১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেসরকারি গ্রন্থাগারের ‘এমপিওভুক্তি’

-

দেশে সরকারি গণগ্রন্থাগার ৭১, আর নিবন্ধিত বেসরকারি গ্রন্থাগার ১৩৭৯টি। গ্রাম-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের একটি গণগ্রন্থাগার। পরিচালনায় অন্তত তিনজন স্টাফ-কর্মী দরকার। কমিটির সদস্যদের চাঁদা ও সংগৃহীত অনুদানে গ্রন্থাগারগুলো পরিচালিত হচ্ছে। এসব গ্রন্থাগার টিকিয়ে রাখতে স্কুল-কলেজের মতো টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার। প্রতিটি নিবন্ধিত বেসরকারি সাধারণ-গণগ্রন্থাগারে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক স্কুলের মতো সরকারি স্কেলে একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার, একজন অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও একজন পিয়ন (এমএলএসএস) নিয়োগ দেয়া আবশ্যক। তাহলে গ্রন্থাগারগুলো টিকে যাবে। মানুষ গ্রন্থাগারমুখী হবে। তরুণ ও যুবসমাজকে মাদক ও নেশা থেকে ফেরানোর কাজ সহজ হবে। রাষ্ট্র সুফল পাবে। গণগ্রন্থাগার হবে ‘দিন বদলের হাতিয়ার’।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গ্রন্থাগারবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মাধ্যমিক স্কুলে (হাইস্কুল) সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করে জনগণের দীর্ঘ দিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ করেছে। সহকারী গ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটলগারের মাসিক বেতন, বেসিক ১৬,৮০০, ইনক্রিমেন্ট ৮৪০ (৫%), বাড়িভাড়া এক হাজার ও চিকিৎসাভাতা পাঁচশ’; সর্বমোট ১৭,৩৭৬ টাকা। অফিস সহায়ক-কাম-কম্পিউটার অপারেটরের বেসিক ১০ হাজার ১৯১, ইনক্রিমেন্ট ৫০৯ টাকা, বাড়িভাড়া এক হাজার ও চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা, সর্বমোট ১১ হাজার ১৩০ টাকা। পিয়ন (এমএলএসএস) বেসিক আট হাজার ৬৭৭, ইনক্রিমেন্ট ৪৩৩, বাড়িভাড়া এক হাজার ও চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, সর্বমোট ৯ হাজার ৬৯৯ টাকা।
বাংলাদেশে বেসরকারি গ্রন্থাগারের ইতিহাস বেশ পুরনো। এখানে দেড় শতাধিক বছরের পুরনো গ্রন্থাগারও আছে। সে তুলনায় গ্রন্থাগারের প্রসার বা বিকাশ ঘটেনি। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকগুলো বন্ধের উপক্রম। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, সিনাগগ, প্যাগোডায় মানুষ বয়স, শ্রেণী, পেশা, জাতি, বর্ণ, ধর্মভেদে প্রবেশাধিকার পায়। কিন্তু গণগ্রন্থাগার বা সাধারণ গ্রন্থাগারে সবাই যেতে পারে। এজন্যই গণগ্রন্থাগারকে ‘পিপলস ইউনিভার্সিটি’ বা ‘গণবিশ্ববিদ্যালয় বলা যায়। দুঃখের বিষয়, দেশে এ খাত সবচেয়ে উপেক্ষিত ও অবহেলিত। চার দিকে পণ্ডিত-মহাপণ্ডিত, বিশারদ-বিশেষজ্ঞের অভাব নেই। কিন্তু কাক্সিক্ষতমাত্রায় গণগ্রন্থাগারের প্রসার, উন্নয়ন হচ্ছে না। যুগ যুগ ধরে তা ‘চোখের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। ভাবখানা এমন যে, বই পড়ে কী হবে ? ওটা আবার কী জিনিস? বই পড়ে কে ধনী লোক হয়েছে ? যেন ধনই মুখ্য, জ্ঞানার্জন নয়। এ জন্যই সমাজে পচন ধরেছে। সুলতানি, মোঘল, ব্রিটিশ শাসন পার হয়ে ভারতবর্ষ এখন কয়েকটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিভক্ত। এই উপমহাদেশে ব্যাপক রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটেছে, ঘটছে। গড়ে উঠেছে হাজার হাজার শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। দেখতে দেখতে অর্ধশতাব্দী হয়ে গেল। সেই তুলনায় দেশে গ্রন্থাগারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া
সভাপতি
বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement