২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ

গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ - ছবি - সংগৃহীত

কুমিল্লায় পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (ইন্সপেকশন), অতিরিক্ত দায়িত্বে এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মোহাম্মদ শাহ জালালের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন পূজামন্ডপে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে সারাদেশে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এসব ঘটনার সাথে জড়িত ৪৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়া, আরো মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। এসব ঘটনা ও অপরাধের রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটসমূহকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দ্রুততার সাথে এসব ঘটনা ও অপরাধের রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উসকানি রোধকল্পে সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।

যে কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য অথবা গুজব কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত বা উত্তেজিত না হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং পরিস্থিতির উন্নয়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য দেশের সকল নাগরিকদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে সাতটায় কুমিল্লার সদর থানার নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামন্ডপে মূর্তির পায়ের উপর কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে চলে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতিকারী উস্কানিমূলক ও বিকৃত প্রচারণা চালায় এবং পরবর্তীতে আরও উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতিকারী সংঘবদ্ধ হয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের চেষ্টা ও পূজান্ডপে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া দুষ্কৃতিকারীরা শহরের কাপড়িয়া পট্টি কলোনির চানমনি পূজামন্ডপ, শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দির, কালিতলাসহ আরও কয়েকটি পূজামন্ডপে হামলা চালায় এবং প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ করে।

কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেজন্য সারাদেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে গত ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ পৌরসভাস্থ শ্রী ত্রিনয়নী সংঘ রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া, মোকিমাবাদ পূজামন্ডপে ৫শ’ থেকে ৬শ’ দুষ্কৃতিকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের উপর হামলা করে এবং ৫ থেকে ৬টি পূজামন্ডপ ভাংচুর করে। দুষ্কৃতিকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৫ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। জনগণের জানমাল রক্ষায় এবং আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় ৫ জন প্রাণ হারায়।

কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গত ১৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার ছয়ানী ইউনিয়নের সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা মন্দিরের নিকট ৮শ’ থেকে এক হাজার উচ্ছৃঙ্খল লোক জড়ো হয়ে উস্কানিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ইট, লাঠিসোটা নিয়ে মন্দিরের সামনে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবি’র টহল দলের উপর হামলা চালায়, মন্দিরের মূর্তি ভাংচুর করে এবং মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় একজন প্রাণ হারায় এবং পরবর্তীতে পুকুর থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ১৭ অক্টোবর রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামের জনৈক পরিতোষের (১৯) ফেসবুক আইডিতে পবিত্র কাবা শরীফের অবমাননাকর ছবি আপলোড করে। পরবর্তীতে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে রাত প্রায় ৮টার দিকে এলাকার কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ওই গ্রামের একটি মন্দিরসহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

এছাড়া, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া ও চকরিয়া থানা, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানা, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ থানা, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানা এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কাশিমপুর থানাসহ দেশের আরো কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনায় সারাদেশে সাত জন প্রাণ হারায়। এরমধ্যে দু’জন হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং পাঁচ জন মুসলমান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দায়িত্ব পালনকালে ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement

সকল