১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের বিবৃতি

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমানবিক ও বেআইনি

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমানবিক ও বেআইনি - ছবি : সংগ্রহ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখা অমানবিক ও বেআইনি বলে ঢাকাস্থ ইরানি দূতাবাসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। দূতাবাসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি এখানে প্রকাশ করা হলো।

বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাস বিশ্ব ও গোটা মানবসমাজের জন্য বড় বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে । প্রতিদিনই এই ভাইরাস একদেশের সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পড়ছে অন্যদেশে । এর ফলে বিশ্বের প্রতিটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।এমন একপরিস্থিতিতে আক্রান্তদেশ ও জাতিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিতভাবে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা সকলদেশ ও জাতির অপরিহার্য দায়িত্ব।এর পাশাপাশি এইভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মকভাবে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

দুঃখজনক বিষয় হলো, এই কঠিন দুঃসময়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান যখন করোনাভাইরাসের সর্বগ্রাসী আক্রমণের হাত থেকে দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য সচেষ্ট এবং এইভাইরাস নির্মূলের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টায় লিপ্ত ঠিক তখনো তেহরানকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অন্যায় নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অমানবিক পদক্ষেপ জাতিসঙ্ঘ সনদ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধিন পরিপন্থী।

যুক্তরাষ্ট্রের এহেন কর্ম একদিকে যেমন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ইরানি নাগরিকদেরকে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং ইরানব্যাপী এর বিস্তাররোধ করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে তেমনিভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করার জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
যুক্তরাষ্ট্র সকল আন্তর্জাতিক নিয়মরীতি অমান্যকরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে অন্যদেশের উপর চাপসৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এর মাধ্যমে ইরানের জনগণকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।বিশ্বায়নের এই যুগে প্রকৃতপক্ষে আমরা সকলেই এক নৌকোর যাত্রী। কাজেই এই নৌকো কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবার জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বলে আসছে যে খাদ্য এবং ওষুধসামগ্রী নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। কিন্তু তারা আর্থিক লেন-দেনের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে এবং নিয়মিতভাবে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুমকি দিয়ে ইরানে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকরে যাচ্ছে । এ অবস্থা ইরানের স্বাস্থ্যখাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।প্রকৃতপক্ষে ইরানের জনগণের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র হেন কোনো কাজ নেই যা করছে না। এমনকি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যখন ইরানের জনগণ কষ্ট পাচ্ছে তখনো যুক্তরাষ্ট্র তার অপকর্মগুলো অব্যাহত রেখেছে।

করোনাভাইরাস কোনো সীমানা চেনে না। জাতি, ধর্ম ও দলমত নির্বিশেষে যে কেউ এর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।সুতরাং, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত এবং গঠনমূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন, এর পাশাপাশি করোনার বিস্তার রোধ করার জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক লেনদেনসহ সকল সামাজিক কর্মকাণ্ডের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপকরা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশেদাঁড়ানো, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরার পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এজন্য বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য দরকার অন্তত কয়েক বিলিয়ন ডলার ।এমন এক দুঃসময়ের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত অন্যায় নিষেধাজ্ঞা ও দেশটির অপতৎপরতার কারণে ইরান বড় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র গতদুই বছরে ইরানের বিরুদ্ধে অন্তত এক শ' নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে, এর পাশাপাশি ২০১৮ সালের ৮ মে থেকে এখন পর্যন্ত ইরানের অন্তত ১২০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে তাদের কালোতালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার প্রধান লক্ষ্য হলো ইরানের অর্থনীতি। ফলে মার্কিন সরকারের দুর্বৃত্তপনা এবং করোনাভাইরাসের প্রভাবে সম্প্রতি ইরানের অর্থনীতিতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এমনকি জেসিপিএ চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করছে। এসব পদক্ষেপ যে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর ইশতেহারসহ মানবাধিকার নীতিমালা ও সকল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন তা সকলের কাছে সুস্পষ্ট ।

এমতাবস্থায় নিষেধাজ্ঞা-বহির্ভূত মানবিক পণ্যগুলো যেমন খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি করার দায়িত্ব পালন করা এককভাবে ইরানের বেসরকারি খাতের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না।

পরিশেষে সকলকে এটা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে করোনা মহামারি মোকাবিলার কাজে সহায়তার জন্য ইরানের জনগণের উপর অন্যায়ভাবে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অচল করে দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক দেশের সরকার, নাগরিকসমাজ ও মানবতাবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনের কর্তব্য।ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ জাওয়াদ যারিফ এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, "এখন আর বিশ্বের উচিত নয় অর্থনেতিক দুর্বৃত্তপনাকে ওষুধ সন্ত্রাসে পরিণত করার মর্কিন প্রবণতার বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকা"।

ইরানের মহান কবি শেখ সাদী তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গুলিস্তাঁয় লিখেছেন–
সব মানুষ একদেহের অঙ্গসম
যেহেতু সবার প্রথম উপাদান একই।
যখন একটি অঙ্গ ব্যথায় আক্রান্ত হয়
বাকি অঙ্গও তখন স্থির থাকতে পারে না।
অন্যের দুর্যোগে যদি উদ্বিগ্ন না হও
তবে তোমার নাম মানুষ হতে পারে না।
সূত্র : প্রেস বিজ্ঞপ্তি

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল