২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোগমুক্তির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন টিএইচ খান

টিএইচ খান - ছবি : সংগৃহীত

সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম আইনজীবী ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিচারপতি টিএইচ খান গুরুতর অসুস্থ। ১০২ বছর বয়সী প্রবীণ এই আইনজীবী বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় বর্তমানে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রোববার তার ছেলে সিনিয়র সাংবাদিক ও সিনিয়র আইনজীবী আফজাল এইচ খান জানান, বিচারপতি টিএইচ খানের শরীরিক অবস্থা ভালো না। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোববার ভোরে তাকে রাজধানীর কল্যাণপুরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বার্ধক্যজনিত জটিলতাসহ নিউমনিয়ায় ভুগছেন।

তিনি আরো জানান, এর আগে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে গত ৯ ডিসেম্বর ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে ৬ জানুয়ারি বাসায় আনা হয়।

গত বছর ২১ অক্টোবর বিচারপতি টিএইচ খানের ১০২তম জন্মদিন জন্মদিন উদযাপন করা হয়।

বিচারপতি টি এইচ খানের প্রকৃত নাম মো. তাফাজ্জাল হোসেন খান।

দেশ বরেণ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আইনবিদ ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।

১৯৪০ সালে বিচারপতি টিএইচ খান ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৪২ সালে তৎকালীন কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন।

১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৫১ সালের ১৪ মার্চ হাইকোর্টের আইনজীবী হন। বর্তমানে তিনি দেশের প্রবীণতম আইনজীবী।

তিনি ১৯৬৮ সনে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাস থেকে পুনরায় আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন।

১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার হন।

বিচারপতি টিএইচ খান ১৯৯২ সালে জাতিয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান।

১৯৯২ সনে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যার রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিতীয় বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৯৫ সালে বিচারপতি টিএইচ খান এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচার কার্য পরিচালনা করেন।

আইন পেশা ছাড়াও বিচারপতি টিএইচ খান প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম আইনবিদ বিচারপতি টিএইচ খান বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে এখন আর আদালতে আসেন না। তবে এই বয়সেও তার স্মরণ শক্তি এবং চিন্তা করার শক্তি স্বাভাবিক আছে বলে ছেলে আফজাল এইচ খান জানান।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement