২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেই ২ মেয়ের সাথে একদিন মা, আরেকদিন বাবা থাকবেন

সেই ২ মেয়ের সাথে একদিন মা, আরেকদিন বাবা থাকবেন - ছবি : সংগৃহীত

দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশী বাবা ও জাপানি মায়ের বিরোধের সমঝোতার জন্য উভয় পক্ষকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই দিন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে একদিন বাবা ও পরের দিন মা মেয়েদের সাথে থাকবেন বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে পরদিন শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মা ও ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বাবা থাকবেন। এভাবে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মা ও বাবা পর্যায়ক্রমে একদিন পর একদিন মেয়েদের সাথে থাকতে পারবেন বলে বৃহস্পতিবার দেয়া আদেশে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম ফিরোজ ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। বিপরীতে মা নাকানো এরিকোর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।

আদালতের এই আদেশের পর প্রতিক্রিয়ায় নয়া দিগন্তকে ইমরান শরীফ মেয়েদের নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, মা মেয়েদের বাসার বাইরে এমনকি জাপানে নিয়ে যেতে পারেন এই সুযোগে। তিনি আরো জানান, গুলশানের যেই ভাড়া বাসায় এতদিন ছিল এখনো সেখানেই থাকবে মেয়েরা।

এর আগে দুই মেয়ে শিশুকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন মা নাকানো এরিকো। আবেদনে বলা হয়েছে, এই অনুমতি পেলে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন মা। মেয়েরা বাবার সাথে তখন সময় কাটাবে। আর বাবা জাপানে যে ঋণ আছে তা মা দেবে এবং বাবার বিরুদ্ধে জাপানে যে মামলা করেছে জাপান সরকার, তা তুলে নিতে পদক্ষেপ নেবে মা। তাতেও যদি রাজি না হন, তাহলে তৃতীয় কোনো দেশে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে পারবেন বাবা। সেখানে যাবতীয় খরচ মা বহন করবেন। আইনজীবী শিশির মনির এ আবেদন উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি মা ও বাবার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করে দেয়ার আবেদন জানান।

এ সময় ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বিরোধিতা করে বলেন, শিশু দু’টিকে একবার জাপানে নিয়ে যেতে পারলে আর তাদের বাংলাদেশে আনা যাবে না। আমাদের আদালতের আদেশ তারা মানবে না। তিনি বলেন, বাচ্চারা বাংলাদেশেই থাকুক। মা যখন খুশি এসে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন। মা যখন বাংলাদেশে আসবেন তখন প্রয়োজন হলে বাবা বিমানের টিকিট কেটে দেবেন। সব ব্যবস্থাই বাবা করবেন। মা-বাবার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণের আবেদনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, সমঝোতার স্বার্থে এখন যে অবস্থা আছে সে অবস্থায়ই রাখা হোক।

উভয় পক্ষের শুনানিকালে আদালত বলেন, মা-বাবার কারণে আজ বাচ্চা দু’টি সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তারাই মূল ভিকটিম। তাই এর একটি সমাধান হওয়া দরকার।

হাইকোর্টের এই বেঞ্চ গত ৮ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ৯, ১১, ১৩ ও ১৫ সেপ্টেম্বর-এই চারদিন দিবাগত রাতে মেয়েদের সাথে মাকে থাকার অনুমতি দেন। অন্য সময় মা ও বাবা উভয়েই থাকতে পারবেন ওই বাসাতে। কন্যা শিশু দু’টিকে নিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরিরও অনুমতি দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়াও মেয়ে দু’টির মা ও বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে প্রচারিত বিভ্রান্তিক সকল ভিডিও অপসারণে পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এসব ভিডিও নির্মাতা ও আপলোডকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে নির্দেশ দেয়া হয়।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট একই হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই দুই শিশুকে আপাতত আগামী ১৫ দিন জাপানি মা ও বাংলাদেশী বাবার সাথেই গুলশান এক নম্বরে চার কক্ষের একটি ভাড়া বাসায় থাকার নির্দেশনা দেন। এরপর শিশু দু’টিকে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে ওই বাসাতে স্থানান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত ওই বাসাতেই তারা আছেন।

এদিকে মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে জাপানি নারী এরিকো নাকানোকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন তার স্বামী ইমরান শরীফ। একইসাথে নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে নাকানো এরিকোকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ইমরান শরীফের পক্ষে তার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম এ নোটিশ পাঠান। নাকানো এরিকোর গুলশান-২-এর ঠিকানায় এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, জাপান থেকে মেয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসেন বাবা ইমরান শরীফ। দেশে ফিরে সন্তান দুটিকে ঢাকায় কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এ অবস্থায় গত ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মা এরিকো। এ আবেদনে হাইকোর্টের আদেশের পর গত ২২ আগস্ট রাতে শিশু দুটিকে বাবার বাসা থেকে উদ্ধার করে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে সিআইডি পুলিশ। এ অবস্থায় গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট খাসকামরায় শিশু দুটি ছাড়াও তাদের মা-বাবার বক্তব্য শোনেন।


আরো সংবাদ



premium cement