২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আমিরাতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে কেন সন্দিহান ইরান-কাতার?

চালু করার মুহূর্তে বারাকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এই ছবিটি টুইট করেন আবুধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ - ছবি : বিবিসি

মঙ্গলগ্রহে একটি অনুসন্ধানী রকেট পাঠানোর দু-সপ্তাহের মধ্যে শনিবার তাদের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম চুল্লিটি চালুর পর সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) যার-পর-নাই উচ্ছ্বসিত।

বারাকা - বাংলায় যার অর্থ আশীর্বাদ - মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

ইউএই বলছে, দক্ষিণ কোরীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চারটি চুল্লিই চালু হওয়ার পর এখান থেকে ৫.৬ গিগা-ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে যা দিয়ে দেশের ২৫ শতাংশ চাহিদা মিটবে।

কিন্তু ২০১২ সালে ২০ বিলিয়ন (দুই হাজার কোটি) ডলারের এই প্রকল্প হাতে নেয়ার পর থেকেই এর যৌক্তিকতা, ঝুঁকি এবং উদ্দেশ্য নিয়ে উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে তো বটেই, আন্তর্জাতিক মহলেও সন্দেহ-বিতর্ক চলছে।

বিশেষ করে কাতার এবং ইরানের গভীর সন্দেহ, আমিরাতের মূল লক্ষ্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি।

কারণ উপসাগরীয় এই দেশটি দিনকে দিন মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক সংঘাতে যুক্ত হচ্ছে যার প্রমাণ লিবিয়া এবং ইয়েমেন।

তীব্র আপত্তি কাতারের
গত বছর কাতার জাতিসঙ্ঘ আণবিক সংস্থার (আইএইএ) কাছে লিখিত এক আপত্তিপত্রে বারাকা পারমাণবিক স্থাপনাকে ‘আঞ্চলিক শান্তি এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি’ বলে বর্ণনা করে।

কাতার বলে, কোনো ধরণের দুর্ঘটনা হলে তেজস্ক্রিয় উপাদান ১৩ ঘণ্টার মধ্যে তাদের রাজধানী দোহায় চলে আসবে।

শনিবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর এখনো কাতার বা ইরানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া শোনা যায়নি, কিন্তু তারা যে ক্ষোভে ফুটছে তা নিয়ে কারোরই সন্দেহ নেই।

বারাকা পারমাণবিক প্রকল্পের ওপর শুরু থেকেই গভীর নজর রাখছেন পারমাণবিক শক্তি বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষ একজন বিশেষজ্ঞ পল ডর্ফম্যান।

মার্চে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে তিনি লেখেন, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান বাস্তবতায় এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হবেই কারণ ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সুযোগ করে দেয়।‘

ড. ডর্ফম্যান - যিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের একজন গবেষক এবং নিউক্লিয়ার কনসালটিং গ্রুপের (এনসিজি) প্রধান - বলেন, ‘ইউএই-র এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইতিমধ্যেই অস্থিতিশীল একটি এলাকাকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে।

পরিবেশের জন্য যেমন ঝুঁকি, তেমনি এই অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা নতুন করে উস্কে দিতে পারে এটি।’

‘সামরিক অভিলাষ নেই‘ ইউএই’র
ইউএই অবশ্য জোর দিয়ে বলে যাচ্ছে, উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কোনো কারণ নেই, তারা শুধুই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে।

উপসাগরীয় এই দেশটি যুক্তি দিয়ে চলেছে যে, আইএইএ‘র সাথে বিস্তর বোঝাপড়ার ভেতর দিয়ে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে এবং এখানে তারা নিজেরা ইউরেনিয়াম শোধন করবে না বলে মুচলেকা দিয়েছে। শোধন করা জ্বালানি আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

আইএইএ-তে আমিরাতের প্রতিনিধি হামাদ আল কারবি জাপানের দৈনিক নিকেইকে শনিবার বলেন, ‘ইউরেনিয়াম শোধনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। ইউএই‘র কোনো সামরিক অভিলাষও নেই।’

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে মেরুকরণের রাজনীতি দিন দিন যেভাবে প্রবল হচ্ছে - যার একদিকে সৌদি আরব এবং ইউএই এবং অন্যদিকে ইরান ও কাতার - তাতে করে আমিরাতের এই প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করতে পারছে না অনেকেই।

বাতাস (উইন্ড এনার্জি) এবং সূর্যকে কাজে লাগিয়ে (সোলার এনার্জি) লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অসামান্য সুযোগ যেখানে ইউএই‘র রয়েছে, সেখানে এত পয়সা বিনিয়োগ করে, চরম ঝুঁকিপূর্ণ এক ভূ-রাজনৈতিক আবহের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে কেন দেশটি যাচ্ছে - তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞও মাথা চুলকাচ্ছেন।

নিউইয়র্ক টাইমস ড. ডর্ফম্যানকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘এমিরেতিদের এই আগ্রহের পেছনে অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা হয়তো লুকিয়ে রয়েছে - পারমাণবিক অস্ত্র।’

কতটা নিরাপদ বারাকা
শুধু অস্ত্র তৈরির গোপন আকাঙ্ক্ষার সম্ভাবনা নিয়েই কথা হচ্ছে না, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ওপর হামলার ঝুঁকি এবং তেমন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কেন্দ্রটিতে কতটা জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে তা নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে।

আলজাজিরার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক স্থাপনায় এ যাবতকাল কমপক্ষে ১৩টি হামলা হয়েছে, যে সংখ্যা বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় বেশি।

আবু ধাবির রুয়াইস শহর থেকে ৫৩ কি.মি. বারাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের সময়ে ২০১৭ সালে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীরা স্থাপনাটিতে হামলা চালানোর দাবি করেছিল।

তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ওপর ঝুঁকি যে কতটা মারাত্মক তা গত বছর আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে যখন সৌদি আরবের আবকাইক এবং খুরাইছ তেল স্থাপনায় ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ওই হামলার পর সৌদি আরবের তেলের উৎপাদন কিছুদিনের জন্য ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতি যেভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে তাতে বারাকা কি পুরোপুরি নিরাপদ? যদি তেমন কোনো হামলা হয়, তাহলে সম্ভাব্য পারমাণবিক দূষণ তা সামাল দেয়ার ব্যবস্থা কতটা শক্ত - তা নিয়ে খোলাখুলি প্রশ্ন তুলেছেন ড. পল ডর্ফম্যান।

গতবছর প্রকাশিত তার এক বিশ্লেষণে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন - ‘কোর ক্রাচার‘ নামে পরিচিত যে প্রযুক্তি বড় কোনো দুর্ঘটনায় মূল চুল্লিটিকে রক্ষা করে, তা আদৌ বারাকা কেন্দ্রে রয়েছে কিনা। ছাড়া, সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা (জেনারেশন থ্রি ডিফেন্স ইনডেপ্থ) কতটা বারাকায় করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওই বিশেষজ্ঞ।

আইএইএ অবশ্য আশ্বস্ত করেছে, বারাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তারা পুরোপুরি ওয়াকিবহাল।

তবে সম্ভাব্য কোনো পারমাণবিক দুর্ঘটনায় প্রতিবেশী দেশগুলো দূষণের শিকার হলে তার দায় কে নেবে, এ সম্পর্কে উপসাগরীয় অঞ্চলে কোনো চুক্তি এখনো নেই। এটি কাতারকে উদ্বিগ্ন করেছে।

তবে শুধু ইউএই নয়, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে সৌদি আরব, মিসর এবং এমনকি জর্ডানেও।

সৌদি আরব ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে, আর মিসর চারটি স্থাপনা তৈরির জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করে ফেলেছে।

জাপানের দৈনিক নিকেই তাদের এক বিশ্লেষণমূলক রিপোর্টে বলছে, যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক প্রযুক্তি বিস্তারে সায় দিচ্ছে। তার প্রধান কারণ - মার্কিন প্রতিরক্ষা এবং পারমাণবিক প্রযুক্তি শিল্প এখন মধ্যপ্রাচ্যকে একটি লোভনীয় বাজার হিসাবে বিবেচনা করছে, যার প্রধান ক্রেতা হতে চলেছে ইরানের চিরশত্রু সৌদি আরব।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল