২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বল্প ভোটার উপস্থিতিতেই শেষ হলো ইরাকের পার্লামেন্ট নির্বাচন

বাগদাদে এক নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটারদের অপেক্ষায় নির্বাচন কর্মীরা - ছবি : এএফপি

স্বল্প ভোটার উপস্থিতির মধ্যেই ইরাকের শেষ হলো ইরাকের পার্লামেন্টের আগাম নির্বাচন। রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে।

টানা ১১ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চললেও মাত্র ৪১ ভাগ ভোটার নির্বাচনে ভোট দেন বলে ইরাকের নির্বাচন কমিশন জানায়।

২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর অনুষ্ঠিত পাঁচ নির্বাচনের মধ্যে এই নির্বাচনেই সবচেয়ে কম ভোটার অংশগ্রহণ করলেন। দেশটিতে বর্তমানে মোট দুই কোটি ৫০ লাখের বেশি নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে বিবিধ ধারার জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশটিতে সরকার গঠনের বিষয়ে কয়েক সপ্তাহ বা মাস সময় লাগবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাগদাদ থেকে নির্দলীয় রাজনীতিবিদ ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মাজেন আল-ইশাইকির বলেন, ভোটারের স্বল্প উপস্থিতি নির্বাচিত সরকারেরর বৈধতার বিষয়ে প্রভাব ফেলবে।

তিনি বলেন, 'আমরা ফলাফলকে সম্মান করবো কিন্তু আমরা ভোট দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত।'

আল-ইশাইকির বলেন, '১৮ বছর ধরে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন কিন্তু তারা কোনো পরিবর্তন দেখছেন না। এতে লোকজন বিরক্ত হয়ে পড়ছে।'

অপরদিকে স্কুলশিক্ষক আবদুল আমির হাসান আল-সাদি জানান, তিনি নির্বাচন বয়কট করেছেন।

বাগদাদের শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত কারাদা ডিস্ট্রিক্টের বাসিন্দা এই স্কুলশিক্ষক বলেন, 'আমি আমার ১৭ বছরের ছেলে হুসেইন হারিয়েছি। বাগদাদে বিক্ষোভে পুলিশের নিক্ষিপ্ত টিয়ার গ্যাসের ক্যানিস্টারের আঘাতে সে খুন হয়।'

তিনি বলেন, 'আমি খুনি ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের ভোট দেবো না। কেননা আমাদের ছেলেকে হারানোর পর আমার ও তার মায়ের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষত থেকে এখনো রক্তক্ষরণ হচ্ছে।'

উত্তর ইরাকের কুর্দি জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত সুলাইমানিয়া শহর থেকে কুর্দিস্তান ইসলামিক ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সিরওয়ান হামা ফারাজ আলজাজিরাকে বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর থেকে আস্থা হারানোর কারণে ৭৫ ভাগ ভোটার নির্বাচন বয়কট করেছেন।

অপরদিকে বারজান ওয়াহাব নামের এক শিল্পী বলেন, ২০১৯ সালের অক্টোবরের বিক্ষোভকারীদের দাবির কারণেই আগাম এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'স্বল্প অংশগ্রহণ সত্ত্বেও এই নির্বাচনের মাধ্যমে ইরাকের রাজনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন হবে।'

ইরাকের পার্লামেন্টের মোট ৩২৯টি আসনে ১৬৭টি দল ও তিন হাজার দুই শ' ৪০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে ইরাকের ১৮টি প্রদেশে থেকে সরাসরি ২৩৭ প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। অপরদিকে পার্লামেন্টে নারীদের জন্য ৮৩টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া সংখ্যালঘু ইরাকি খ্রিস্টানদের জন্য পাঁচটি, মানদায়িদের জন্য একটি, ইয়াজিদিদের জন্য একটি, শাবাকদের জন্য একটি ও ফেইলি কুর্দিদের জন্য একটি আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে ইরাকে জীবনমানের উন্নতি ও কর্মসংস্থানের দাবি এবং দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভের জেরে তৎকালীন ক্ষমতাসীন নুরি আল-মালিকি সরকারের পতন হলেও বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে। এর জেরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন দাবি পালনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এর অংশ হিসেবেই এই আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement