১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`

যুদ্ধের আগে ইসরাইলকে গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছিলেন জর্ডানের বাদশাহ

জর্ডানের বাদশাহ হুসেইন বিন তালাল এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়া - ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি ইসরাইলের স্টেট আর্কাইভস থেকে কিছু নথি প্রকাশিত হয়েছে। নথিগুলো জর্ডানের তৎকালীন বাদশাহ হুসেইন বিন তালালের সাথে ইসরাইল সরকারের সম্পর্ক ও যোগাযোগের কথা প্রকাশ করেছে।

হুসেইন ইসরাইল সরকারের কাছে কিছু গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস করেও বলেও নথিগুলো নিশ্চিত করেছে।

১৯৭৩ সালে ইসরাইল ও আরবদের মধ্যে ইয়োম কিপপুর যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যা অক্টোবর বা রমজান যুদ্ধ নামেও পরিচিত।

গত সপ্তাহে ওই যুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকীর কিছু আগেই ইসরাইল স্টেট আর্কাইভস লাখ লাখ পৃষ্ঠা সম্মলিত সাড়ে তিন হাজার ফাইল এবং সদ্য আনসেন্সরড তথ্য প্রকাশ করেছে। যার মধ্যে ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ব্যুরো প্রধান এলি মিজরাহির ডায়েরিও রয়েছে।

মিজরাহির ডায়েরিতে ওই সময়ের জর্ডানের বাদশাহ এবং ইসরাইল কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দাদের সাথে তার যোগাযোগের বিষয়ে সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।

এক বর্ণনায় ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার এবং বাদশাহ হুসেইনের মধ্যে বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকটি ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবের বাইরে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক ভবনে ১৯৭৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বৈঠকটি হয়েছিল যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিন আগে। দখলকৃত গোলান মালভূমি ফিরিয়ে নিতে সিরিয়ার আরেকটি যুদ্ধ শুরু করার পরিকল্পনার বিষয়ে ইসরাইলের কাছে গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশের উদ্দেশে হুসেইনের অনুরোধে ওই বৈঠক হয়েছিল বলে জানা গেছে।

মিজরাহি তার নথিতে জর্ডান বাদশাহর পরিচয় গোপন করা চেষ্টা করেছেন। এর জন্য তিনি তার নামের পরিবর্তে ‘লিফট’ বা ‘তার’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।

তার ডায়েরিতে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর উল্লেখ করেছেন, ‘লিফ্ট আমাদেরকে কথোপকথনের সময় বলেছিলেন যে তাকে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল সূত্র জানিয়েছে, সিরিয়ার অভিযানের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়েছে। ইউনিটগুলো দু’দিন ধরে বিমান বাহিনী ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ অবস্থান নিয়েছে। গোল্ডা মায়ার হুসেইনকে প্রশ্ন করেছিলেন, সিরিয়ানরা মিসিরের সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া আক্রমণ করবে কি-না? তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি এটি বিশ্বাস করেননি। তারা সহযোগিতা করবে।’

এটি যুদ্ধের আগে তিন মাসের মধ্যে ইসরাইলিদের জর্ডানিয়ানদের তৃতীয় সতর্কতা প্রদান ছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু পরেরটি তাদের অপর্যাপ্ত তথ্য এবং কোনো নতুন বুদ্ধিমত্তা নেই বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

বাদশাহ হুসেইনের আরেকটি সাংকেতিক নাম ‘ইয়ানুকা’ ছিল, যার অর্থ ‘শিশু’। তিনি ১৭ বছর বয়সের আগে সিংহাসনে নিযুক্ত হওয়ায় এ নামটি দেয়া হয়েছিল।

নথিগুলোর মধ্যে একটি টেলিগ্রাম রয়েছে, যেটি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোর্দেচাই গাজিট ১০৭৩ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত সিমচা দিনিতজকে পাঠিয়েছিলেন। টেলিগ্রামটি উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধের সময় আরব সেনারা জর্ডানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারে বলে হুসেইন উদ্বিগ্ন ছিলেন।

ইসরাইলি সংবাদপত্র আউটলেট ও হারেৎজের মতে, ‘লিফ্ট’ হিসেবে বাদশাহ হুসেইনের পরিচয় অবশেষে শনাক্ত করা হয়েছে। তার পরিচয় এই সর্বশেষ নথিপত্র এবং মিজরাহির ডায়েরি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। কারণ কোড নামটি আগে সংশোধন করা হয়েছিল এবং সেন্সর করা ছিল।

প্রকাশের পরেও ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারগুলো জাতীয় নিরাপত্তা, গোপনীয়তা বা বৈদেশিক সম্পর্কের উদ্বেগের কারণে নথির অনেকগুলো বিভাগের সংশোধন করে চলেছে। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের ৯০তম বাষির্কীতে সেগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা হবে।
সূত্র : মিডেল ইস্ট মনিটর


আরো সংবাদ



premium cement

সকল