২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আরব লিগে সিরিয়া প্রেসিডেন্টের ফিরে আসায় হতাশা ও ভয়

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। - ছবি : সংগৃহীত

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সৌদি আরবের জেদ্দায় আরব লিগের সম্মেলনে যেভাবে প্রবেশ করেছেন, তা সিরিয়ার যুদ্ধে তার বিজয়ের এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। তাকে সাদরে বরণ করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। অথচ এক দশক আগেও আসাদ বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করেছে সৌদি।

কিন্তু এখন সৌদি যুবরাজ মধ্যপ্রাচ্য পুনর্গঠন করতে চান এবং এর জন্য সিরিয়াকে তার পাশে দরকার।

প্রেসিডেন্ট আসাদ তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, সিরিয়া সবসময়ই আরব বিশ্বের অংশ। তবে তার দেশের ভেতরে কখনোই অন্য দেশের হস্তক্ষেপ চান না তিনি।

তিনি বলেন, ‘এটা জরুরি যে অভ্যন্তরীণ বিষয় দেশের জনগণের কাছেই ছেড়ে দেয়া উচিত, তারাই ভালো জানে কী করতে হবে।’

জনগণ বলতে প্রেসিডেন্ট আসাদ দেশের নেতা ও তার সমর্থকদের বুঝিয়েছেন। এ সম্মেলনে যোগ দেয়া যুবরাজ ও প্রেসিডেন্ট তাদের হাজারো বিরোধী মতকে বন্দী করেছেন।

জেদ্দার ওই অনুষ্ঠান নিয়ে আতঙ্কিত সিরিয়ানরা। যারা তাদের দেশকে ধ্বংস করার জন্য আসাদ শাসনকে দায়ী করে, আর এ ধারণা লেবাননে থাকা সমস্ত সিরিয়ান শরণার্থীদের।

লেবানন একটি ছোট ও দরিদ্র দেশ, যাদের যুদ্ধ থেকে পালানো ১০ লাখের ওপর সিরিয়ান শরণার্থীকে জায়গা দিতে হয়েছে। যা লেবাননের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগের সমান, অনেকটা যুক্তরাজ্যের তুলনা করা যায়। যুক্তরাজ্য ১৫ মিলিয়নের ওপর শরণার্থী গ্রহণ করেছে।

বিষয়টি লেবানিজের সহ্যসীমার বাইরে চলে গেছে এবং তারা নিজেদের দেশের ক্রমশ ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার জন্য সিরিয়ানদেরই দায়ী করে থাকে।

গত কয়েক সপ্তাহে লেবাননের সেনাবাহিনী প্রায় দেড় হাজার শরণার্থীকে অস্ত্রের মুখে সীমান্তের ওপারে ঠেলে দিয়েছে। কখনো কখনো এসব শরণার্থীর সন্তানেরা লেবাননেই থেকে যাচ্ছে, আবার কখনো কখনো মা-বাবাকে ছাড়া শুধু সন্তানদেরই সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে।

নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক শরণার্থী পরিবারের সাথে কথা হয়। তারা বৈরুতের পাশের এক শহরে থাকে, সেখানে সিরিয়ানদের ওপর কারফিউ জারি করা হয়েছে।

বাচ্চাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তাদের জীবনের অশান্তি বোঝা যায় ওই পরিবারের কিশোরী মেয়ের আঁকা ছবিতে, সব ক্ষোভ যেন সেখানে নিংড়ে দেয়া হয়েছে। শক্তিশালী আরব নেতারা যেভাবে বাশার আল আসাদকে বরণ করেছে, তা তাদের জন্য অপমান আর ভয়ের বলে মনে করেন ওই পরিবারের বাবা।

তিনি বলেন, ‘আসাদ সরকার আসলে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার, যা আরবের আরো অনেক দেশেই বিদ্যমান। তারাই জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে একে অন্যকে সাহায্য করছে।’

জেদ্দায় আসাদের উপস্থিতি ভয়াবহ ধাক্কা হয়ে এসেছে লেবাননের বেক্কা উপত্যকার আরেক শরণার্থী শিবিরে। নাসের এবং মারওয়া, যারা ওই শিবিরে ২০১৩ সাল থেকে আছেন, তাদের শঙ্কা আসাদের আরব লিগে ফেরা আরো অনেককে হয়ত নির্বাসনে পাঠানোর উপলক্ষ্য।

মারওয়া বলেন, তিনি প্রতিদিন ঘুম থেকে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেন যে তাদের এখনো নির্বাসনে যেতে হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় এখন ভয়ে থাকি যে কখন আবার রেইড হয়, এই বুঝি তারা এসে আমাদের সব পুরুষদের নিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেবে।’

নাসের বলেন, দেশে ফেরত গেলে তাকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে। কিন্তু তিনি ওই সরকারের হয়ে যুদ্ধ করবেন না বলে সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসেন। তিনি খুবই চিন্তিত যে যদি তাকে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তার স্ত্রী ও ১৮ মাস বয়সী সন্তানের কী হবে।

আসাদকে আবারো আরব লিগের গ্রহণ করার সিদ্ধান্তটা নিয়ে নাসের খুবই ক্ষুব্ধ।

তিনি বলেন, ‘এতকিছু করার পর তাকে সবাই আবার গ্রহণ করছে। এটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না সিরিয়াতে এত হত্যা, ধ্বংস আর দুর্ভোগ নামিয়ে আনার পর এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।’

সিরিয়া ও আসাদ সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, প্রেসিডেন্ট সিরিয়াকে একটা জল্লাদখানায় পরিণত করেছে।

যুক্তরাজ্য সরকার ও অ্যামনেস্টি বলছে, আসাদের যেকোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কঠোর বিরোধিতা করা হবে।

আরব লিগের কিছু সদস্য দেশও এ ব্যাপারে একমত। সিরিয়ায় আসাদ বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করে এসেছে কাতার, তারা আরব লিগে আসাদের ফিরে আসাকে সমর্থন করে না।

কিন্তু বড় ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বাস করে, আসাদ সরকার আসলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি বাস্তবতা এবং সিরিয়া এমন একটা দেশ যেখানে তাদের প্রভাব থাকা দরকার। তবে অন্য কারণও আছে সিরিয়াকে কাঠগড়ায় তোলার।

জর্ডান সৌদির মতোই ক্যাপটাগন নামক এক মাদকের বিস্তারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। মাদকটি সিরিয়াতেই তৈরি হয় এবং তারপর জর্ডানে পাচার হয়। অ্যামফেটামাইন ধরনের ওই মাদক যোদ্ধাদের দেয়া হয়, যেন তাদের সামর্থ্য আরো বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বর্তমানে ওই মাদকটি ব্যাপকভাবে বিনোদন বা শুধু নেশার জন্য ব্যবহার হচ্ছে।

ক্যাপটাগন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আসাদ পরিবারের কয়েকজন সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এক হিসাবে বলা হয়েছে, ক্যাপটাগন ব্যবসার অর্থমূল্য বার্ষিক ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

সিরিয়া ও লেবাননে ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম চালানো জাতিসঙ্ঘ অবশ্য আশা করছে, সিরিয়ার আরব লিগে ফেরাটা সেখানে কূটনৈতিক আলোচনার একটা পথ খুলে দিতে পারে।

লেবাননে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের ডেপুটি স্পেশাল কোঅর্ডিনেটর ইমরান রেজা এর ইতিবাচক দিক দেখার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, ‘যদি ওই অঞ্চলে এখন যা চলছে, তা থেকে বের হওয়া জন্য যদি এটি রাজনৈতিক সমাধান এনে দেয় তাহলে তা সবার জন্যই ভালো।’

কিন্তু জাতিসঙ্ঘ জোর করে কাউকে ফেরত পাঠানো সমর্থন করে না। তারা বারবারই বলেছে যে সিরিয়ান শরণার্থী ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেশে ফেরত যেতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সিরিয়া পুরোপুরি নিরাপদ না হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট আসাদ তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নিজের দেশকে ভেঙে টুকরো করেছেন। এর ভুক্তভোগীদের জন্য কোনো ন্যায়বিচারের রাস্তাও খোলা নেই।

কিন্তু তার মতো নিষ্ঠুর, কর্তত্ববাদী শাসকদের এ থেকে যেন একটা শিক্ষা নেয়ার আছে, বিশেষ করে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। ২০১৫ সালে তার সামরিক অভিযান আসাদ সরকারকে জয় এনে দিয়েছিল।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
গ্যাটকো মামলা : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুনানি ২৫ জুন বুড়িচংয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে ৩টি সংগঠনের নেতৃত্বে মানববন্ধন থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ছেলে হারা মা সাথিয়ার কান্না যেন থামছেই না বৃষ্টির জন্য নারায়ণগঞ্জে ইস্তিস্কার নামাজ আদায় প্রবাসী স্ত্রী থেকে প্রতারণার মাধ্যেমে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়, ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা চান হাইকোর্ট আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরো ৪৬ বিজিপি সদস্য উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা কক্সবাজারে ট্রেন লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ

সকল