২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সোহেল চৌধুরী হত্যা : পিপিকে কেস ডকেট উপস্থাপনের নির্দেশ আদালতের

সোহেল চৌধুরী - ছবি - সংগৃহীত

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় কেস ডকেট না থাকায় সাক্ষ্য নিতে পারছেন না ট্রাইব্যুনাল।

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু, ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউর সামছুল হক বাদল ও সহকারি পাবলিক প্রসিকিউর সাদিয়া আফরিন শিল্পীকে এই কেস ডকেট সমন্বয় করে আগামী ২০ জুলাই আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন এ নির্দেশ দেন।

এদিন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউর (পিপি) ও ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটরকে কেস ডকেটে যা আছে তা লিখিতভাবে দাখিল করার জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন তারা তা দাখিল করেননি। এজন্য বিচারক তাদের কেস ডকেট সমন্বয় করে ২০ জুলাই আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাদিয়া আফরিন শিল্পী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ১৫ জুন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালতে শেষবারের মতো অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিনকে মামলার কেস ডকেট দাখিলের জন্য সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এদিন কেস ডকেট দাখিল করেননি। আদালতেও উপস্থিত হননি ফরিদ উদ্দিন। এরপর মহানগর পাবলিক প্রসিকিউর (পিপি) ও ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউরকে কেস ডকেটে যা আছে তা লিখিতভাবে দাখিল করতে নির্দেশ দেন বিচারক। ৩ জুলাই কেস ডকেট দাখিল ও মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

গত ৩০ মে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন ফরিদ উদ্দিন মামলার কেস ডকেট দাখিল করেননি। ফলে আদালত ১৫ জুন কেস ডকেট দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। এদিন কেস ডকেট দাখিল না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন আদালত।

কেস ডকেট হলো মানচিত্র, সূচিপত্র, রাষ্ট্রপক্ষের ১৬১ ধারায় জবানবন্দির নথিসহ অন্যান্য কাগজপত্র।

২৫ এপ্রিল ফরিদ উদ্দিনকে কেস ডকেট দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন। ২০০৫ সালের ২ জুন ফরিদ উদ্দিন পিপি অফিস থেকে এ মামলার কেস ডকেট দেন।

এরপর থেকে মামলার কেস ডকেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফরিদ উদ্দিন এ মামলার কেউ না। এদিন তিনি আদালতে এসে কেস ডকেট খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানান। বিচারক তাকে কেস ডকেট খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য পিপিকে বলা হয়।

গত ৫ এপ্রিল রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে এ মামলার আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সেসময় তার বাসা থেকে ২২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, একটি আইপ্যাড, ১৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, দুটি আইফোন ও নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় ৬ এপ্রিল রাতে আশিষ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন র‌্যাব-১০ এর ডিএডি জাহাঙ্গীর আলম।

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এই হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারো তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান। আসামিদের মধ্যে আদনান খুনের পরপরই ধরা পড়েছিলেন।

মামলাটি তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা-২ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

ওই বছরই আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সাল থেকে দীর্ঘ ১৯ বছর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি স্থগিত ছিল। সবশেষ চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে ফের মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এ মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন, আদনান সিদ্দিকী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ি আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারেক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।

১৯৮৪ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন সোহেল চৌধুরী। ওই একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন তার স্ত্রী দিতিও।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement