মঙ্গলবার।

ডব্লিউসিকে গাজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। তারা কার্যক্রম স্থগিত করার পর গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এদিকে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য তারা রাত্রিকালীন চলাচল অন্তত ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করেছে জাতিসঙ্ঘ।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু হামলার ঘটনাকে‘অনিচ্ছাকৃত’ বলে দাবি করেছেন।

নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেন,‘যুদ্ধে এটা হয়। সরকারগুলোর সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না হয় সেজন্য আমরা সবকিছু করবো।’

আইডিএফ চিফ অফ জেনারেল স্টাফ হারজি হালভেই ঘটনাটিকে‘মারাত্মক ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। টার্গেট নির্ধারণে ভুল হওয়াকে এর জন্য দায়ী করে তিনি বলেন ‘এটার পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিৎ নয়’।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং সাহায্য কর্মীদের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছেন।

বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে বারবার অনুরোধ করছে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকে যেন মানবিক কার্যক্রমের সাথে দ্বন্দ্বে না জড়ানো হয়।’

নিহত সাহায্য কর্মীদের মধ্যে তিনজন ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। একজন করে পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিস্তিনের নাগরিক ছিলেন। আরেকজন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক।

মঙ্গলবার বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

এ সময় তিনি গাজা পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ উল্লেখ করেন এবং সাহায্য কর্মীদের হত্যার ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেন।

একইসাথে সুনাক মানবিক কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধের অবসান এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার বলে মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ নেতানিয়াহুর সাথে ফোনে আলাপকালে‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষোভ ও উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। একইসাথে ঘটনাটির একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি করেন তিনি।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সাহায্য কর্মীদের হত্যার ঘটনাকে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

চার দিন আগে ডব্লিউসিকে জানিয়েছিল যে তারা গাজায় মোট ৪ কোটির বেশি মিল বিতরণ করেছে।

ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চলে বেসামরিক নীতির দায়িত্বে থাকা ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান কোগ্যাট এর তথ্য অনুযায়ী ওই অঞ্চলে বেসরকারি সহায়তার ৬০ ভাগই গেছে ডব্লিউসিকের মাধ্যমে।

এদিকে ডব্লিউসিকের সাথে কাজ করা আরেকটি সাহায্য সংস্থা দ্যা আমেরিকান নিয়ার ইস্ট রিফিউজি এইড (আনেরা) বিবিসিকে বলেছে তারাও গাজায় কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।

গত অক্টোবরের পর থেকে গাজায় অন্তত ১৯৬ সাহায্য কর্মী খুন হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলে পরিচালিত এইড ওয়ার্কার সিকিউরিটি ডাটাবেজ।

গত সাতই অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের পর থেকে গাজায় ইসরাইলের অভিযানে ৩২ হাজার ১৯৬ জন নিহত হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে বুদ্ধিজীবী দিবসে চট্টগ্রাম ক্লাবে কনসার্ট সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ করল ইংল্যান্ড ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে ডুয়েটের ১৪ শিক্ষার্থীর সাজা সিলেট যেন মিছিলের নগরী এক বছরের ব্যবধানে ফের অবসরে ইমাদ ওয়াসিম শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি চালু করতে হবে : শামসুল ইসলাম সাভারে দিন-দুপুরে চলন্ত বাসে ডাকাতি বাংলাদেশ সফরে আসছেন নাসার প্রধান নভোচারী সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের দাবি হেফাজত আমিরের ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের কতটা আর্থিক ক্ষতি করে গেছে আওয়ামী লীগ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে : রফিকুল ইসলাম খান

সকল