২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইহুদি বসতির অন্যতম অর্থদাতা চেলসির মালিক

বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আব্রামোভিচ এলাদকে ১০ কোটি ডলার দান করেছেন - ছবি : বিবিসি

রুশ ধনকুবের এবং ইংলিশ ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচের কিছু কোম্পানি এমন একটি ইসরাইলি কোম্পানিকে ১০ কোটি ডলার দান করেছে, যারা অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে ইহুদি বসতি স্থাপনের কাজ করে। অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের এই সংগঠনের নাম এলাদ। বিবিসির আরবি বিভাগের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সিলওয়ানকে তারা ডাকেন 'ইর ডেভিড' বলে - যে হিব্রু নামের অর্থ 'সিটি অব ডেভিড'।

এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তখন থেকে এ পর্যন্ত এই সিলওয়ানে প্রায় ৭৫টি বাড়িতে ইহুদি পরিবারের বসতি স্থাপন সম্পন্ন করেছে এলাদ।

এ প্রতিষ্ঠানটি আবার পর্যটনের ক্ষেত্রেও কাজ করে। সিটি অব ডেভিডের পুরাতাত্বিক আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেখতে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক আসে। আর ওই পর্যটক আকর্ষণের স্থানগুলো পরিচালনা করে তারাই।

এলাদের সাবেক বিপণন পরিচালক হচ্ছেন শাহার শিলো। তিনি বিবিসিকে বলছেন, এলাদের কৌশলটা হলো, তারা সিটি অব ডেভিডে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি করার জন্য পর্যটনকে ব্যবহার করছে।

এলাদ তার কাজের অর্থায়নের জন্য নির্ভর করে দাতাদের ওপর। গত ২০০৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তারা দান হিসেবে যে অর্থ পেয়েছে- তার অর্ধেকই এসেছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের (বিভিআই) চারটি কোম্পানি থেকে।

তবে এই কোম্পানিগুলোর পেছনে যারা আছেন, তাদের নাম এতকাল সবার অজানাই ছিল- অন্তত এখন পর্যন্ত ।

ফিনসেন ফাইলস

সম্প্রতি 'ফিনসেন ফাইলস' নামে যেসব ব্যাংকিংখাতের দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে- তার মধ্যে কিছু দলিলপত্রে বিভিআইয়ের ওই চারটি দাতা কোম্পানির নাম আছে।

এসব দলিলপত্রে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক লেনদেন এবং কোম্পানির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য রিপোর্ট করেছে।

এসব দলিলপত্র ফাঁস করা হয়েছে বাজফিড নিউজের কাছে- যা তারা শেয়ার করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম এবং বিবিসির সাথে।

এই সব দলিলপত্রে দেখা যায় রোমান আব্রামোভিচের নাম। তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক।

এলাদকে অর্থ দান করে এমন তিনটি কোম্পানির চূড়ান্ত মালিক হচ্ছেন আব্রামোভিচই- আইনের ভাষায় যাকে বলে 'বেনেফিশিয়াল ওনার'। আর চতুর্থ কোম্পানিটিও নিয়ন্ত্রণ করেন তিনিই।

এলাদের অ্যাকাউন্টে দেখা যায়, এই কোম্পানিগুলো তাদেরকে যে অর্থ দিয়েছে তার পরিমাণ এখনকার বিনিময় হারে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি হবে।

এর মানে হলো গত ১৫ বছরে এলাদকে এককভাবে সবচেয়ে অর্থ দান করেছেন রোমান আবামোভিচ।

পুরাতাত্বিক খনন কাজ

অধিকৃত এলাকায় যেসব আইনের অধীনে পুরাতাত্বিক খনন কাজ চালানো হয়, তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে।

এমন হতে পারে ইসরাইল এলাদকে যেভাবে সিলওয়ানে যেসব পুরাতাত্বিক অনুসন্ধান চালাতে দিচ্ছে- তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

তার ওপর অধিকৃত এলাকায় বসতি স্থাপন করতে দেয়ার মধ্যে দিয়েও ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বলে মনে করা হয়।

কিন্তু ইসরাইল এলাকাটি 'অধিকৃত' বলে মনে করে না এবং এসব ধারণা প্রত্যাখ্যান করে।

এলাদ বলছে, এখানে পুরাতাত্বিক অনুসন্ধান চালানো ইহুদিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন।

এলাদ বিবিসিকে বলেছে, তারা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত ইসরায়েলের আইন ও বিধিসমূহ এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার শর্তগুলো মেনে চলে।

রোমান আব্রামোভিচ তাদের দাতাদের একজন কিনা, এ প্রশ্ন করা হলে এলাদ বলেছে, তাদের নীতি হচ্ছে অর্থদাতাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা।

আব্রামোভিচের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, "আব্রামোভিচ ইসরাইলি এবং ইহুদি সুশীল সমাজের একজন নিবেদিতপ্রাণ ও উদার সমর্থক। গত ২০ বছরে তিনি স্বাস্থ্যসেবা, বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং ইসরাইল ও বিশ্বের অন্যত্র ইহুদি কমিউনিটির জন্য ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি দান করেছেন।"

এই অর্থায়ন ছাড়া এলাদ এই ফিলিস্তিনি এলাকাটিতে ইহুদিদের উপস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে এত দ্রুত ও সফলভাবে কাজ করতে পারতো না।

সম্পত্তি আইন

বসতিস্থাপনকারীরা বাস করেন এমন কিছু বাড়ি তাদের পূর্বতন ফিলিস্তিনি মালিকদের কাছ থেকে কিনে নেয়া হয়েছে।

কিন্তু অন্য কিছু বাড়ি থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে- এ্যাবসেন্টি প্রপার্টি ল' নামে একটি বিতর্কিত ইসরাইলি আইনের মাধ্যমে।

এই আইনটির মাধ্যমে সঙ্ঘাতের কারণে যে ফিলিস্তিনিরা বাড়ি থেকে চলে গেছে বা পালিয়ে গেছে- সেই সব বাড়ির দখল নিয়ে নিতে পারে ইসরাইল।

এরকমই একটি ঘটনার কেন্দ্রে আছে সুমারিন হাউস।

এটির অবস্থান এলাদের যে দর্শনার্থী কেন্দ্র- তার ঠিক পাশেই। একটি পরিবারের ১৯ জন সদস্য সেখানে বাস করে- যার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ জনের বয়স দু'মাসেরও কম।

পরিবারের মা আমল সুমারিন বলছিলেন, আমি বিয়ের পর এখানে থাকতে এসেছিলাম। আমার স্বামী তখন তার চাচা হজ মুসা সুমারিনের সাথে থাকতেন।

"তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমিই তার যত্ন নিতাম, রান্না করে তাকে খাওয়াতাম। তিনি গোসল করার সময় আমার স্বামী তাকে সাহায্য করতো, তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতো। তিনি আমাকে বলতেন, বাছা এ বাড়ি তোমারই। তোমার আর তোমার স্বামীর জন্যই এ বাড়ি।"

মুসা সুমারিন মারা যান ১৯৮৩ সালে। এর চার বছর পর ১৯৮৭ সালে এ্যাবসেন্টি আইনে ইসরাইল এ বাড়ির দখল নিয়ে নেয়।

বাড়িটা ইহুদি ন্যাশনাল ফান্ড বা জেএনএফের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হেমনুতার কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।

জেএনএফের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে, ইহুদি জনগণের পক্ষ থেকে জমি কেনা এবং বাড়িঘর নির্মাণ করা।

১৯৯১ সালে হেমনুতা আদালতে আর্জি জানায় যেন সুমারিন পরিবারকে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সেই থেকে এ নিয়ে আইনি লড়াই চলছে।

এতে সুমারিনদের অর্থায়ন করে সাহায্য করছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং কিছু বেসরকারি সংস্থা।

গত ১০ বছর ধরে সুমারিনদের আইনজীবী হচ্ছেন মোহাম্মদ দাহলে। তিনি বিবিসিকে বলছেন, যদি কোনো ফিলিস্তিনির বাড়িকে একবার ইহুদি বা ইসরাইলি সম্পত্তি বলে ঘোষণা করা হয়, তাহলে তা টিকিয়ে রাখার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।

সত্যিই তাই। আগস্ট মাসে সুমারিনদের পরিবার জেরুসালেমের জেলা আদালতে তাদের আপিলের মামলায় হেরে যায়।

তারা এখন ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। সেখানে মামলার শুনানি হবে ২০২১ সালের এপ্রিলে।

আইনী যুদ্ধ

বিবিসি নিউজের আরবি বিভাগ জানতে পেরেছে যে, এলাদ চেষ্টা করছে উচ্ছেদের তারিখ এগিয়ে আনতে।

তারা এজন্য এই মামলার সংশ্লিষ্ট সব আইনি খরচ পরিশোধ করতে রাজী হয়েছে। ১৯৯১ সালে হেমনুতাকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা বলা হয়।

তা ছাড়াও সিলওয়ান এলাকার আরো কয়েকটি পরিবারের উচ্ছেদের মামলার খরচও তারা দিচ্ছে।

হেমনুতা মামলার ব্যাপারে কোন প্রশ্নের জবাব দেয়নি। এলাদ মামলার সব খরচ এখনো দিয়ে চলেছে কিনা - তা তারা নিশ্চিত করেনি।

এলাদ বলেছে, তাদের সব বাড়ি-জমি নিরপেক্ষ এবং আইনগতভাবেই পাওয়া।

"সিটি অব ডেভিডে কখনো আদালত, মামলা ও মামলা উপস্থাপনের সুযোগ, এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া কোন ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে দেয়া হয় নি" - বলছেন ডরন স্পিয়েলম্যান।

কিন্তু মোহাম্মদ দাহলে বলছেন, "পরিস্থিতিটা এখানে এমন যে একটি জাতিগত গোষ্ঠী তাদের নিজ স্বার্থের জন্য আইন করছে, আর অন্য জাতিগোষ্ঠী ওই আইনের কারণে দুর্ভোগে পড়ছে।

অর্থায়নের পাশাপাশি এলাদের প্রভাবও বেড়েছে।

ইসরাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান ইসরাইলি বসতির কড়া সমর্থক, এবং তিনি সিটি অব ডিভিডে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশও নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র যখন ২০১৯ সালে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তখন ফ্রিডম্যান ছিলেন তার একজন পৃষ্ঠপোষক।

তা ছাড়া ২০২০ সালে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, তখন এলাদের বহু জায়গাকে ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়- যার সংরক্ষণ প্রয়োজন।

এই জায়গাগুলোর সবই অধিকৃত এলাকায়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ

সকল