২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাঁশখালীর নিহত শ্রমিক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ

বাঁশখালীর নিহত শ্রমিক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ - ছবি - সংগৃহীত

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত পাঁচ জনের প্রত্যেকের পরিবারকে ‘আপাতত’ ৫ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। একইসাথে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে তিন কোটি টাকা ও আহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এছাড়া ওই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ডিসি ও এসপির নেতৃত্বে গঠন করা দুটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ৪৫ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে আহতদের চিকিৎসা এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়ে হাইকোর্টকে জানাতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতিসহ (বেলা) পাঁচটি সংগঠনের আলাদা দুটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেয়।

নিহতদের পরিবারকে ওই টাকা পরিশোধ করতে এস আলম গ্রুপকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন। এস আলম গ্রুপের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আরশাদুল রউফ। আর রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এস আলম গ্রুপের আইনজীবী মো. আরশাদুল রউফ শুনানিতে বলেন, নিহতদের পরিবারকে ইতোমধ্যে ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তখন আদলতের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ৩ লাখ টাকা করে দিয়েছেন, আরও ২ লাখ টাকা করে দেন। গত ২২ এপ্রিল মানবাধিকার সংগঠন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৫ নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে।

রিটে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে তিন কোটি টাকা ও আহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন এ রিট দায়ের করেন।

পরে ২৭ এপ্রিল একই ঘটনায় আরও ৫টি সংগঠন হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ,নিজেরা করি ,সেফটি অ্যান্ড রাইটস ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।

সংগঠনগুলো পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা চায়। পাশাপাশি বাঁশখালীতে শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থা জানতে শ্রম অধিদফতরের কাছে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এছাড়া শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ডিসি ও এসপির নেতৃত্বে গঠন করা দুটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা চান। দুই রিটের এক সঙ্গে শুনানি হয়।

গত ১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন ১৩২০ মোগাওয়াট ক্ষমতার ‘এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে’ শ্রমিকদের বেতনভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত ও অন্তত ৩২ জন আহত হন। নিহতরা হলেন শুভ (২৩), মো. রাহাত (২৪), আহমদ রেজা (১৯), রনি হোসেন (২২) ও রায়হান (২০)।

ওই ঘটনায় বাঁশখালী থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। বাঁশখালী থানার পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়কারী মো. ফারুক বাদী হয়ে করেন অপর মামলাটি। এ দুটি মামলায় শ্রমিক ও এলাকাবাসীসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement