২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবরুদ্ধ গাজার ‘প্রাচীর ভেঙে’ ফিলিস্তিনি তরুণী এখন সুইডেনের মেয়র

তামাম আবু হামিদান - ছবি - সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। এক দিকে ভূমধ্যসাগর আর তিন দিকে ইসরাইল ও দক্ষিণে মিসরের সিনাই সীমান্ত। বছরের পর বছর এখানে অবরুদ্ধ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। কিন্তু এই বন্দিত্ব তার সৃষ্টিশীলতাকে রুখে দিতে পারেনি। বরং আরো শক্তি যুগিয়েছে। ধৈর্য্য আর সহনশীলতার জোরে সফলতার মুকুট পরেছেন তিনি। তামাম আবু হামিদান, গাজার এই ফিলিস্তিনি তরুণী এখন সুইডেনের একটি শহরের মেয়র।

গাজার জাবালিয়াতে জন্ম আবু হামিদানের। সেখানেই বড় হয়েছেন। স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর সাংবাদিকতায় গ্রাজুয়েশন করেছেন আল-আকসা ইউনিভার্সিটি থেকে।

গাজায় চলমান অবরোধের প্রভাব এবং অবনতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কন্যার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন আবু হামিদান। তাই ২০১৪ সালে সুইডেনে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে ব্লেকিঞ্জ কাউন্টিতে মা-বাবার সাথে বসবাস করতে থাকেন।

শুরুতে সুইডেনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় আবু হামিদানকে। ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভিন্ন সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক বাধা পেরোতে হয় তাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল একটি চাকরি খুঁজে পাওয়া।

আবু হামিদান বলেন, ‘অনেক ঘাম ঝরিয়ে সুইডেনে পা রাখার এক সপ্তাহ পর একটি পিজ্জা রেস্টুরেন্টে কাজ পাই।’

এই চাকরির সুবাদে আবাসিক পারমিট পান তিনি।

প্রত্যেক প্রবাসী ফিলিস্তিনির মনে থাকে তার মাতৃভূমি। আবু হামিদানও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।

তিনি বলেন, ‘একজন ফিলিস্তিনি তরুণী এবং ফিলিস্তিনি মা-বাবার কন্যা হিসাবে, আমি শিখেছি কিভাবে নতুন একটি জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। কিভাবে সব বাধা অতিক্রম করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়, যখন আপনার হাতে অপশন একটিই।’

আবু হামিদান এখন সুইডিশ ভাষায় কথা বলেন। ভাষায় দক্ষতার তাকে কয়েকটি চাকরি পেতে সাহায্য করেছে। এর মধ্যে একটি ছিল উপদেষ্টা হিসেবে নতুন অভিবাসীদের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে সহায়তা করা। ২০১৬ সালে ব্লেকিঞ্জ কাউন্টিতে শ্রম অফিসে কাজ শুরু করেন তিনি।

বলেন, “নতুন চাকরি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে আমাকে। এই পরিবর্তন আমার জীবনে ভালো কিছু বয়ে এনেছে। আরো লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করার শক্তি এবং সাহস দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল মালমো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘লিডারশিপ অ্যান্ড অর্গানাইজেশন’-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করা।”

অবরুদ্ধ গাজার মতো একটি পরিবেশে বেড়ে উঠায় রাজনীতির প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল আবু হামিদানের। ধীরে ধীরে সেই স্বপ্ন পূরণের দিকে পা বাড়ান তিনি। ব্লেকিঞ্জ কাউন্টির ছোট্ট শহর ওলোফস্ট্রম। ২০১৫ সালে সেখানে রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন তিনি। যুক্ত হন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে।

তিনি কখনই দলের ‘নতুন মুখ’ হতে চাননি। সব সময় চেয়েছেন একজন ফিলিস্তিনি নারী হিসাবে সেখানকার বাসিন্দাদের সেবা করে যেতে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্লেকিঞ্জ কাউন্টি কাউন্সিলের তালিকায় ১৫তম স্থান দখল করেন। নির্বাচনের পর তিনি পৌর পরিষদের শিক্ষা কমিটির বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হন এবং এক সময় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হয়ে যান।

আবু হামিদান মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের শিক্ষা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এই দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেন।

এই দায়িত্ব সফলভাবে পালনের পর ২০২০ সালে দল থেকে তাকে ওলোফস্ট্রমের কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়। অবশেষে মেয়র হন তিনি।

আবু হামিদান বলেন, ‘প্রচেষ্টা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘মেয়র পদটি শূন্য হলে দল আমাকে মনোনয়ন দেয়।’

রাজনীতি একজন নারীর জন্য এমনিতেই একটি চ্যালেঞ্জ। এর ওপর তিনি যদি হন অবরুদ্ধ গাজার একজন ফিলিস্তিনি, একজন মেয়র এবং একজন মা?

এই সবগুলো ভূমিকা সুন্দরভাবে পালন করেছেন আবু হামিদান। কিন্তু তিনি এখানেই থামতে চান না। তার লক্ষ্য এখন আসন্ন সুইডিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি সুইডেনে যা অর্জন করেছি তা নিয়ে গর্বিত এবং খুশি। গাজার একজন ফিলিস্তিনি নারী হিসেবে সুইডেনে এমন অবস্থানে থাকাটা ফিলিস্তিনিদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। আরো সামনে যেতে হবে।’

এই সংকল্প নিয়ে আরো এগিয়ে যাবেন ফিলিস্তিনি তরুণী তামাম আবু হামিদান। ছাপ রাখবেন সুইডেনের স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে।

সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর


আরো সংবাদ



premium cement