২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় দ্বিতীয় দফা ইসরাইলি বিমান হামলা

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলা - ছবি : আনাদোলু এজেন্সি

অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় গত মাসের যুদ্ধ শেষে প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় বারের মতো বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাইলি যুদ্ধ বিমানগুলো কয়েক দফায় এই হামলা চালায়।

ফিলিস্তিনি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় জানানো হয়, উত্তর-পূর্ব গাজা শহরে ও বাইত লাহিয়া শহরের উত্তরে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনগুলোর অবস্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এছাড়া জাবালিয়ার পূর্বে এক বেসামরিক ভবন ও খান ইউনুস শহরের বাইরে পূর্বে অবস্থিত কৃষিজমিও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত মাসে জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে ইসরাইলি আদালতের রায় ও মসজিদুল আকসায় মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণের জেরে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরাইলের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। টানা ১১ দিন ইসরাইলি বিমান হামলা ও হামাসের রকেট নিক্ষেপের পর মিসরের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

যুদ্ধবিরতির পর বুধবার গাজায় প্রথম বারের মতো হামলা চালায় ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। রোববার ইসরাইলে সরকার পরিবর্তনের পর এটিই গাজায় প্রথম ইসরাইলি হামলা।

বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমান হামলার পর হামাসের মুখপাত্র ফাউজি বারহুম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রতিরোধ আন্দোলনের অবস্থানে দখলদারদের বোমা হামলা ইসরাইলের নতুন সরকারের প্রদর্শনী। আমাদের জনগণ ও পবিত্র স্থানের প্রতিরক্ষায় প্রতিরোধ আন্দোলন নজর রাখছে।’

হামাসের আল-আকসা টিভিতে জানানো হয়, গাজার পশ্চিমে এক ইসরাইলি ড্রোনকে হামাসের যোদ্ধারা ভূপাতিত করেছে।

অন্যদিকে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, অবরুদ্ধ ভূখণ্ড থেকে আগুনে বেলুন হামলায় সামরিক বাহিনী হামাসের অবস্থানে হামলা করেছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা হামাসের সামরিক সক্ষমতা ও অবকাঠামো ধ্বংসের কাজ অব্যাহত রাখবে এবং গাজা উপত্যকার পরিস্থিতির জন্য তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করবে।

অধিকৃত জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইহুদি বসতি স্থাপনে গত ২৫ এপ্রিল আদেশ দেয় ইসরাইলি এক আদালত। এই জেরে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে পরপর কয়েক দফা মসজিদুল আকসায় হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত এই সকল হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জাতিসঙ্ঘের মানবিক সাহায্য বিষয়ক দফতর ইউএনওসিএইএ।

মসজিদুল আকসা চত্ত্বরে মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে ইসরাইলকে আলটিমেটাম দেয় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামাস রকেট হামলা শুরু করে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে মোট চার হাজার তিন শ' ৬০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমে বেশিরভাগ রকেট ধ্বংস করা হলেও বেশ কিছু রকেট ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে। রকেট হামলায় ইসরাইলের ১৩ অধিবাসী নিহত ও সাত শ’ ৯৬ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

ইসরাইল ভূখণ্ডে হামাসের রকেট হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মে রাত থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। ইসরাইলি বিমান হামলায় ৬৬ শিশু ও ৩৯ নারীসহ ২৫৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন। হামলায় আহত হয়েছেন আরো এক হাজার নয় শ' ৪৮ গাজাবাসী।

গাজায় ইসরাইলের টানা ১১ দিনের আগ্রাসনের পর ২০ মে রাতে ইসরাইল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ঘোষণা দেয়। মিসরীয় উদ্যোগে এই যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় ইসরাইলি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ২১ মে সকাল থেকে তা কার্যকর হয়।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement