১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধে শক্তি সরবরাহকারী ইসরাইলি পতাকা মিছিল

জেরুসালেমে ইসরাইলি পতাকা মিছিল - ছবি : এএফপি

উগ্র জাতীয়তাবাদী রক্ষণশীল ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা গতকাল (মঙ্গলবার) জেরুসালেমে তাদের 'পতাকা মিছিল' করেছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে, আগের বছরগুলোর পথ এই বছর পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের সাধারণ ব্যবহৃত পুরনো শহরের দামিশক গেটের পরিবর্তে জাফা গেট থেকে তাদের মিছিল শুরু হয়। আগের মতোই তারা 'আরবরা মুর্দাবাদ' ও 'জেরুসালেম ইহুদিদের' বলে স্লোগান দেয়। এটি চরম উসকানীমূলক, যা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় করা হয়েছে এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের এটি সুযোগ দিয়ে মুসলিম ও খ্রিস্টান ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশের।

ইসরাইলি সৈন্যদের ১৯৬৭ সালে সম্পূর্ণ জেরুসালেম শহর দখল করার ঘটনার উদযাপনে প্রতি বছর এই মিছিল করা হয়। দখলের পরের বছরই প্রথম মিছিল করা হয়। ওই মিছিল ও তার পরবর্তীগুলো কখনোই শান্তিপূর্ণ ছিল না।

মূলত ১০ মে আয়োজনের কথা থাকলেও, জেরুসালেমের বাসিন্দাদের ওপর ইসরাইলি আক্রমণ বন্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন তার শপথ পূরণ করায়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এটি স্থগিত করা হয়। এটি আবার স্থগিত হয় তখন বিদায় নিতে যাওয়া নেতানিয়াহু সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে। শেষ পর্যন্ত গতকাল তা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাফতালি বেনেতের নেতৃত্বের নতুন সরকার এর আয়োজনের অনুমতি দেয়।

ইসরাইলি সরকারি সম্প্রচার সংস্থা কানের খবরে বলা হয়, (ইসরাইলি) সরকার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও জর্দানকে বার্তা দিয়েছে যে পতাকা মিছিলের অনুমোদন দিয়ে তারা কোনো উত্তেজনা দেখতে চায় না। চ্যানেল থারটিন নিউজে জানানো হয়, মিসরের মাধ্যমে একই বার্তা হামাসকে দেয়া হয়েছে যাতে তারা কোনো উত্তেজনা না ছড়ায়। একইসাথে কোনো উত্তেজনা ছড়ালে তার কঠোর প্রতিক্রিয়া হবে বলে সতর্কতা জানানো হয়। কায়রো হামাসকে জানায় পতাকা মিছিলকে জড়িয়ে যেকোনো প্রকার উত্তেজনা তাকে 'লজ্জার' মধ্যে ফেলে দেবে।

গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ইসরাইলি দখলদার কর্তৃপক্ষের ফাঁকা হুমকিতে প্রভাবিত হয়নি। তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কথা জানায় এবং প্রয়োজনে সময়মত কারো তোয়াক্কা না করেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করে। হামাস ঘোষণা করে, 'সব ব্যবস্থাই হাতের নাগালে আছে।' সংগঠনটি জানায়, 'যদি পতাকা মিছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়,' তবে উত্তেজনা এড়ানো যেতে পারে।

মিছিল নিয়ে বিতর্ক একে এমন এক চ্যালেঞ্জে পরিণত করেছে যাতে মনে হয় ইসরাইলি দখলদারেরাই জয়ী হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাস্তব ফলাফল তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এই মিছিল প্রমাণ করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের কাছে ইসরাইল হেরে গেছে। অধিকৃত ফিলিস্তিন, আরব বিশ্ব ও মুসলমান দেশগুলোর সাধারণ জনগণের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে।

প্রায় দুই হাজার পাঁচ শ' বসতি স্থাপনকারীর পথ করে দেয়ার জন্য ইসরাইলি পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী রাস্তার ধারের স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়। একইসাথে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়।

মিছিলের জেরে হামাসের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর থেকে বেসামরিক বিমান চলাচলের পথ পরিবর্তন করে গাজা উপত্যকা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। আয়রন ডোম মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও প্রস্তুত রাখা হয়।

যদিও মিছিলে অংশ নেয়া উগ্রপন্থীরা আনন্দিত, তারা শুধু ইসরাইলি কর্মকর্তাদেরই ক্রোধের উদ্রেক করেনি। একই সাথে প্রতিরোধ আন্দোলনের দিকে শত শত তরুণকে ঠেলে দিয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত রিক্রুটিং কর্মকর্তারা এতো উত্তমভাবে কাজ আদায় করতে পারতেন না।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন তাদের সাম্প্রতিক বিজয় উদযাপন করছে, যা ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ও বিশ্লেষকরাও স্বীকার করছেন।

হামাস ঘোষণা করেছে, 'ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সাহসী অবস্থান ও সিদ্ধান্ত ইসরাইলি দখলদারদের বাধ্য করেছে মসজিদুল আকসা থেকে তাদের পথকে দূরে নিয়ে যেতে, বেসামরিক বিমানের গতিপথ পবির্তন করতে এবং আয়রন ডোমকে মোতায়েন করতে। ইসরাইলকে প্রতিরোধের নতুন এক যুগ ও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।'

মিডল ইস্ট মনিটরে ১৬ জুন, ২০২১ তারিখে প্রকাশিত


আরো সংবাদ



premium cement

সকল