২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিচারব্যবস্থার আইন সংশোধনে ফুঁসে উঠেছে ইসরাইলিরা

বিচারব্যবস্থার আইন সংশোধনে ফুঁসে উঠেছে ইসরাইলিরা - ছবি : সংগৃহীত

বিচারব্যবস্থাকে সংশোধনের জন্য একটি বিতর্কিত সরকারি পরিকল্পনার প্রতিবাদ জোরদার করেছে ইসরাইলিরা। বুধবার তাদের এই প্রতিবাদ আরো তীব্র করেছে। প্রতিবাদী নেতারা ‘জাতীয় বিঘ্ন দিবস’ আখ্যা দিয়ে একটি বড় বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধের চিন্তা করছিল।

সরকার আইন পরিবর্তন করতে অগ্রসর হওয়ার সময় বিক্ষোভগুলো শুরু হয়। একটি সংসদীয় কমিটি এমন একটি বিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যা সুপ্রিমকোর্টকে দুর্বল করে দেবে।

এ সঙ্কটটি ইসরাইলকে তীব্র ধাক্কা দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতায় ফিরে আসার মাত্র দু’মাস পর একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। ইসরাইলের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী নেতা দুর্নীতির অভিযোগ খণ্ডাতে লড়ছেন। এমনকি তার সরকার এমন একটি ব্যবস্থা পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে, যা তার চলমান বিচারে কোনো বিচারক শুনানি করতে পারে, তা নির্ধারণ করতে পারে।

তিনি স্বার্থের সঙ্ঘাতের ঝুঁকিতে আছেন। নেতানিয়াহু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে সংশোধনীর ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলো অনুসন্ধান করছে, ইসরাইলের সবচেয়ে খারাপ অভ্যন্তরীণ সঙ্কটগুলোকে এটি আরো গভীর করছে।

আইনি সংশোধন একটি অভূতপূর্ব হৈচৈ সৃষ্টি করেছে, সপ্তাহব্যাপী গণবিক্ষোভ, আইনি বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা ও সেনা সংরক্ষকদের বিরল বিক্ষোভ, যারা আদেশ অমান্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা বলেন যে আইনের সংশোধনী পাসের পর একটি একনায়কত্ব দেশ হবে। দেশের বিকাশমান প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী নেতারা ও শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বিচারিক আইনের পরিবর্তনের কারণে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলাতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। ইসরাইলের আন্তর্জাতিক মিত্ররাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিক্ষোভকারীরা বুধবার ভোরে তেল আবিবের প্রধান ফ্রিওয়ে আর্চারি ও শহরের সাথে জেরুজালেমের সংযোগকারী মহাসড়ক প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তেল আবিবের ব্যস্ত ট্রেন স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা ফটক আটকে ট্রেন ছেড়ে যেতে বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা ‘গণতন্ত্র’ স্লোগান দিয়ে তেল আবিবের একটি কেন্দ্রিয় চৌরাস্তার কাছে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খলার জন্য বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

প্রতিক্রিয়ায় একজন অতি-জাতীয়তাবাদী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির, বিক্ষোভকারীদের ‘নৈরাজ্যবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করে রাস্তা অবরোধ প্রতিরোধে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।

হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি পতাকা নেড়ে বেরিয়ে আসে। মা-বাবারা তাদের সন্তানদের নিয়ে মিছিল করছেন। প্রযুক্তিকর্মীরা বিক্ষোভের জন্য কাজ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ডাক্তাররা হাসপাতালের বাইরে প্রতিবাদ করেছেন। বুধবার নেসেটের বাইরে ও জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছে প্রধান বিক্ষোভ করেছিল।

তেল আবিবে প্রতিবাদকারী আরিয়ানা শাপিরা বলছিলেন, ‘এখানে প্রতিটি মানুষ ইসরাইলে গণতন্ত্র রাখার চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকার যদি কোনো সুযোগ পায়, তাহলে আমরা ভয় পাচ্ছি যে আমাদের আর গণতান্ত্রিক বা স্বাধীন দেশ থাকবে না। ‘একজন মহিলা হিসেবে, একজন মা হিসেবে, আমি আমার পরিবার ও আমার বন্ধুদের জন্য খুব ভয় পাই।’

মঙ্গলবার আইন সংশোধনের প্রধান বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন বলেছেন যে জোটের লক্ষ্য আগামী ২ এপ্রিল পার্লামেন্ট পাসওভারের ছুটিতে যাওয়ার আগে কিছু বিচারিক আইন সংশোধন বিলের মাধ্যমে আইনে পরিণত করা।’

নেসেট বুধবার নেতানিয়াহুকে তার পদ থেকে অপসারণ করা থেকে রক্ষা করতে একটি পৃথক প্রস্তাবে প্রাথমিক ভোট দিতে প্রস্তুত। এটি একটি পদক্ষেপ, যা দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আহ্বান জানিয়ে তাকে শাসন করার জন্য অনুরোধ করে। যেখানে তিনি দুর্নীতির জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে পারেন।

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিরা যখন নতুন করে মারাত্মক সহিংসতায় নিমজ্জিত হয়েছে, তখন সংঘর্ষটি বাঁধে। নেতানিয়াহুর সরকার তার মেয়াদের মাত্র দু’মাস আগে ফাটল দেখা দেয়।

ইসরাইলে এক বছরব্যাপী রাজনৈতিক সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে নেতানিয়াহু। সাবেক মিত্ররা তার দিকে মুখ করে। তার দুর্নীতির অভিযোগের কারণে তার সরকারে সাথে বসতে অস্বীকার করে। সেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় চার বছরে পাঁচটি নির্বাচনের মাধ্যমে গত বছরের শেষের দিকে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় ফিরে আসার পর শেষ হয়েছিল। শুধুমাত্র অতি-জাতীয়তাবাদী ও অতি-অর্থোডক্স দলগুলোকে অংশীদার হিসেবে রেখেছিল এবং বর্তমান অতি-ডানপন্থী সরকার গঠন করেছিল।

বিপুল রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী ওই মিত্ররা নেতানিয়াহুর সরকারে শীর্ষ পোর্টফোলিওগুলো সুরক্ষিত করেছিল। তাদের মধ্যে বেন-গভির, যিনি পুলিশের তত্ত্বাবধান করেন ও অতীতে সহিংসতায় উস্কানি দেয়া এবং একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ একজন ফায়ারব্র্যান্ড পশ্চিমতীরের সেটলার নেতা। ভূখণ্ডের কিছু অংশের ওপর কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।

তারা পুনর্বিবেচনার প্রতিবাদকারীদের নিন্দা করতেও দ্রুত হয়েছে। কিন্তু এই সপ্তাহে একটি ফিলিস্তিনি শহরে উগ্রপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রত্যাহার করেছে।

আইন সংশোধনী বিতর্কে কোনো পক্ষই পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। সরকার আইন সংশোধন স্থগিত করার ও সংলাপের পথ তৈরি করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে প্রতিবাদী সংগঠকরা পরিকল্পনাটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের লড়াই তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সরকার বলেছে যে পরিবর্তনগুলো এমন একটি ভারসাম্যহীনতা সংশোধন করার জন্য যা আদালতকে অত্যধিক ক্ষমতা দিয়েছে। তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছে। তারা বলেন, আইন সংশোধন পরিকল্পনা শাসনব্যবস্থাকে প্রবাহিত করবে এবং বলেন যে গত বছরের নির্বাচন, যা নেতানিয়াহুকে পার্লামেন্টে হালকা সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছিল এবং তাদের পরিবর্তন করার জন্য একটি ম্যান্ডেট দিয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, আইন সংশোধন পরিকল্পনা ইসরাইলের চেক ও ব্যালেন্সের সিস্টেমকে উন্নীত করবে।

ফলে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে অবাধ ক্ষমতা প্রদান করবে এবং দেশকে কর্তৃত্ববাদের দিকে ঠেলে দেবে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement
রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য বেনাপোল সীমান্তে ৭০ লাখ টাকার স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক ৪ বিভাগে হতে পারে বজ্রসহ বৃষ্টি!

সকল