২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইরাকে করোনায় মৃতদের কবর দেয়া নিয়ে শঙ্কা

- সংগৃহীত

ইরাকে স্থানীয় মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের কবর দিতে বাধা দিচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এ বিষয়ে তারা তাদের ধর্মীয় নেতার কথাও শুনছেন না। ইরাকের অনেক জায়গায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কবর দিতে দিচ্ছেন না স্থানীয় জনগণ ও কবরস্থান কর্তৃপক্ষ। তাদের ভয় লাশ থেকে এই শ্বাসযন্ত্রের রোগটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব লাশ হাসপাতালে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে সাদ মালিক নামে এক ইরাকির সাক্ষাৎকার নিয়েছে এএফপি। ঐ ব্যক্তির বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে  মারা গেছেন।

‘আমরা তার জন্য একটি যথাযথ জানাজার নামাজ আয়োজন করতে পারলাম না, এমনকি লাশ কবর দিতে পারলাম না। তিনি মারা গেছেন এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেছে,’ বলেন মালিক। স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী মালিকের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার হুমকিও দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

স্থানীয় ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর বাধা

ইসলামে মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব মৃত ব্যক্তির লাশকে দাফন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ইরাকে এ পর্যন্ত পাঁচশরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪২ জন। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করেন স্থানীয়রা।

এদিকে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সবাইকে ঘরে থাকতে এবং পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ইরাকের অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় গোষ্ঠীর হাতে। বাগদাদের উত্তরপূর্বে এ সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা করোনার কারণে মারা যাওয়া চার ব্যক্তির লাশ দাফন করতে গেলে স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা তাতে বাধা দেন। এরপর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এদের বাগদাদের দক্ষিণপূর্বে আরেকটি কবরস্থানে নিয়ে গেলে স্থানীয় জনগণ প্রতিবাদ করেন। শেষ পর্যন্ত তাদের মর্গে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন কর্মকর্তারা।

স্থানীয় এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন,‘আমরা আমাদের এলাকায় এমন কাউকে কবর দিতে দেব না। আমরা আমাদের সন্তান ও পরিবার নিয়ে শঙ্কিত।’

মানছেন না ধর্মীয় নেতার কথাও

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা ভাইরাস নাক ও মুখ থেকে বের হওয়া ‘ড্রপলেট' ও কোন ‘সারফেস' বা পৃষ্ঠ থেকে ছড়াতে পারে। কবর থেকে ছড়ায় বলে কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া যায়নি এখনো, বলেন ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইফ আল-বদর। তিনি জানান, সরকার লাশ দাফনের সময় সবরকমের সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, যেমন লাশকে ব্যাগে মোড়ানো, এর জীবাণুনাশ করা এবং বিশেষ কফিনে তাদের রাখা ইত্যাদি।

ইরাকের সবচেয়ে বড় শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি সিস্তানি বলেন, যিনি মারা গেছেন তার লাশকে তিনটি কাফনের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে কবর দেয়া যেতে পারে। কিন্তু তাও মানছেন না অনেকে। কারবালা ও নাজাফের মত মাজার এলাকার কবরস্থানগুলোও তাতে সায় দিচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইরাকি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, এক বিপত্নীক তার স্ত্রীর লাশ কবর দেয়ার জন্য এমনকি হাতজোর করেও ফল পাননি৷

‘সেই স্বামী বলেছিলেন, আমাকে লাশটি দিয়ে দিন, আমি আমার ঘরে দাফন করব,’ কর্মকর্তা বলেন। তিনি বলেন,‘মাত্র ৪০টি মৃত্যুর পরই এই অবস্থা। যদি অবস্থা আরো খারাপ হয়? আমরা কোথায় রাখব লাশগুলো?’

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে এমনিতেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভালো না। পর্যাপ্ত ওষুধ নেই, নেই যন্ত্রপাতি। এমনকি নেই ডাক্তারও। অনেক ডাক্তারকেও বিভিন্ন সময় অপহরণ ও হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতি ১০ হাজার জনে ১৪টি হাসপাতাল বেড রয়েছে ইরাকে। সে হিসেবে ফ্রান্সে প্রতি ১০ হাজারে রয়েছে ৬০টি। সংকট সামলাতে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশলীরা বিকল্প উদ্ভাবন তৈরি করছেন। সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement