২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হামাসের প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ ইয়াসিনকে হারানোর দিন

হামাসের প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ ইয়াসিনকে হারানোর দিন - ছবি : সংগৃহীত

বর্ষপঞ্জিকায় তখন ২০০৪ সাল। প্রভাতের মেদুর হাওয়া বইছে চারদিক। মাত্রই ফজর শেষ করেছেন শায়খ আহমাদ ইয়াসিন। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় মসজিদ থেকে কেবল বের হলেন শায়খ। সঙ্গে আছেন সাত ঘনিষ্ঠজন। আছেন দুই সন্তান। হঠাৎ বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠল গাজা উপত্যকা। মুহূর্তে পাল্টে গেল সব। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শায়খ। ইহলোক ত্যাগ করলেন ঘনিষ্ঠ সাত সহচর। গুরুতর আহত হলেন শায়খের দুই সন্তান। এ সময় তীব্র গতিতে গাজার আকাশ ত্যাগ করল তিনটি হেলিকপ্টার। পেছনে রেখে গেল বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত শায়খ ও তার সহচরদের লাশ।

বোমা নিক্ষেপকারী হেলিকপ্টারগুলো ছিল দখলদার বাহিনীর। তৎকালীন ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট অ্যারিয়েল শ্যারনের নির্দেশ বোমা ফেলে তারা। শায়খের ওপর এটাই তাদের প্রথম হামলা নয়। এর পাঁচ মাস আগেও হামলা চালিয়েছিল তারা। সেবার প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। তবে আহত হয়েছিলেন গুরুতর।

শায়খ আহমাদ ইয়াসিন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালে। পাঁচ বছর বয়সে হারান স্নেহময়ী বাবাকে। এতিম অবস্থায় বেড়ে উঠেন মাতৃভূমি জুরা আসকালানে। সেখানেই সমাপ্ত করেন প্রাথমিক শিক্ষা। এ সময় তিনি দেখেন ফিলিস্তিনের ইহুদি অভিবাসন চিত্র। যাপন করেন প্রতিরোধ আন্দোলনের নানা প্রেক্ষাপট। প্রত্যক্ষ করেন ১৯৪৮ সালের আরবযুদ্ধের ব্যর্থতার চিত্র। নাকাবা নামে যা পরিচিত। এসব ঘটনা তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এ সময় তিনি স্থির হন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ফিলিস্তিনিদেরকেই অর্জন করতে হবে। এর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করা যাবে না। হোক তারা প্রতিবেশী আরববিশ্ব কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সঙ্ঘ।

শায়খের বয়স তখন ১৬ বছর। একদিন বন্ধুদের সাথে খেলা করছিলেন। বেকায়দায় পড়ে ভেঙে যায় ঘাড়ের হাড়। এতে আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধি পক্ষাঘাতে। এটি তার জীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও চালিয়ে যান জীবন সংগ্রাম। চালিয়ে যান পড়াশোনা। অবশেষে ১৯৫৮ সালে সমাপ্ত করেন শিক্ষার পর্ব। মন দেন অধ্যাপনায়।

রাজনীতিতে যুক্ত হন ২০ বছর বয়সে। তখন ১৯৫৬ সাল। পুরো গাজা জ্বলে উঠে মিসরের ত্রিপক্ষীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। এ সময় মূর্ত হয় শায়খের জাদুময়ী ভাষণ ও সাংগঠনিক সক্ষমতা। তিনি হয়ে উঠেন গাজার বিশেষ নেতা। এতে টার্গেটে পড়েন গাজায় কর্মরত মিসরীয় গোয়েন্দাদের। তার ধর্মীয় চেতনার দীপ্তি গোয়েন্দাদের মনে সন্দেহ জাগায়, তিনি হয়তো মুসলিম ব্রাদারহুডের সম্পৃক্ত কেউ। ফলে ১৯৬৫ সালে শায়খকে বন্দী করেন তারা। নির্বাসিত হন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কিন্তু তথ্য প্রমাণে যখন সাব্যস্ত হয়, ব্রাদারহুডের সাথে নেই তার সম্পৃক্ততা, শায়খকে তারা ছেড়ে দেয়।

তবে এটা সত্য যে শায়খ মুসলিম ব্রাদারহুড দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাসানুল বান্না। যারা মানুষকে আহ্বান জানাত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম যাপনের।

১৯৬৭ সালে ইসরাইলের কাছে পরাজিত হয় আরববিশ্ব। তারা দখলে নেয় ফিলিস্তিনের গাজা, সিরিয়ার গোলান ও মিসরের সিনাই উপদ্বীপ। এ সময় শায়খ জ্বলে উঠেন আপন মূর্তিতে। তখন মসজিদুল আব্বাসির খতিব তিনি। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে। মেহনত শুরু করেন জনে জনে ও ঘরে ঘরে। এ সময় তিনি নানা স্থান থেকে অনুদান সংগ্রহ করতেন। তা দিয়ে সহযোগিতা করতেন শহীদ ও বন্দী পরিবারকে।

১৯৮২ সালে ফের বন্দী হন তিনি। অভিযোগ আনা হয়, তার কাছে অস্ত্র আছে। গঠন করেছেন প্রতিরোধ আন্দোলন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন ইসরাইলকে মিটিয়ে দেয়ার প্রতি। এসব অভিযোগে তার ১৩ বছরের জেল হাজত হয়। পরে ১৯৮৫ সালেই তিনি মুক্তি লাভ করেন। ইসরাইল ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ ফিলিস্তিনের বন্দী বিনিময়ের সময় তিনি মুক্তি পান।

অবশেষে এলো ১৯৮৭ সাল। গঠন করেন ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন। হামাস নামে আজ যা পরিচিত। এ সময় তিনি সঙ্গী হিসেবে নেন মুসলিম ব্রাদারহুডে প্রভাবিত গাজার কয়েকজন মুসলিম নেতাকে। এরপর তিনি শুরু করেন ‘মিম্বার বিদ্রোহ’। মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন দখলদারবিরোধী আন্দোলনে। এভাবে দেশব্যাপী জ্বালিয়ে দেন প্রতিরোধের আগুন।

পরে ১৯৮৯ সালে আবার বন্দী হন দখলদার বাহিনীর হাতে। এ সময় বন্দী হয়েছিলেন হামাসের কয়েক শ’ নেতা। ইসরাইলের আদালত শায়খকে ১৫ বছরের জেলহাজত দেয়। এভাবে তিন বছর পার হয়। ১৯৯১ সালে নতুনভাবে শায়খকে সাজা দেয়া হয় ইসরাইলের একটি আদালত। তখন হামাস প্রতিষ্ঠা ও দখলদার বাহিনীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে ১৯৯৭ সালে তিনি মুক্তি পান। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান খালেদ মেশালকে হত্যাচেষ্টার পর জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে তিনি মুক্তি পান।

এভাবে কখনো সমরে, কখনো জেলে সময় পার করেন তিনি। পরে ২০০৪ সালের ২২ মার্চে দখলদার বাহিনীর বোমা হামলায় জগতের মায়া ত্যাগ করেন তিনি। রেখে যান প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য সোচ্চার দল হামাসকে। পদছাপ রেখে যান হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে।

সূত্র : আলজাজিরা মুবাশ্বির ও ফিলিস্তিনি নানা সংবাদমাধ্যম


আরো সংবাদ



premium cement
নাটোরে স্কুলছাত্রকে ডেকে নিয়ে হত্যা, আটক ৪ মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই দুর্ঘটনায় তরুণ নিহত ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের

সকল