২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অর্থপাচার মামলা তদারকিতে ডিজিটাল ডেটাবেজ

অর্থপাচার মামলা তদারকিতে ডিজিটাল ডেটাবেজ -

মুদ্রা পাচার বা মানিলন্ডারিং মামলাগুলোর তদারকি জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ মামলাগুলো তদারকির জন্য একটি ‘ডিজিটাল ডেটাবেজ’ তৈরি করা হবে। এই ডেটাবেজের মাধ্যমে মামলাগুলোর হালনাগাদ অবস্থা দ্রুত জানা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে এসংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় পৃথক ‘অ্যাটর্নি সার্ভিস’ কিংবা ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রসিকিউশন সার্ভিস’ চালুর সুপারিশও করা হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অনুষ্ঠিত ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি’র এক সভায় এ সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের’ (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের এসব সুপারিশের বিষয়ে সভাকে অবহিত করা হয়।

জানা গেছে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ এবং এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, মানিলন্ডারিং সংশ্লিষ্ট মামলায় নিম্ন আদালত থেকে যেসব আসামি জামিন বা খালাস পায়, সেসব মামলার আপিলের বিষয়ে দ্রুত অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে অবহিত করা ও এসব মামলার নথি চলাচল ডিজিটালাইজড করা। অবরুদ্ধ এবং বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ/ ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান পদ্ধতি পর্যালোচনাপূর্বক আধুনিকায়ন করা। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিধান মোতাবেক বর্ণিত অপরাধের বিচারে বিশেষ জজ নিয়োগ প্রদান এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর বিধান মোতাবেক ওই আইনে বর্ণিত অপরাধের বিচারে প্রয়োজনীয় এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা।

বৈঠকের কার্য বিবরণীতে বলা হয়, সভায় ‘লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অপরাধ সম্পর্কিত পারস্পরিক সহায়তা আইনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে ইতঃপূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে এ কাজে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকেও সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অপরাধ সম্পর্কিত পারস্পরিক সহায়তাবিষয়ক গাইডলাইন প্রণয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও বিএফআইইউর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা জরুরি।

সূত্র জানায়, বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, মানিলন্ডারিং মামলাগুলো মনিটরিং করার জন্য কোনো কমিটি নেই। ফলে চাহিদা মোতাবেক মামলার তথ্যসমূহ উপস্থাপন করা যায় না। মামলাসংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য আপডেট থাকা দরকার। যেমন- মামলার সংখ্যা, গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো, মামলার আসামির সংখ্যা এবং গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আসামির সংখ্যা, মামলা তদন্তের অগ্রগতি, বিচারকার্যের অবস্থান, বিচার বিলম্বের প্রকৃত কারণ, সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে প্রতিবেদন তৈরিকরণ ইত্যাদি।

মামলাসংক্রান্ত উল্লেখিত বিষয় সম্পাদনে একটি ‘কেইস কন্ডাক্টিং অফিস’ থাকা প্রয়োজন উল্লেখ করে সে দায়িত্ব বিএফআইইউর ওপরই ন্যস্ত করা উচিত বলে বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া মামলা তদন্তকারী সংস্থার সাথে উচ্চ আদালতের সমন্বয় সাধন এবং মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলার তথ্যসংক্রান্ত একটি ‘ডিজিটাল ডেটাবেজ’ প্রণয়নেরও সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ পরিপালন ব্যবস্থা মূল্যায়নে ‘এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি-লন্ডারিংয়ে’র (এপিজি) সুপারিশমালা বাস্তবায়নে ‘জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ কর্তৃক অনুমোদিত অ্যাকশন আইটেমগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিএফআইইউ বরাবর পাঠানোর জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগকে বলা হয়েছে।

জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত অ্যাকশন আইটেমের বিষয়ে সভায় লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, অ্যাকশন আইটেমগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় আইন ও বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট। ইতোমধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে আইনমন্ত্রী, আইন ও বিচার বিভাগ সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব আলোচনা করেছেন। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আইনমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে চিঠি পাঠানো হবে।

জানা যায়, এপিজির বিভিন্ন সুপারিশের মধ্যে ‘রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অন লিগ্যাল পারসন অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ কার্যক্রম অন্যতম। এ বিষয়ে বৈঠকে বলা হয়, ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এসংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটির দু’টি সভায় ঝুঁকি নিরূপণ কার্যক্রমের রোডম্যাপ অনুযায়ী একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সদস্যদের মতামত নিয়ে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করা হবে।

সভায় বিএফআইইউ জানায়, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি নিরূপণ, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে আন্তর্জাতিক যোগসূত্র উদঘাটনের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (রাজনৈতিক) ফোকাল পয়েন্ট করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement