২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৪০ বছর কারাগারে আটক ছেলের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনি মায়ের করুণ মৃত্যু

ছেলের ছবিতে চুমু খাচ্ছেন হতভাগিনী মা। - ছবি : সংগৃহীত

মমতাময়ী মা তার কলিজার টুকরার পথ পানে চেয়ে ৪০টি বছর। তার কলিজার টুকরা ফিরে আসবে তার কোলে। দখলদার জালেমের কারাগার থেকে। কিন্তু নিয়তি বড় নিদারুণ। ৪০ বছরের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। গত পরশু অতৃপ্ত স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করেন কারিম ইউনুসের মা সুবাইহা।

ফিলিস্তিনেরআরা গ্রামের বাসিন্দা ইউনুস কারিম। জালেম দখলদার ইসরাইলিদের হাতে গ্রেফতার হন মাত্র ২০ বছর বয়সে। এখন তার বয়স ৬০ বছর। চল্লিশ বছর তিনি দখলদার জালেমের কারাগারে বন্দী।

১৯৯৩ সালে যখন ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তখন শর্ত ছিল পুরানো বন্দীদেরকে কয়েক ধাপে মুক্তি দেয়া। সেই চুক্তি অনুযায়ী কারিম ইউনুস চতুর্থ ধাপে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সেই ধাপে মোট ৩০ জনের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তাদের মধ্য থেকে ১৪ জনের ছিল অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মুক্তির শর্ত। কারণ তারা ছিলেন ফিলিস্তিনের ওই অংশের বাসিন্দা, যে অংশটুকু সরাসরি ইসরাইলের দখলদার প্রশাসনের নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু দখলদার ইসরাইল প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যায় এবং চতুর্থ ধাপের বন্দীদের আর মুক্তি দেয়া হয়নি।

১৯৮৩ সাল থেকে কারিম ইউনুসের মা তার স্নেহের সন্তানের পথ পানে চেয়ে থাকেন। অপেক্ষার দিনগুলো শেষ হচ্ছিল না। ২০ বছরের টগবগে যুবক কারাগারের চার দেয়ালে ইউনুস কারিম এখন ৬০ বছরের বৃদ্ধ। মাথায় শুভ্র চুল। শরীরে বার্ধক্যের ক্লান্তি। কারাগারের নিমর্ম নির্যাতন-নিপীড়নে এখন আর তাকে চেনা যায় না।

এদিকে তার বৃদ্ধ মা পথ পানে চেযে থাকতে থাকতে গত কয়েক দিন আগে ইহলোক ছেড়ে চলে যান। মমতাময়ী মা তার স্নেহের সন্তানকে না দেখার অতৃপ্তি নিয়েই পৃথিবী ত্যাগ করেন।

করিমের ভাই নাদিম ইউনিস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার ভাই বন্দীদশায় ৪০টি ঈদ পার করেছে। সব কিছুর পরও আমার ভাই একদিন বের হবেন। তবে আমার মা সন্তানকে না দেখার অতৃপ্তি নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে গেলেন। মাও তার জীবন যৌবন আমার ভাইয়ের জন্য কান্না করে করে শেষ করেন। আমার ভাই জালেমের কারাগারে বসে বাবার মৃত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। আর এখন মায়ের বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। আমরা চেয়েছিলাম, মায়ের মৃত্যুর খবরটি তার কাছে না পৌঁছুক। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল তা পৌঁছে গেছে।

আমার মা কারিমের অপেক্ষায় পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় দৌড় দিতেন। কারিমের পায়ের শব্দ পেতেন। গাড়ির হর্ণ বাজলে তিনি কারিম কারিম করে দৌঁড়ে যেতেন। তার শেষের দিনগুলো ছিল খুবই বেচাইন। কারিম কারিম শব্দ জপতে থাকতেন।

জীবনের শেষের দিনগুলো হাসপাতালে কাটিয়েছেন। হাসপাতালের দিনগুলো তিনি বার বার বলতেন, হাসপাতাল থেকে ফিরে গিয়ে তিনি কারিমের সঙ্গে দেখা করবেন।

কারিম ইউনুস যৌবনের শুরুতেই ছাড়া পেতে পারতেন। এর জন্য তাকে অবৈধ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে হত। পাশাপাশি পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতী স্থাপনের স্বীকৃতি দিতে হত। এর জন্য ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ কয়েকবার তার সঙ্গে দর কশাকশি করে। কিন্ত কারিম তার দেশের স্বাধীনতার হন্তারক অবৈধ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন।

এক পতিক্রিয়ায় কারিম ইউনুস জানান, আমি আরো এক শ’টি বছর কারাগারে কাটিয়ে দিতে রাজি আছি। তবে অবৈধ ইসরাইল ও তাদের অবৈধ বসতী স্থাপনকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নই।

-আলআরাবি ও ফিলিস্তিনি সাংবাদিক রশা ফারহাতের তথ্য অবলম্বনে


আরো সংবাদ



premium cement