২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আইন বিশেষজ্ঞদের অভিমত

ইভিএম যেন ভোটাধিকার হরণের মেশিন না হয়

- ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে ভোটার ও জনগণের শঙ্কা ও আস্থাহীনতা রয়েছে বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এটা এমন একটি যন্ত্র যার নিয়ন্ত্রকরা অনায়াসেই ভোট কারচুপি করতে পারে। আর ইভিএম দ্বারা ভোটে কারসাজি করা হলে তা নির্ণয় করার কোনো পদ্ধতি নেই। সব দলের আপত্তির পরও একমাত্র ক্ষমতাসীন দলের আগ্রহে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে।

আইনবিদদের মতে, ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে যে ভীতি আছে তা অত্যন্ত বাস্তব। তারা বলেন, ইভএম যেন দেশের জনগণের ভোটের অধিকার হরণের মেশিন না হয়। ইভিএম সিটি নির্বাচনে কারসাজি করার একটি নতুন পদ্ধতি যেন না হয়।

এ জন্য দেশবাসী ও ভোটারদের আস্থায় আনার জন্য তাদের দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ব্যালটই একমাত্র পন্থা। প্রয়োজনে ঢাকা সিটি নির্বাচন পিছিয়ে কাগজের ব্যালট পেপার দিয়ে নির্বাচন করা যেতে পারে। যাতে মানুষের সন্দেহ দূর হয়।

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে প্রবীণ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইভিএম চালু করা হয়েছিল ভোট গ্রহণের জন্য; কিন্তু ইভিএম দ্বারা সঠিক নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে না বিধায় অনেক দেশে ইতোমধ্যে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইভিএম এমন একটি যন্ত্র, যারা এটা নিয়ন্ত্র করে তারা অনায়াসে ভোট কারচুপি করতে পারে। বিশেষ করে ইভিএম দ্বারা ভোটে কারসাজি করা হলে তা ধরার পদ্ধতি নেই।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ইভিএম দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হলে ২০ শতাংশ ভোট না পড়লে তা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। সে কারণে দেশের সব দল থেকে ইভিএম ব্যবহারে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র ক্ষমতাসীন দলের আগ্রহে ইভিএম ব্যবহার মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার একমাত্র উদ্দেশ্য। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ভোটের আগের দিন রাতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোটডাকাতি করেছে। এবার আমাদের মনে হচ্ছে, ইভিএম দ্বারা সিটি নির্বাচনে কারসাজি করার একটি নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ব্যালটই একমাত্র পন্থা।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন নয়া দিগন্তকে বলেন, ইভএম দেশের জনগণের অধিকার হরণের একটি মেশিন। এই মেশিন ব্যবহার করার অর্থ হচ্ছে জনগণের ওপরে এই সরকারের কোনো আস্থা নেই। সে জন্য তারা মেশিনের মাধ্যমে জিততে চাচ্ছে। কাজেই এখনো সময় আছে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করুন; যদি দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান। যদি আপনারা একতরফাভাবে নির্বাচন করতে চান সে ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হলো- আপনারা গণতন্ত্রকে চিরদিনের জন্য কবর রচনা করতে চান। তিনি বলেন, ঢাকার মানুষ এখন অত্যন্ত সচেতন।

আমরা মনে করি, আগামী ১ ফেব্রুফারির নির্বাচনে ঢাকার মানুষ ব্যাপকভাবে ভোট দিতে যাবে এবং এই ইভিএম সিস্টেমে ভোট যদি চলে তার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদও জানাবে। তিনি বলেন, আমরা আইনি লড়াই চালিয়েই যাচ্ছি এবং বলেই যাচ্ছি; কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোনো কথা শুনছে না। এ দেশে সব কিছু কন্ট্রোল করছে সরকার। সরকারের কথা মতো নির্বাচন কমিশন চলছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচন কমিশন এখানে আনফেয়ার। ভোটারদের মনে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মনে সন্দেহ থাকে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়। ভোটকেন্দ্র দখল করে জালিয়াতি হওয়ার কারণে ইভিএম সম্পর্কে মানুষের সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনেও তাই হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি ইভিএমে যে ভীতি আছে তা অত্যন্ত বাস্তব। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উচিত নয় জেদ করা। এটা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন?

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের কিছু কিছু কর্মকর্তা ব্যবসায়িক কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ইভিএম চাপিয়ে দিয়েছে জনগণের ওপর। তাদের আর্থিক কারণে দেশবাসী ও ভোটাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এটা কেউ আশা করে না। দেশবাসী ও ভোটারদের আস্থায় আনার জন্য তারা দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। দরকার হলে নির্বাচন পিছিয়ে দেন এক সপ্তাহ। কাগজের ব্যালট পেপার দিয়ে নির্বাচন করেন। মানুষের সন্দেহ দূর করেন।

অন্য দিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। আগামী রোববার এ রিট আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। আদালত বলেছেন, এটা জরুরি বিষয়। রোববার এই রিট মামলা শুনানির জন্য কার্যতালিকার টপে থাকবে।

গত ২২ জানুয়ারি ইভিএমে ভোট গ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
ইভিএম-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে এখনো পাস হয়নি। এ অবস্থায় সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ অবৈধ ঘোষণার আর্জি জানিয়ে তিনি এ রিট আবেদন করেন।


আরো সংবাদ



premium cement