২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান প্রতিবেদন

তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, আইনজীবীদের ৬ সুপারিশ

-

নারায়ণগঞ্জের ‘মৃত’ মেয়ে দিসা মনির ফিরে আসা নিয়ে দায়েরকৃত রিভিশন মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারায়ণগঞ্জ বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান শেষে সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২৭ পাতার প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

মঙ্গলবার বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও মো: মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চে উক্ত বিষয়টি শুনানির জন্য উত্থাপিত হয়।

শুনানিকালে রিভিশন আবেদনকারী পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ছয় দফা সুপারিশসহ ৪৭ পাতার একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। রিভিশন আবেদনকারী আইনজীবী মো: আসাদ উদ্দিন, মো: জোবায়দুর রহমান, আল রেজা মো: আমীর, মো: মিসবাহ উদ্দিন ও মো: আশরাফুল ইসলাম শুনানিকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি শেষে শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধকরণ সংক্রান্তে ছয় দফা সুপারিশ আজ আদালতের সামনে লিখিতভাবে তুলে ধরেছি। উক্ত লিখিত বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পাশাপাশি ফরিদপুরের একটি মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক একই দিনে তিন ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিন আসামির স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধকরণ এবং চট্টগ্রামের এক মামলায় দুই আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনে একজন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানোর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম ও চৈনিক কনফুসিয়াস মতবাদ অনুযায়ী স্বীকারোক্তির ধারণা উল্লেখ করা হয়েছে। স্বীকারোক্তি সংক্রান্তে ইউরোপ, আমেরিকা ও ভারতের ১৪টি মামলা এবং আইনী ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। অধিকন্তু দেশী এবং বিদেশী পঁচিশোর্ধ মামলার রেফারেন্স উল্লেখপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সংজ্ঞা, গতি-প্রকৃতি এবং তা লিপিবদ্ধকরণের পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও ভারত ও বাংলাদেশের ১৩টি মামলার নজির উল্লেখ করে দেখানো হয়েছে, যেখানে আইনের শূন্যতা ও দ্ব্যর্থতা বিদ্যমান থাকে সেখানে মাননীয় আদালত নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখতে পারেন।

পরিশেষে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের সময়ে অনুসরণযোগ্য ছয় দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। যথা-
১। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিত থাকার সুযোগ দেয়া।
২। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের পূর্বে আসামিকে তার আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার সুযোগ দেয়া।
৩। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার সময় অডিও-ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা।
৪। একাধিক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি একসাথে লিপিবদ্ধ না করা।
৫। সন্দেহ দূরীকরণার্থে আসামির স্বীকারোক্তি টাইপ না করে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক স্বহস্তে লেখা উচিত।
৬। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট যেন আইনগত সমস্ত পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য যৌক্তিক সময় পান, সে ব্যাপারে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

শুনানি শেষে আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

শিশির মনির আরো বলেন, বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুযায়ী যেহেতু তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে, সেহেতু তিনি নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ১৫(১)-এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন এবং এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দণ্ডের অতিরিক্ত পঁচিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement