১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাশোগি হত্যায় যুবরাজের সম্পৃক্ততার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান সৌদির

জামাল খাশগজি ও মোহাম্মদ বিন সালমান - ছবি : সংগৃহীত

নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের নিবন্ধক জামাল খাশোগিকে হত্যায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে সম্পৃক্ত করে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। এর আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ডাইরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের দফতর এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থাপন করা সৌদি নাগরিক জামাল খাশোগির ‘জঘন্য হত্যাকাণ্ড’ সম্পৃক্ত প্রতিবেদন দেখেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে যে, সৌদি সরকার সম্পূর্ণভাবে প্রতিবেদনরটির নেতিবাচক, মিথ্যা ও অগ্রহণযোগ্য মূল্যায়নকে প্রত্যাখ্যান করছে যেখানে রাষ্ট্রের নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং আরো জানাচ্ছে, প্রতিবেদনে ত্রুটিপূর্ণ তথ্য ও সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয় আবার জানাচ্ছে যা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগেও জানিয়েছিলেন, এটি (খাশোগির হত্যা) একটি ঘৃণ্য অপরাধ এবং রাষ্ট্রের আইন ও নৈতিকতার স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই অপরাধ একদল ব্যক্তির হাতে ঘটেছে, যারা সব ধরনের প্রচলিত আইন ও তাদের নিযুক্ত থাকা সংস্থার কর্তৃত্বকে অতিক্রম করেছে।’

মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি আরব তাদের আইনি ব্যবস্থায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে তাদের অপরাধের পূর্ণ তদন্ত হয় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

এতে আরো বলা হয়, ‘প্রতিবেদনের অন্যায় ও ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক, যেখানে রাষ্ট্র জঘন্য এই অপরাধকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য রাষ্ট্রের নেতৃত্ব যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি আরব তার নেতৃত্ব, সার্বভৌমত্ব ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করা যেকোনো পদক্ষেপকে প্রত্যাখান করছে।

শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থাপিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদ বিন সালমানের অনুমোদনেই তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাশোগিকে বন্দী বা হত্যার অভিযান চালানো হয়।

চার পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আটকে রাখলেও খাশোগি হত্যায় দায়ীদের জবাবদিহিতা আদায়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন জো বাইডেন।

এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৬ সৌদি নাগরিকের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাশাপাশি মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ সৌদি সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আহমদ হাসান মোহাম্মদ আসিরির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ থাকা জামাল খাশোগি সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও তার নীতির কড়া সমালোচক ছিলেন। যুবরাজের সমালোচনার জেরে তিনি দেশ ছেড়ে নির্বাসনে ছিলেন।

তুর্কি নাগরিক ও গবেষক খাদিজা চেঙ্গিসকে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে গেলে ওয়াশিংটন পোস্টের এই নিবন্ধককে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করে লাশ টুকরা টুকরা করা হয়।

সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রথমে হত্যাকাণ্ডের বিষয় অস্বীকার করলেও পরে তারা জানায়, কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুর্ঘটনাক্রমে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। ওই সময় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে বিচারের আওতায় আনা হয়। এছাড়া খাশোগির চার সন্তানকে ‘পাঁচ অঙ্কের’ মাসিক ভাতা ও ‘কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি’ দেয়া হয়েছে বলে ২০১৯ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।

সূত্র : আরব নিউজ ও আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement